Скачать или смотреть ময়নাগড় II An Island Within An Island II

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কংসাবতী ও কেলেঘাই এর তীরে অবস্থিত  সবচেয়ে প্রাচীন এলাকা হল ময়নাগড়। ময়না গড়কে অনেকে ময়না চৌরার কেল্লা বলে অভিহিত করেন। চৌরা শব্দটি ওড়িয়া থেকে এসেছে এবং চৌরা শব্দটির অর্থ হল উন্নত ভূমি l
ঐতিহাসিকদের মতে পাল বংশের  রাজা  লাউসেন এই ময়না গড়ের প্রতিষ্ঠাতা। ধর্মমঙ্গল কাব্যে রাজা লাউসেনের উল্লেখ রয়েছে।
পাল বংশের রাজ্যপাট শেষ হওয়ার পরে ময়নাগড়টি পরিতক্ত হয়ে পড়েছিল। তারপরেই এখানে আশ্রয় নেয় জলদস্যুরা। এই জলদস্যুদের নায়ক ছিল শ্রীধর এবং শ্রীধর খুবই অত্যাচারী ছিলো । শ্রীধর কে সাহায্য করত তৎকালীন মগ এবং পর্তুগিজ জলদস্যুরা।
শ্রীধর কে পরাজিত করতে তৎকালীন উৎকল  রাজ্যের  (বর্তমান ওড়িশার) রাজা  তৎপর হন। এবং সবং এর রাজা গোবর্ধনানন্দকে নির্দেশ দেন শ্রীধরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য। গোবর্ধনানন্দ ময়নাগড় আক্রমণ করেন এবং শ্রীধর কে পরাজিত করেন । তার এই  বীরত্বে খুশি হয়ে উৎকল এর রাজা গোবর্ধনানন্দকে "বাহুবলীন্দ্র" উপাধি দেন। এবং এই বাহুবলীন্দ্র আখ্যা বর্তমান প্রজন্ম এখনো ব্যবহার করেন।
এর পরেই রাজা  গোবর্ধনানন্দ ময়নাগড়ে  তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং ময়নাগড় কে দুর্ভেদ্য করার জন্য আরও দুটি পরিখা  নির্মাণ করেন। ময়নাগড়ে যেতে গেলে পরপর তিনটি পরিখা পার হতে হতো এর মধ্যে প্রথমটি যেটির নাম কালিদহ এটি তৈরি করেন পাল বংশের রাজারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিখা টি তৈরি করেন গোবর্ধনানন্দ। তৃতীয় পরিখাটি এখন আর নেই আর দ্বিতীয় পরিখাটি যেটির নাম ছিল মাকড়দহ সেটিও প্রায় অবলুপ্তি হয়ে গেছে। কারণ কংসাবতী নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য এই পরিখা বুজিয়ে  ফেলা হয়েছে।কিন্তু কালিদহ পরীখাটি এখনো রয়েছে ।
বাহুবলীন্দ্র রাজারা  ময়নাগড়কে আরো দুর্ভেদ্য করার জন্য এই পরীখাটিতে হিংস্র কুমির ছেড়ে রাখত এবং ময়নাগড়কে ঘিরে তৈরি করে রেখেছিল কাঁটা বাঁশঝাড়ের জঙ্গল এবং সাপে ভর্তি জঙ্গল। এই কাঁটা বাঁশঝাড়ের কিছু নমুনা এখনো দেখতে পাওয়া যায়।
কথিত আছে যে ময়নাগড়ে নতুন বউ এলে তার পালকি শুদ্ধ তাকে কালিদহের জলে চুবিয়ে তবেই গড়ে প্রবেশ করানো হতো এবং তারপর থেকে সে কখনোই আর ওই  গড়ের বাইরে বের হতে পারতো না এতটাই Strictl ছিল ময়নাগড়ের নিয়ম কানুন এবং এও কথিত আছে যে যেসব প্রজারা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত তাদেরকে মেরে রাজ বাড়ির পেছনেই একটা পুকুরে ফেলে দেওয়া হতো এবং স্থানীয়দের কথায় অতীতে এই পুকুর থেকে প্রায় এক নৌকো নর কঙ্কাল উদ্ধার হয়।
ইংরেজ শাসন কালে ইংরেজরা এই গড় আক্রমণ করে কিন্তু তৎকালীন রাজা জগদানন্দ বাহুবলীন্দ্র কে ধরতে পারেনি। কিছু অনুচরকে সঙ্গে নিয়ে উনি রাজগৃহের একটি  মাটির নিচে থাকা গুপ্ত কুঠুরিতে আশ্রয় নেন এবং জীবন্ত কালে তিনি কখনোই আর গুপ্ত কুঠুরি থেকে বের হননি।
ময়নাগড়ে দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে রয়েছে  কালিদহ পরিখা, লাউসেনের আমলের ধ্বংসাবশেষ,লোকেশ্বর জিউর মন্দির, রাধামাধব এর মন্দির এবং পুরনো রাজবাড়ি। এই  লোকেশ্বরজীউর মন্দিরের একটি বিশেষত্ব রয়েছে এখানে যে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেটি প্রায় মাটির 15 ফুট নিচে রয়েছে এবং এই শিবলিঙ্গটি একটি সুরঙ্গ পথে নদী কংসাবতীর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে বর্ষাকালে যখন কংসাবতী নদীতে জল ভরে ওঠে তখন এই শিবলিঙ্গ ডুবে যায় এবং এই  মন্দিরের পাশেই রয়েছে  প্রায়  তিনশো বছরের পুরনো একটি  মনসা গাছ  এই  মনসা গাছে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নিয়েছে একটি শিবলিঙ্গ।

N:B: ময়নাগড় ঘুরতে যেতে  হলে ওখানে সকাল নটার মধ্যে পৌঁছে যেতে হবে।
#moyna
#moynagarh
#tripnearkolkata
#onedaytripfromkolkata
#visitingplaceneartamluk