অতিথি পাখি: দূর দেশ থেকে আসা প্রকৃতির বন্ধু 🌿
প্রতি বছর শীতকাল এলেই বাংলাদেশের প্রকৃতি সেজে ওঠে এক নতুন রূপে, আর সেই রূপের প্রধান আকর্ষণ হলো অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি। সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে আসা এই পাখিরা আমাদের পরিবেশের এক অমূল্য সম্পদ।
১. কোথা থেকে আসে এই পাখিরা?
বাংলাদেশের বেশিরভাগ অতিথি পাখি আসে প্রধানত সাইবেরিয়া এবং হিমালয় অঞ্চলের পাদদেশীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে। এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, লাইবেরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকেও কিছু প্রজাতির পাখি আসে।
২. কোন কোন দেশ পাড়ি দেয় এবং কত হাজার মাইল?
এই পরিযায়ী পাখিরা উষ্ণতা ও খাদ্যের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে।
এরা সাধারণত তিব্বত, মালয়, সাইবেরিয়া, লাইবেরিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মঙ্গোলিয়া সহ বহু দেশের আকাশ পাড়ি দেয়।
অনেক প্রজাতি তাদের যাত্রাপথে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার (২১,৭০০ মাইল) পর্যন্ত পথ অতিক্রম করতে পারে, যা সত্যিই এক বিস্ময়কর ব্যাপার!
৩. কেন আমাদের দেশে আসে?
মূলত তিনটি কারণে পাখিরা শীতকালে বাংলাদেশে আসে:
তীব্র শীত থেকে বাঁচতে: তাদের মূল আবাসস্থল (যেমন সাইবেরিয়া) শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও তুষারে ঢেকে যায়। এই তীব্র শৈত্যের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতেই উষ্ণ আবহাওয়ার খোঁজে তারা আসে।
খাদ্যের সন্ধানে: ঠাণ্ডায় তাদের আবাসস্থলের জলাশয় ও খাদ্য উৎসগুলি বরফে জমে যায়। তাই পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জলের সন্ধানে তারা এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়।
নিরাপদ প্রজননের জন্য: অনেক পাখিই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পরিবেশে প্রজনন ও ডিম পাড়ার উদ্দেশ্যে আসে।
৪. তাদের সুরক্ষার জন্য কি আইন রয়েছে?
হ্যাঁ, অতিথি পাখিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে কঠোর আইন রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী:
যেকোনো ধরনের বন্যপ্রাণী শিকার, ধরা, হত্যা বা এর অংশবিশেষ দখলে রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ।
অতিথি পাখিদের শিকার, বিক্রি, পরিবহন বা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৫. শিকারিদের জন্য কি শাস্তি রয়েছে?
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, অতিথি পাখি শিকার বা হত্যা করলে শিকারির জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে:
সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
⚠️ মনে রাখবেন, অতিথি পাখি শিকার একটি গুরুতর অপরাধ!
৬. আমাদের কি দায়িত্ব?
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই পাখিদের আগমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের সুরক্ষায় আমাদের নিম্নলিখিত দায়িত্বগুলি পালন করা উচিত:
সচেতনতা বৃদ্ধি: পাখি শিকার বা কেনার অপরাধ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। শিকারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
শিকারিদের প্রতিহত করা: কোথাও পাখি শিকার হতে দেখলে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসন (ইউএনও/বন বিভাগ/পুলিশ) বা পরিবেশকর্মীদের জানাতে হবে।
নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা: তাদের আবাসস্থল, যেমন—হাওর, বিল বা জলাশয়গুলোকে দূষণমুক্ত ও শান্ত রাখা, যাতে তারা নির্বিঘ্নে থাকতে পারে।
পর্যটকদের সচেতনতা: যেখানে অতিথি পাখিরা আসে, সেখানে তাদের ছবি তোলা বা কাছ থেকে দেখার সময় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যাতে তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।
আসুন, দূর দেশ থেকে আসা প্রকৃতির এই অতিথিদের আমরা সসম্মানে বরণ করে নিই এবং তাদের নিরাপদে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করি।
Информация по комментариям в разработке