Concept: Md Shahidul Islam
Video Credit: Jeet Dhali
Artist: Abir Ahmed
ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি একটি জটিল সমস্যা। অন্যান্য নেশার মতো আমাদের দেশেও এটি একটি সর্বনাশা নেশা, যা ব্যক্তির সামাজিক, পারিবারিক ও পেশাগত জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। ইন্টারনেট ব্যতীত বর্তমান যুগে চলা অসম্ভব। আবার এর মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। অনেকে বলেন, মাদকের মতই আসক্তি।
ইন্টারনেট অ্যাডিকশন তখনই বলব যখন মাথার মধ্যে প্রধান চিন্তা থাকে ইন্টারনেট। সপ্তাহে ৩৮ ঘণ্টা বা তার বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা, ইন্টারনেট ছাড়া থাকতে না পারা, বাদ দিতে গেলে দুশ্চিন্তা, বিষণœতা ও অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদিকে আসক্তির প্রমাণ হিসেবে ধরা যায়। এতে স্বাভাবিক, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবন ব্যাহত হয়। শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় দেখা যায়, ঘাড় ও কোমরব্যথা, মাথাব্যথা এবং আই স্ট্রেন (চোখে অস্বাভাবিক চাপজনিত সমস্যা) হচ্ছে। মানসিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে- অনিদ্রা, অতিরিক্ত টেনশন বোধ, বিষণœতা, যৌন সমস্যা, অপরাধপ্রবণতা, মনোযোগ কমে যাওয়া। ফেসবুকে অনেকে মর্যাদাহানিকর স্ট্যাটাস ও কমেন্ট করছে। এর মধ্য দিয়ে একটি অসহিষ্ণু কমিউনিটি তৈরি হচ্ছে।
মনোবিজ্ঞানী ও গবেষকেরা বলছেন যে, একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভ‚তি যারা শেয়ার করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের সমবেদনা দিয়ে থেকেন এক্ষেত্রে উভয়ই অতিমাত্রায় ফেসবুক বা যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত। মাদক ছাড়া যেমন অনেকে থাকতে পারে না সেরূপ ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়া থাকতে পারে না! নেট সমস্যা বা কিছু সময়ের জন্য এসব মাধ্যম বন্ধ থাকলে হতাশায় রি-অ্যাকশ্যান দিয়ে পোস্ট দেয় যারা তাদেরকে মোটাদাগে আসক্ত বলা যায়! যেসকল ফেসবুক ব্যবহারকারী একাকীত্বে ভোগে তারাই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি স্ট্যাটাস দেয়। এঅবস্থা কিন্তু উন্নত বিশ্বে (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে) বেশি নেই। কুরুচিপূর্ণ এ অবস্থা বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী ভারতে বেশি।
ইন্টারনেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ক¤িপউটার নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটায় এবং সেই সময়টুকুর জন্য নিজেরাই মূল্য পরিশোধ করে। ক¤িপউটার ও ইন্টারনেট আজ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সংবাদ, তথ্য, যোগাযোগ, কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বিনোদন ইত্যাদি অনেক কিছুর জন্য মানুষ এখন ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল।
ইন্টারনেটে আসক্ত হলে, সময়ের জ্ঞান থাকে না, নেটে বসার জন্যে ঘুম বিসর্জন দেয়। অনলাইনে থাকাকালীন সময়ে কোন কাজ করতে বললে ক্ষেপে যায়, নেটে বসতে না দিলে ক্ষিপ্ত হয়, হোমওয়ার্কের বদলে নেটে বসাকে গুরুত্ব দেয়, বন্ধু-বান্ধব, এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, বাড়তি সময় নেটে কাটানোর ব্যাপারে মিথ্যে বলে, নতুন নতুন অনলাইন বন্ধু তৈরি হয়, পুরোনো শখগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, দিনে অনেক বার ই-মেইল/আইডি চেক করা ইত্যাদি।
অতিরিক্ত ইন্টারনেট আসক্তি মানসিক রোগের সৃষ্টি করে। আক্রান্ত শিশুরা খিটখিটে মেজাজের হয়, মিথ্যে কথা বলে, এবং সবার সাথে অহেতুক তর্কে লিপ্ত হয়। এছাড়া স্কুলের রেজাল্ট দিনদিন খারাপ হতে থাকে। শিশুকে আত্মকেন্দ্রিক, অসহনশীল ও অসামাজিক করে। শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বাধা দিয়ে সৃষ্টিশীলতা নষ্ট করে দেয়, শিশুর শারীরিক খেলাধুলার সময় কেড়ে নেয়। এতে শিশুরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, শিশু শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেয়। এতে শিশুর অস্বাভাবিক ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে বন্ধন কমিয়ে দেয়, সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে দেয়, শিশুর স্বাভাবিক আচার-ব্যবহারের ওপর প্রভাব ফেলে, শিশুর মাথাব্যথা, চোখব্যথা, চোখদিয়ে পানি পড়াসহ চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে, শিশুর ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা বাড়ায়, সামাজিক দক্ষতা কমে যায়। দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয় এবং কোনো বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ধীরে ধীরে সমাজ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, জীবনের গুণগত মান কমে যায়। পড়ালেখাসহ সব কাজের গতি ও মান নিচে নামতে থাকে। হতাশা বা বিষণœতায় আক্রান্ত হতে পারে; ঘটাতে পারে অঘটন। বাবা-মার সাথে দূরত্বের কারণে সন্তান ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। তাই তাকে সময় দিতে হবে। নৈতিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
শিশুদের ফেসবুকের আসক্তি কমাতে অভিভাবকেরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। সন্তানকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। ফেসবুকের আসক্তি কমাতে স্কুলে স্কুলে সচেতনতা-প্রচার শুরু করলে এখনকার তরুণ প্রজন্মকে ওই কু-প্রভাব থেকে রক্ষা করা যাবে। স্কুলগুলোতে কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। কর্মশালায় ইন্টারনেট ও সোশাল মিডিয়ার কুফল নিয়ে আলোচনা, পাঠচক্র করা যেতে পারে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেটের কুফল থেকে সন্তানদের বাঁচাতে বিকল্প হিসেবে খেলাধুলা বা পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন বিকেলে পড়া শেষে তাকে খেলাধুলার সময় দিতে হবে। শিশুদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ স¤পর্ক গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের জন্মদিন কিংবা বিশেষ দিনে বই উপহার দিতে হবে যাতে আস্তে আস্তে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। বই পড়লে এক তো জ্ঞান বাড়বে অন্যদিকে ফেসবুকের আসক্তি কমবে।
Информация по комментариям в разработке