জাহান্নামের ভয়ঙ্কর বর্ণনা – পর্ব ৪ : মুক্তির আশার আলো
জাহান্নামের আগুনে যখন চারদিক লেলিহান শিখায় ভরে গেছে, তখনও কিছু মানুষ ছিল—যাদের হৃদয়ে একটুকরো ঈমানের আলো টিকে ছিল। তারা আল্লাহকে চিনত, কিন্তু দুনিয়ায় গোনাহ করেছিল, তওবা করতে পারেনি। আজ তারা আগুনে কাঁদছে, চিৎকার করছে—
“হে আমাদের রব! আমরা স্বীকার করছি, আমরা অন্যায় করেছি। আমাদের আরেকবার সুযোগ দিন!”
জাহান্নামের ফেরেশতারা তাদের আর্তনাদ শুনে একে অপরের দিকে তাকায়। তারা জানে—এরা একদিন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছিল। কিন্তু এখন তাদের মুখ আগুনে পুড়ে গেছে, চোখে আগুনের ধোঁয়া, দেহ কালো কয়লার মতো।
তখন হঠাৎ আল্লাহর এক আদেশ আসে—
“আমার সেই বান্দাদের খুঁজে বের করো, যাদের হৃদয়ে ঈমানের কণিকা পরিমাণ আলোও ছিল।”
সেই আদেশ শুনে ফেরেশতারা আগুনের ভেতরে প্রবেশ করে। আগুন তাদের পোড়ায় না, কারণ তারা আল্লাহর আদেশে চলেছে। তারা ডাকে—
“কে আছে এখানে, যে একসময় আল্লাহর নাম নিয়েছিল? যে একবারও সিজদা করেছিল?”
তখন আগুনের ভেতর থেকে দুর্বল কণ্ঠ শোনা যায়—
“হে ফেরেশতা! আমি একদিন নামাজ পড়েছিলাম... কিন্তু পরে ভুলে গিয়েছিলাম...”
ফেরেশতারা বলে, “তুমি রবে বিশ্বাস করেছিলে?”
সে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “হ্যাঁ, করেছিলাম।”
তখন ফেরেশতারা আগুনের ভেতর থেকে তাকে তুলে আনে। আগুনের দগদগে দেহ দেখে ফেরেশতারা পানি ঢালে—এক বিশেষ পানি, যা জান্নাতের হাওজে কাওসার থেকে এসেছে। সেই পানি দেহে পড়তেই তার ক্ষত সেরে যায়, ত্বক নতুন হয়ে ওঠে।
এরপর এক আলোর পথ খুলে যায়—সেই পথের শেষ প্রান্তে ঝলমলে জান্নাত।
জাহান্নাম থেকে মুক্ত মানুষগুলো হাঁটতে থাকে সেই পথে, আর পেছনে তাকিয়ে দেখে ভয়ানক আগুন, যেখানে তারা একসময় পুড়ছিল। চোখে জল এসে যায়, কিন্তু এবার সেটা ভয় নয়—কৃতজ্ঞতার অশ্রু।
জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে ফেরেশতারা বলে,
“তোমরা এখন নিরাপদ, এখানে কোনো ভয় নেই, কোনো দুঃখ নেই।”
জান্নাতে প্রবেশের পর তারা প্রথমে বলে—
“আলহামদুলিল্লাহ! যিনি আমাদের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন।”
তাদের জন্য সেখানে প্রস্তুত থাকে ঠান্ডা নদী, ফলভরা বাগান, সোনার প্রাসাদ। তারা যখন কাওসার হাওজের পানি পান করে, তখন আগুনের সব স্মৃতি মুছে যায়। শুধু হৃদয়ে থেকে যায় এক গভীর উপলব্ধি—
“পৃথিবীর জীবনটা ছিল ক্ষণিক, কিন্তু তার ফল ছিল চিরস্থায়ী।”
আল্লাহ যাদের চান, তাদের শাস্তির পর ক্ষমা করে দেন।
তাঁর দয়া এত বিশাল যে, জাহান্নামের ভেতর থেকেও তিনি বান্দাকে মুক্ত করেন—যদি তার অন্তরে ঈমানের আলো থাকে।
দোয়া:
“হে আল্লাহ, আমাদের মৃত্যুর আগে ক্ষমা করো,
যেন আমাদের নাম কখনো জাহান্নামের তালিকায় না থাকে।
আর আমাদেরকে তোমার জান্নাতুল ফিরদাউসের বাসিন্দা বানাও।”
Информация по комментариям в разработке