Скачать или смотреть সেলিম প্রধানের চেয়ারম্যান প্রার্থীতা বাতিল ও জরিমানা | কেসিনো ও অনলাইন জুয়া | নির্বাচনে | bnanews24

আদালতের সময় নষ্ট করায় রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কেসিনো ও অনলাইন জুয়া কান্ডের সেই সেলিম প্রধানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তার প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ২১ মে রূপগঞ্জ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড পাওয়া সেলিম প্রধান রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় গত ২৩ এপ্রিল যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে মনোনয়নপত্র বাতিলের বৈধতা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর সেলিম আপিল করলেও গত ২৮ এপ্রিল জেলা প্রশাসক মনোনয়ন বাতিল বহাল রাখেন।
এরপর গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টে নিজের প্রার্থিতার বৈধতা ও প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে রিট করেন সেলিম প্রধান। রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট সেলিম প্রধানের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে প্রতীক বরাদ্দের আদেশ দেয়।
সেই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এর আর এক চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান। এর প্রেক্ষিতে ২রা মে সেলিম প্রধানের প্রার্থিতা ও প্রতীক বরাদ্দে হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন চেম্বার আদালত।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে উপজেলা পরিষদটির নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশন আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন (লিভ টু আপিল) করে। পৃথক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ৬ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। ফলে সেলিমের নির্বাচন করা আটকে যায়।
এরপর চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে পৃথক দুটি আবেদন করেন সেলিম। যা চেম্বার আদালত হয়ে আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে।
শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ সেলিমের আবেদন দুটি নিষ্পত্তি করে দিয়ে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত সেলিমকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা খরচা হিসেবে দিতে আদেশ দেন। ফলে সেলীম প্রধানের নাটকের অবসান হয়েছে।
আদালতে সেলিমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম নুরুল আলম। অপর প্রার্থী হাবিবুর রহমানের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও আইনজীবী মাহিন এম রহমান। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
প্রসঙ্গত, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী বিমান থেকে নামিয়ে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
পরে তার গুলশান ও বনানীর অফিস এবং বাসায় অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইনে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিন রাতে সেলিম প্রধানকে কেরানিগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেলিম প্রধানের পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা মর্তুজাবাদ এলাকায়। তার বাবা নান্নু মিয়া ভুলতায় একসময় কাপড়ের ব্যবসা করতেন।
অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা হিসেবে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার সেলিম প্রধানের নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। নিজে সরাসরি রাজনীতি না করলেও তাঁর নিকটাত্মীয়রা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে ব্যবসার স্বার্থ রক্ষা করতে সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সেলিম প্রধানের ওঠাবসা ছিল।
সেলিম প্রধানের চাচাতো ভাই আনোয়ার সাদাত সায়েম একসময় রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই ভাই বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা। এই ভাইয়ের মাধ্যমে বিএনপি-চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকার সময় কারাবন্দী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে সেলিমের একসময় ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও উপহার দিয়েছিলেন সেলিম।

ক্ষমতার পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেলিম প্রধানও নিজের সঙ্গী বদল করেন। সখ্য গড়েন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে। এই সম্পর্কের মাধ্যমে সেলিম প্রধান বৈধ ব্যবসার পাশাপাশি অবৈধ ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন । এর মধ্যে স্পা, ডিসকো ক্লাব গড়ে তোলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সাল থেকে অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন সেলিম প্রধান।