Скачать или смотреть ৪০০ বছরের ঐতিহ্য লক্ষ্মীপুরের লক্ষ্মীধর পাড়া দীঘি ও পঞ্চরত্ন

‘‘দীঘির জলে হাঁস ভাসে পঞ্চরত্ম খাড়া
ফুলে ফলে ফসলে ভরা প্রিয় লক্ষ্মীধর পাড়া”

ইকবাল হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) :
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম লক্ষ্মীধরপাড়া, যেখানে প্রায় চারশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের ভগ্নাবশেষ এখনো স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জানা গেছে হিন্দু রাজা লক্ষ্মীনধরের নামানুসারে এই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে লক্ষ্মীধরপাড়া। এখানে মানুষ বলতে গেলে বেশিরভাগই শিক্ষিত। গ্রামটির মাঝখানে আছে মস্ত বড় এক দীঘি যা লক্ষ্মীধরপাড়া দীঘি নামে পরিচিত। দীঘির পাশে বাঁশবাগান, নারিকেল, সুপারি, তাল গাছের ছায়া আর নির্মল হাওয়া আপনার মনে এক অভূতপূর্ব ছোঁয়া দিয়ে যাবে।
দীঘির ঠিক মাঝখানে রয়েছে হাওয়াখানা। দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথিরা হাওয়াখানায় গিয়ে দীঘির সতেজ নির্মল হাওয়া উপভোগ করেন আর নয়নজুড়ে দীঘির পাড়ের দৃশ্য অবলোকন করেন। একটু লক্ষ্য করলে এখানে দেখা মিলে দীঘির পানিতে দেশীহাঁস, পাতিহাঁস, পানকৌড়ি কিভাবে খেলা করে। শীতকালে সুদূর থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখির ঝাঁক মনমুগ্ধ করে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য দীঘিতে নৌকার ব্যবস্থা আছে। ৫০/১০০ টাকা দিলেই দীঘিটি ঘুরে দেখার জন্য সাহায্য করে স্থানীয় কিশোররা। দীঘির মাঝখানের হাওয়াখানায় দাড়িয়ে দেখা যায় দীঘির চারপাড়ের ছোট ছোট বাড়িগুলো কোন সুদক্ষ শিল্পীর রঙতুলিতে আঁকা জীবন্ত ছবি। বিকালে সূর্যাস্তের দৃশ্যে উচু ঢিবির পাদদেশে পড়া সোনালী রোদে আগত দর্শকরা বিভোর হয়ে পড়ে ছবি তোলার কাজে। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দে প্রকৃতি যেনো জেগে ওঠে, ফিরে পায় নতুন জীবন।
স্থানীয় প্রবীণ ও বয়স্কদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় চারশ বছর আগে ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল স¤্রাট শাহ সুজার আমলে করপাড়ার জমিদারগণ এই দীঘি খনন করেন। জানা যায় জমিদাররা ছিলো বাইশ ভাই। এই বাইশ ভাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাইশটি দীঘি খনন করেন এবং প্রত্যেকটি দীঘির আয়তন ছিলো বাইশ একর। আর এই দীঘিটির আয়তনও বাইশ একর। দীঘির দক্ষিন পশ্চিমে রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত স্মৃতিসংঘ (লক্ষ্মীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে একমাত্র স্মৃতিসংঘ)। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বর্তমান সরকারের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহমান খাঁন শামীম।
দীঘির মাঝখানে হাওয়াখানাটি স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এস আই এম লেঃ কর্ণেল নুরনবী খাঁন (অবঃ) বীর বীক্রম। আছে ঐতিহ্যবাহী পাটওয়ারী বাড়ীর ১৬ চালার কাচারী বাড়ী। অবশ্য এখন ১৬ চালা আর নেই। সামনে পাটওয়ারী বাড়ীর পাকা শানবাঁধানো বিশাল ঘাটলা, নামাজ পড়ার ব্যাবস্থা।
পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক সাধক অন্ধ হাফেজ শাহ সুফী হযরত আব্দুর রহমান (রঃ) সাহেব। যিনি অন্ধ হাফেজ নামে সমধিক পরিচিত। কথিত আছে এই অন্ধ হাফেজের আধ্যাত্মিক সাধনায় অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। দেখা পাবেন অন্ধ হাফেজের মাজার শরীফ। দীঘির দক্ষিন পাড়ে রয়েছে চারশ বছরের ইতিহাস বিজড়িত স্মৃতি ঐতিহাসিক পঞ্চরতœ।
প্রবীণদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে দীঘি খননের বছরই এই পঞ্চরতœ নির্মাণ করেন সেই করপাড়ার জমিদাররাই। যদিও এটির নাম পঞ্চরতœ আসলে কোন রতেœর উদ্দেশ্যে বা কোন রতœ দিয়ে এটি নির্মাণ হয়নি। বিশাল স্তম্ভটি লাল পোড়া ইট দিয়ে তৈরী হয়। শাসকরা যখন কর আদায়ের জন্য এই অঞ্চলে আসত তখন নর্তকীরা ঘুরে ঘুরে নৃত্য করে তাদের মনোরঞ্জন করতো।
আবার কারো কারো মতে বিশাল মাঠের মধ্যে বিশ্রামের উদ্দেশ্যেই পঞ্চরতœপি স্থাপন করা হয়েছিলো। মাঠের কৃষকেরা যখন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেত তখন তারা এর মধ্যে এসে বিশ্রাম নিতো। কালের বিবর্তনে জীর্ণ শীর্ন দেহ নিয়ে রোগাক্লিষ্ট অবস্থায় চারশ বছরের ইতিহাস বহন করে অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনো এই পঞ্চরত্ম। তার পাশেই বিশাল বেথুনকাঁটার মাঝে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন এ উপমহাদেশের আরেক আধ্যাতিœক সাধক উজানীর পীর শাহ্ সূফী হযরত ক্বারী ইব্রাহীম (রাঃ) সাহেব।
একটু এগিয়ে গেলেই দানবীর ফরিদ আহমেদ ভুইয়ার আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত অত্যাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘‘লামনগর একাডেমী” ও জেলার সবচেয়ে বড় ও দৃষ্টিনন্দন ফরিদ আহমেদ ভুইয়া একাডেমী। সুবিশাল এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ বৃহত্তর নোয়াখালীর লোকজন উচ্চ শিক্ষার জন্য খুব কম খরচে পড়ালেখা করার সুযোগ রয়েছে। যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। উত্তরে বিশাল ফসলের মাঠ। মওসুমে সবুজ ফসলে চারদিকে ভরে যায়। যেন সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। তাই তো এই গ্রামেরই ছেলে অধ্যাপক রফিক উল্যা জহির তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন,
‘‘দীঘির জলে হাঁস ভাসে পঞ্চরত্ম খাড়া
ফুলে ফলে ফসলে ভরা প্রিয় লক্ষ্মীধরপাড়া”

‪@protidinerlakshmipur‬
#Ramgonj
#lakshmipur
#Ramgonjnews
#lakshmipurnews
#Ramgonjbreakingnews
#lakshmipurbreakingnwes
#রামগঞ্জ #লক্ষ্মীপুর
#রামগঞ্জনিউজ #লক্ষ্মীপুরনিউজ
#ঐতিহ্য #ইতিহাস #মায়াজাল