মন যখন ভোগে ডুবে যায়, তখন আত্মা হারিয়ে যায়- গীতা ২.৪৪–২.৪৫ এর জীবন্ত বার্তা
📜 শ্রীমদ্ভাগবদ্ গীতা- দ্বিতীয় অধ্যায়, শ্লোক ৪৪
🕉️ संस्कृत (Sanskrit):
भोगैश्वर्य-प्रसक्तानां
तयाऽपहृत-चेतसाम्।
व्यवसायात्मिका बुद्धिः
समाधौ न विधीयते॥ २.४४॥
🕉️ বাংলা-সংস্কৃত (বাংলা অক্ষরে সংস্কৃত রূপ):
ভোগৈশ্বর্য-প্রসক্তানাং
তয়া-অপহৃত-চেতনাম্।
ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ
সমাধৌ ন বিধীয়তে॥ ২.৪৪॥
🔊 বাংলা উচ্চারণ (Transliteration):
bhogaiśvarya-prasaktānām tayāpahṛta-cetasām
vyavasāyātmikā buddhiḥ samādhau na vidhīyate
🪔 বাংলা অনুবাদ:
যাদের মন ভোগ আর ঐশ্বর্যের প্রতি আসক্ত,
তাদের চেতনা সেই আসক্তিতেই হারিয়ে যায়।
তাদের স্থির ও একাগ্র বুদ্ধি- সমাধিতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
📖 শব্দে শব্দে অর্থ (Word-by-word meaning):
ভোগৈশ্বর্য-প্রসক্তানাম = ভোগ ও ঐশ্বর্যে আসক্ত ব্যক্তিদের
তয়া-অপহৃত-চেতনাম্ = সেই আসক্তি দ্বারা যাদের মন চুরি হয়েছে
ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ = স্থির ও একনিষ্ঠ বুদ্ধি
সমাধৌ = আত্ম-স্থিত ধ্যানে
ন বিধীয়তে = স্থাপন হয় না / সম্ভব নয়
🔎 তাৎপর্য ব্যাখ্যা:
যখন মন ভোগ আর পাওয়ার-এর নেশায় ভরে যায়, তখন ভেতরের নীরবতা হারিয়ে যায়।
তখন জীবনের লক্ষ্য হয়- কে বেশি সফল, কে বেশি ধনী, কে বেশি প্রশংসা পায়।
কিন্তু কৃষ্ণ বলছেন- এইসব তুলনা, প্রতিযোগিতা, আর সুখের দৌড়ই তোমার চেতনাকে দুর্বল করে দেয়।
সমাধি মানে মন সম্পূর্ণ স্থির হওয়া।
আর আসক্ত মন কখনও স্থির হয় না।
💡 বাস্তবমুখী উদাহরণ:
ভাবো, রিয়া একজন ট্যালেন্টেড গ্রাফিক ডিজাইনার।
কাজে ভালো, কিন্তু প্রতিদিন সে ইনস্টাগ্রামে ঘোরে- কে কত ফলোয়ার পেল, কার পোস্টে কত লাইক।
ওদের সাফল্য দেখে তার মন অস্থির হয়ে যায়।
একসময় নিজের প্রতিভায় সন্দেহ জাগে, মনোযোগ হারিয়ে যায়।
এই হল “তয়া অপহৃত চেতনাম্” - আসক্তি তার চেতনা চুরি করেছে।
যেদিন রিয়া ঠিক করল, “আমি কেবল নিজের শেখায় মন দেব, ফল নয়”-
সেদিনই তার কাজের মান, আত্মবিশ্বাস, সব বদলে গেল।
এটাই কৃষ্ণের উপদেশের বাস্তব প্রমাণ।
📜 শ্রীমদ্ভাগবদ্ গীতা – দ্বিতীয় অধ্যায়, শ্লোক ৪৫
🕉️ संस्कृत (Sanskrit):
त्रैगुण्य-विषया वेदा
निस्त्रैगुण्यो भव अर्जुन।
निर्द्वन्द्वो नित्यসत्त्वस्थो
निर्योगক্ষेम आत्मवान्॥ २.४५॥
🕉️ বাংলা-সংস্কৃত (বাংলা অক্ষরে সংস্কৃত রূপ):
ত্রৈগুণ্য- বিষয়াঃ বৈদাঃ
নিষ্ট্রৈগুণ্যো ভব অর্জুন।
নির্দ্বন্দ্বো নিত্যসত্ত্বস্থো
নিরযোগক্ষেম আত্মবান্॥ ২.৪৫॥
🔊 বাংলা উচ্চারণ (Transliteration):
traiguṇya-viṣayā vedā nistraiguṇyo bhavārjuna
nirdvandvo nitya-sattvastho niryoga-kṣema ātmavān
🪔 বাংলা অনুবাদ:
বেদ ত্রিগুণসম্পর্কিত বিষয়ের কথা বলে-
কিন্তু হে অর্জুন, তুমি সেই গুণের ঊর্ধ্বে ওঠো।
দ্বন্দ্বহীন হও, সর্বদা সত্ত্বে স্থির থাকো,
লাভ-ক্ষতির চিন্তা ত্যাগ করে, আত্মায় প্রতিষ্ঠিত হও।
📖 শব্দে শব্দে অর্থ (Word-by-word meaning):
ত্রৈগুণ্য = প্রকৃতির তিন গুণ — সত্ত্ব, রজ, তম
বিষয়াঃ বৈদাঃ = বেদে আলোচিত বিষয়সমূহ
নিষ্ট্রৈগুণ্যঃ ভব = তিন গুণের ঊর্ধ্বে ওঠো
নির্দ্বন্দ্বঃ = দ্বৈততার বাইরে, প্রশান্ত
নিত্যসত্ত্বস্থঃ = সর্বদা সত্ত্বগুণে স্থিত
নিরযোগক্ষেমঃ = লাভ-ক্ষতি বা নিরাপত্তার চিন্তা ছাড়া
আত্মবান্ = আত্ম-জ্ঞানসম্পন্ন, আত্মায় প্রতিষ্ঠিত
🔎 তাৎপর্য ব্যাখ্যা:
কৃষ্ণ এখানে অর্জুনকে বলছেন-
জীবনের সব জ্ঞান, এমনকি বেদের শিক্ষাও, প্রকৃতির তিন গুণের ভিতরেই ঘুরে বেড়ায়।
কিন্তু আত্ম-জ্ঞানে পৌঁছাতে হলে তোমাকে এই গুণের দাসত্ব ছাড়তে হবে।
যখন তুমি আর বাইরের সুখ-দুঃখে নড়ো না,
যখন সম্মান-অপমান তোমাকে কাঁপাতে পারে না,
তখনই তুমি “নিষ্ট্রৈগুণ্য”।
তখন তুমি সত্যিকার অর্থে মুক্ত।
💡 বাস্তবমুখী উদাহরণ:
অর্পণ এক জন সেলস ম্যানেজার।
প্রতিদিনই তার লক্ষ্য- টার্গেট পূর্ণ হবে কি না, বস খুশি থাকবে কি না।
যেদিন টার্গেট কম হয়, মন খারাপ। যেদিন বাড়ে, সে আনন্দে আত্মহারা।
এই ওঠানামাতেই তার শান্তি নেই।
একদিন সে ঠিক করল-
“আমি আমার সর্বোচ্চটা দেব, ফল নিয়ে ভাবব না।
বিক্রি হোক বা না হোক, আমি স্থির থাকব।”
ফল আশ্চর্য-
তার কাজের মান বেড়ে গেল, উদ্বেগ কমে গেল, টিমও তাকে সম্মান করতে শুরু করল।
এটাই “নির্দ্বন্দ্বো, আত্মবান্”-
যেখানে কাজ আছে, কিন্তু উদ্বেগ নেই।
চেষ্টা আছে, কিন্তু ফলের দাসত্ব নেই।
শ্রীকৃষ্ণ এখানে এক গভীর কথা বলছেন-
যে মন ভোগ, ক্ষমতা আর তুলনার জালে আটকে থাকে, সে কখনও স্থির হতে পারে না (২.৪৪)।
আর মুক্তির পথ? দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে, আত্মায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া (২.৪৫)।
এই ভিডিও বা অডিও শুনলে বুঝবে, কীভাবে আধুনিক জীবনের বিশৃঙ্খলার মাঝেও ভেতরের শান্তি ফিরে পাওয়া যায়।
#BhagavadGita #GitaWisdom #GitaChapter2 #Krishna #SelfMastery #InnerPeace #MindControl #আত্মজ্ঞান #গীতা
Информация по комментариям в разработке