নিতান্ত শখের বসে বাগান শুরু করেছিলেন হুমায়ূন আহম্মেদ। এখন বাগান করাই তার পেশা এবং নেশা। তার বাগানে নিয়মিত ফলছে বারমাসি আফ্রিকান আম, পাকিস্তানী ট্রাই লেবুসহ ১৮ জাতের ফল। শখের বাগান থেকে মাত্র চার বছরেই আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন আত্মপ্রত্যয়ী এ যুবক। বাগানের আয়ে এখন তিনি লাখপতি।
হুমায়ূন আহম্মেদের (৩১) বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের কয়রাটি গ্রামে। এইচএসসি পাস করার পর কিছুদিন বগুরায় একটি মার্কেটিং কোম্পানিতে কাজ করেছেন। তখন সেখানকার বিভিন্ন গ্রামে আমসহ নানান ফলের বাগান দেখে নিজেও বাগান করতে উৎসাহী হন। এরপর ২০১৪ সালে গ্রামে ফিরে প্রথমে বাড়ির আঙ্গিনায় মিশ্র ফলের বাগান শুরু করেন। শুরু থেকেই গতানুগতিক ধারার বাইরে একটা ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা ছিল তার। তাই দেশী গাছের বদলে ভারত থেকে সংগ্রহ করেন আফ্রিকান বারোমাসি আমের কলম। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিনে আনেন উন্নতজাতের লেবু, লিচু, কমলা, মাল্টাসহ অন্যান্য ফলের বীজ ও চারা। মাত্র দু’বছরের মাথায় তার আম গাছে ফল ধরতে শুরু করে। উৎপাদন দেখে বুঝতে পারেন প্রকল্পটি লাভজনক হবে। তাই পরের বছর বাড়ি থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত পৈত্রিক জমিতে বাগান সম্প্রসারিত করেন। তার বাগানটি এখন দুটি খন্ডে ৩ একর জমিতে অবস্থিত।
আফ্রিকান বারোমাসি আম ছাড়াও সেখানে ফলছে ১৮ জাতের ফল। বর্তমানে তার মিশ্র ফল বাগানে রয়েছে: ১২০টি আফ্রিকান বারোমাসি আম গাছ, ৬৫টি আ¤্রপালি আম গাছ, ৬টি সুবর্ণরেখা আমগাছ, ৪শ’টি পাকিস্তানী হাইব্রিড লেবু গাছ (ট্রাই লেবু), ১১০টি চায়না-১ ও চায়না-৩ লিচু গাছসহ আরও অসংখ্য কমলা, মাল্টা, বেদেনা, ডালিম, আঙ্গুর, লটকন, বিলম্বি, জামরুল, পলি পেয়ারা, চায়না পেয়ারা, বাউকুল, আপেল কুল, লন্ডনী লেবু ও সুপারি গাছ। এরমধ্যে আফ্রিকান বারোমাসি আম, পাকিস্তানী হাইব্রিড লেবু ও চায়না-১ এবং চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ করে এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। তার বদৌলতে এলাকার লোকজন এখন বারোমাস আম খেতে পারেন। আম কিনতে আসেন দূর-দূরান্তের লোকজনও।
সরেজমিনে হুমায়ূনের ‘সমন্বিত বাণিজ্যিক ফল বাগান’ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি আম গাছে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। আবার নতুন করে মুকুলও বেরোচ্ছে। হুমায়ূন আহম্মেদ জানান, আফ্রিকান বারোমাসি জাতের একেকটি আমের ওজন হয় কমপক্ষে ৮শ’ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১৬শ’ গ্রাম পর্যন্ত। এছাড়া একেকটি লেবুর গড় ওজন হয় ২৫০ গ্রাম।
স্থানীয় বাজারে এক কেজি আম আড়াই থেকে ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। এছাড়া লেবু বিক্রি হয় প্রতি হালি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। দাম বেশি হওয়ার কারণ উন্নতজাতের এসব আম, লিচু ও লেবু খুবই সুস্বাদু এবং লোভনীয় গন্ধযুক্ত। হুমায়ূন জানান, গত এক বছরে তিনি ৪ টন আম, ৬ টন লেবু ও ৫শ’ কেজি লিচু বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয় বাদে ৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আয় করেছেন। ফল বিক্রির লাভই এখন তার আয়ের প্রধান উৎস। এছাড়াও হুমায়ূনের বাগানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন আরও দু’জন কৃষি শ্রমিক।
হুমায়ূনের সমন্বিত বাণিজ্যিক ফল বাগান প্রসঙ্গে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল আজিজ খান জানান, হুমায়ূন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও উদ্যোগী ফলবাগান চাষী। আফ্রিকান বারোমাসি আম, পাকিস্তানী ট্রাই লেবু এবং চায়না লিচু তার বাগানটিতে নতুন বিশেষত্ব যোগ করেছে। এ ধরনের বাগান এ অঞ্চলে আর নেই।
তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে হুমায়ূনকে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত তার বাগান পরিদর্শন করে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। হুমায়ূন জানান, বাগান করতে গিয়ে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে তার সবটুকুই জোগান দিয়েছেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পুঁজি থেকে। কিন্তু ভবিষ্যতে বাগানটিকে আরও সম্প্রসারিত করতে চান তিনি। এ জন্য দরকার আর্থিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান তিনি।
আত্মপ্রত্যয়ী হুমায়ূন বলেন, প্রথম যখন বাগানের কাজে হাত দিইÑ তখন পরিবারের লোকজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীরাও আমাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। এখন উৎপাদন দেখে সবাই খুশি। আমার বাগানে কোন পাহারাদার লাগে না। গ্রামের লোকজনই আমার ফল বাগানের পাহারাদার।
Информация по комментариям в разработке