১০০ বছরে পা দিলো আরএসএস, স্বপ্নপূরণ হলো না, হবেও না।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ১৯২৫ সালে তাদের সংগঠনের লক্ষ্য কী? সেটা বলতে গিয়ে জানি হিন্দু যুবকদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও একতা আনা, হ্যাঁ এটাই বলা হয়েছিল কিন্তু সেদিন থেকেই তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল 'হিন্দু রাষ্ট্র' তৈরি করা । তারা আজ ১০০ বছরে পা দিল, কাজেই সেই প্রশ্ন তো স্বাভাবিক যে আরএসএস কি তাদের প্রধান লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে? তাদের রাজনৈতিক দল, বিজেপি, এখন দেশের ক্ষমতায় আছে ঠিকই। কিন্তু ভারত আজও তার সংবিধান অনুযাআয়ী এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আরএসএস-এর এই হিন্দু রাষ্ট্রের আদর্শকে কিন্তু বেশিরভাগ ভারতীয় মানুষ, এমনকি হিন্দু জনসংখ্যার ৫০% মানুষ মেনে নেয়নি। কেন এরকমটা হল? কেন আরএসএস সফল হলেও 'হিন্দু রাষ্ট্র' তৈরি করতে পারেনি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো তাদের ‘ছদ্মবেশের কৌশল’ (dissimulation), তারা নিজেদেরকে এক ছদ্মবেশ দিয়ে ঢেকে রাখাটাই তাদের কৌশল হিসসেবে ব্যবহার করে আর ঠিক সেই কারণেই আর এস এস তার লক্ষ্যের থেকে অনেক দূরে, হ্যাঁ ১০০ বছর পরে আপনার মনে হতেই পারে যে তারা ক্ষমতায় তারা তাদের সংগঠনকে বাড়িয়েছে, কিন্তু একটু ক্ষতিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন এখনও তাদের সামনে গান্ধী এক বিরাট বাধা, গান্ধীর ইনক্লুসিভ সোশাইটির আদর্শ একটা বাধা, এখনও প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে, দেশের মধ্যে গান্ধীকে প্রকাশ্যে সম্মান জানাতে হয়, তাদের সামনে আরেক বাধা হল দেশের সংবিধান আর বি আর আম্বেদকর, বিরাট বাধা, সংবিধান কে অক্ষুণ্ণ রেখে হিন্দু রাষ্ট্র করা সম্ভব নয় আর সেই সংবিধানে হাত দিলে দলিত, সংখ্যালঘু, উদার হিন্দু, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সামনে হাওয়ার মত উড়ে যাবে সরকার, তারা জানে, এবং তাদের সামনে আরেক বিরাট বাধা হল ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আর এস এস এর ভূমিকা বিশ্বাসঘাতকের, একজনও নেই যাকে তারা সামনে রাখতে পারে। তারা গান্ধী হত্যার জন্য দায়ী, তারা আম্বেদকরের দলিত চিন্তার বিরোধী, তারা ভগৎ সিং কে নৈরাজ্যবাদী বলেছে, তারা সুভাষ চন্দ্র বসুর বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীতে লোক পাঠিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা অধ্যায়েও তাদের কোনও ভূমিকা নেই, কাজেই তাদের এক প্রাণপণ জাতীয়তাবাদী হবার চেষ্টা বার বার মাঠে মারা যায়। কদিন আগেই আমাদের সংঘ প্রচারক প্রধানমন্ত্রী ফেকুভাই মোদী বলেছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনের সময়ে প্রথম সরসঙ্ঘচালক হেডগেওয়ারকে জেলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু হাসবেন না, মোদিজী যে কথাটা বলেন নি যে হেডগেওয়ার প্রথম জীবনে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেন্ট্রাল প্রভিন্সের কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আর সেই কংগ্রেসের আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়। ঐ প্রথম ঐ শেষ। ১৯২০-র গান্ধীজির ডাকা খেলাফত আন্দোলনের সমর্থনে উত্তেজিত ভাষণ দেবার জন্য জেল হয়। উনিই একমাত্র কংগ্রেসী নেতা ছিলেন যিনি নিজের উকিল কে ডিফেন্স এর জন্য নিয়োগ করেন, কিন্তু জেল হয়, এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়, কিন্তু তিনি যখন জেল থেকে বের হচ্ছেন তখন ওনার ওজন ২৫ পাউন্ড বেড়ে গিয়েছিল। কারণ ঐ জেলের কুখ্যাত জেলারের সঙ্গে তাঁর দোস্তি হয়ে গিয়েছিল, হ্যাঁ ভালো মন্দ খেয়ে ওজন বেড়েছিল। সুভাষ বসু প্রত্যেকবার জেলে যেতেন, জেল থেকে ফিরতেন অসুস্থ হয়ে, চিত্তরঞ্জন দাস জেলে গিয়ে অসুস্থ হলেন আর সেরে উঠলেন না। কিন্তু ইনি মোটা হয়ে ফিরলেন। কিন্তু পরে এই অসহযোগ আন্দোলনের বিরোধিতা করেন । গান্ধীর বিরোধিতায় দল ছাড়েন আর এই মতপার্থক্য থেকেই ভারতে জাতীয়তাবাদের দুটো আলাদা ধারণার জন্ম হয়। তার একটা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ। অন্যটা ছিল একচেটিয়া 'সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ', যা ছিল হেডগেওয়ার এবং সাভারকরের দর্শন। সঙ্ঘ জন্মলগ্ন থেকেই একমাত্র হিন্দু সমাজকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে, যা এখনও তারা করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রিয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মূল লক্ষ্য 'হিন্দু রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠা করা ।
Информация по комментариям в разработке