Скачать или смотреть Pirojpur Rayerkathi Jomidar Baru-পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক স্থাপনা রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি

হাসান মামুন :: প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরেরও বেশি পুরাতন ও অপূর্ব নির্মাণ শৈলীর এ প্রাসাদ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ভাটিয়াল রাজা রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী। সে সময় ২০০ একর জমিতে নির্মিত হয় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি ভবন। কিন্তু চরম অবহেলা ও সংরণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় রায়েরকাঠির ঐতিহাসিক রাজবাড়ির মূল্যবান পুরাকীর্তি ধ্বংস হতে চলেছে।
পিরোজপুর জেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে পৌর এলাকার রায়েরকাঠিতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ি। শহর থেকে রায়েরকাঠির পুলিশ লাইন পেরিয়ে কিছুটা সামনে ১৬৬৮ সালে নির্মিত কালী মন্দির ও ১১টি মঠ। এরও প্রায় ১০০ গজ সামনে ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি। হোক বয়সে যতই পুরাতন, কি জীর্ণ, কি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। মুহূর্তকাল সুউচ্চ মঠ ও রাজবাড়ি দেখেই পর্যটকমাত্র মুগ্ধ হতে বাধ্য। অবচেতনে মনের পটে ভেসে উঠবে এ বাড়ির একসময়ের শৌর্য-বীর্যের রূপ। প্রচারণা ও পর্যটন সুবিধা না থাকায় এ বাড়িটি দেখতে তেমন লোকের আনাগোনা না হলেও, প্রায় প্রতিদিনই কিছু লোক আসেন এটি দেখতে। ঘুরে ঘুরে পর্যবেণ করেন সপ্তদশ শতাব্দীর এ মনোরম নির্মাণ শৈলী।
ইট-সুঁড়কি দিয়ে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে রাজবাড়ির প্রসাদ ও মঠগুলো। কালের বিবর্তনে প্রায় ধ্বংসের পথে মূল রাজবাড়ির অধিকাংশ ভবন। তবে কালের স্বাী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সুউচ্চ ১১টি মঠ। এরই একটি মঠে স্থাপন করা হয়েছে ২৫ মণ ওজনের বিশালাকার একটি শিবলিঙ্গ। কষ্টি পাথরের তৈরি এ মহামূল্যবান শিবলিঙ্গটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ বলে স্থানীয়দের দাবি।

জমিদার বাড়ির উত্তরসূরী অপূর্ব রায় চৌধুরী জানান, একসময় রাজপ্রথা বিলুপ্ত হলে চালু হয় জমিদারি প্রথা। এতে রাজা রুদ্র নারায়ণ রায়ের উত্তরসূরীরা পরিণত হন জমিদারে। ফলে রায়েরকাঠির এই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে কেউ জমিদার বাড়ি, কেউ রাজবাড়ি বলে থাকেন। অমরেন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন এ বংশের শেষ জমিদার। ২০০ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়িটি অযত্ন আর অবহেলার নিঃশেষ হওয়ার পথে। ভেঙে পড়ছে ইট-সুঁড়কি। য়ে গেছে দেয়াল। বাড়ির প্রধান ফটক, রাজাদের বসবাসের প্রাসাদ, কাচারি, অতিথিশালা, নাট্যশালা, জলসাঘর, অন্ধকূপ সব কিছুই ধ্বংসের চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে এ জমিদার বাড়িটিকে পর্যাটন কেন্দ্র করার দাবি জানান স্থানীয় বাসীন্দা ও ঘুরতে আসা পর্যাটকরা।

জমিদার বাড়ি পরিচিতিঃ সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে যুবরাজ সেলিম বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাংলা এসে বাগেরহাট, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার কিছু অংশ নিয়ে একটি পরগনার সৃষ্টি করে পরগনার নাম রাখেন সেলিমাবাদ। ১৬১৮ সালে মদনমোহন সেলিমাবাদ পরগনার রাজত্ব আদায়ের জন্য নিযুক্ত হন। ১৬২৮ সালে মদনমোহন সেলিমাবাদ পরগনার কিছু জমি তার ছেলে শ্রীনাথের নামেন কিনে নেন। পরবর্তীতে মোগল সম্রাট শ্রীনাথ রায়কে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৬৫৮ সালে রাজ শ্রীনাথ রায়ের ছেলের উত্তর নারায়ণ রায় চৌধুরী বর্তমান পিরোজপুর এর কাছে বন- জঙ্গল পরিষ্কার করে রাজবাড়ী এবং মন্দির নির্মাণ করেন। নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে আনন্ত অঞ্চলটি রায়ের কাঠি নামে পরিচিত হয়। এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শনের কয়েকটি স্থাপনা। এখানে রয়েছে ৮০ একর জমির ওপর ১৬শ শতকে নির্মিত ৩০০ বছরের পুরানো প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রায়ের কাঠী জমিদার বাড়ি। বার ভুইয়া অন্যতম মহারাজ কিংকর রায়ের বংশধর রাজা রুদ্র নারায়ন রায়ের স্বপ্নে অদিষ্ট হয়ে ১৬৫৮ সালে তৈরি করেন মনোরম প্রকৃতিক সৌন্দর্যের জমিদার বাড়ি। জেলা সদরের পুলিশ লাইনস্ সড়কে অবস্থিত জমিদার বাড়িতে রয়েছে জাতীয় জাদু ঘরের স্বীকৃত দেশের সর্ববৃহৎ ৪০ মন ওজনের শীবলিঙ্গসহ একটি মন্দির যা ওই আমলে নির্মিত। রয়েছে কালি মন্দির। সবুজে ঘেরা দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্যের এ রাজ বাড়িটি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করবে।

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে সড়ক এবং নৌপথে সহজেই পিরোজপুরে দেওয়া যায়।
জমিদার বাড়িটি পর্যটকদের ঘুরে যেতে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে অথবা ষ্টিমারে ১২শ থেকে ১৬টাকা ভাড়ায় ৮ থেকে ১০ ঘন্টার আনন্দ যাত্রা শেষে হুলারহাট বন্দরে নামতে হবে। এরপর ওখান থেকে রিক্সা অথবা ইজিবাইকে করে রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে। এছাড়া গাবতলী, সায়েদাবাদ থেকে পর্যটক,দোলা,আরা ও বনফুল পরিবহনের বাসে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় পিরোজপুর বাসষ্টান্ডে নেমে মাত্র ২ কিলোমিটার পথ দূরে পুলিশ লাইনস্ সড়কের জমিদার বাড়িতে যাওয়া যাবে।

থাকা খাওয়াঃ জেলায় রাত্রিযাপনের জন্য মোটামুটি মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।
থাকার জন্য রয়েছে হোটেল রিল্যাক্স, হোটেল পদ্মা, হোটেল অবকাশ, হোটেল বিলাশ, রজনী, ডালাস, সিনথিয়া ও আল মদিনা উল্লেখযোগ্য । অপরদিকে খাবারের জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন যেখানে আপনি আপনার স্বাভাবিক খাবারের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।