সমাজের কিছু কুসংস্কার, সমাজের কুসংস্কার, সমাজের কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা, সমাজের প্রচলিত কিছু কুসংস্কার।
হাউজে কাউছার মিডিয়া
ইসলামিক জার্নাল ডেস্কঃ
মানবজাতির সর্ববিধ অন্ধকার থেকে মুক্ত করার জন্যই কুরআনের আগমন। মহান আল্লাহ কত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন-(তরজমা) এটি সেই কিতাব যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি যেন তুমি মানুষকে বের করে আন অনেক অন্ধকার থেকে এক আলোর দিকে।-সূরা ইবরাহীম (১৪) : ০১
কুসংস্কার থেকে বাঁচতে মসজিদের ইমাম খতিব, শিক্ষক ও গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করতে হবে, কুসংস্কারের প্রচার হয় এমন কোনো খবর বা বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্মিলিতভাবে এভাবে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সমাজ থেকে কুসংস্কার কমে আসবে।
১. পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া যাবে না। তাহলে পরীক্ষায় ডিম (গোল্লা) পাবে।
২. নতুন বউকে কোলে করে ঘরে আনতে হবে, আর কোলে নিবেন দুলা ভাই।
৩. দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নাই।
৪. নতুন বউকে শ্বশুর বাড়ীতে নরম স্থানে বসতে দিলে বউয়ের মেজাজ নরম থাকে।
৫. বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ ‘সদকা’ করতে হয়।
৬. ওষুধ খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বললে রোগ বেড়ে যায়।
৭. জোড়া কলা খেলে জমজ সন্তান জন্ম নেয়।
৮. রাতে নখ, চুল, দাঁড়ি-গোফ ইত্যাদি কাটতে নেই।
৯. প্রথম সন্তান মারা গেলে পরের সন্তানের কান ফুটো করে দিতে হয়, তাতে সে দীর্ঘ হায়াত পায়।
১০. ভাই-বোন মিলে মুরগি জবাই করা যায় না।
১১. ঘরের ময়লা পানি রাতে ঘরের বাইরে ফেলতে হয় না, তাতে সংসারে অমঙ্গল হয়।
১২. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পেছন থেকে ডাক দিলে তার যাত্রা অশুভ হয়।
১৩. ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হয়।
১৪. কোরআন শরীফ হাত থেকে পড়ে গেলে আড়াই কেজি চাল ‘সদকা’ করতে হয়, না হলে মাথার চুল উঠে যায়।
১৫. ছোট বাচ্চাদের দাঁত পড়লে তা ইঁদুরের গর্তে ফেলতে হয়, না হলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়।
১৬. মুরগির মাথা খেলে মা-বাবার মৃত্যুর সময় কাছে থাকার সুযোগ হয় না।
১৭. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পেছন দিকে ফিরে তাকানো নিষেধ; তাতে যাত্রা ভঙ্গ হয় বা যাত্রা অশুভ হয়।
১৮. ঘরের প্রবেশকৃত রোদে অর্ধেক শরীর রেখে বসা নিষেধ। তাহলে জ্বরে আক্রান্ত হতে হয়।
১৯. রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।
২০. রাতে গাছের পাতা ছিঁড়া ও ফল তোলা নিষেধ।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শুভাশুভ লক্ষণ ও দিনক্ষণ ঠিক করা এবং কুসংস্কারজনিত অন্ধবিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকা বা বিচার করা শেরিকি পৌত্তলিকতার পর্যায়ভুক্ত। (মিশকাত)
আবু দাউদ শরিফের এক হাদিসে উল্লেখ আছে, অশুভ লক্ষণ মানা শিরক। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ কথা তিনবার উচ্চারণ করেছেন। মিশকাত শরিফে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা)! আমরা এক বাড়িতে অবস্থান করতাম। সেখানে আমাদের সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল, অতঃপর আর এক বাড়িতে গেলাম, সেখানে আমাদের সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ হ্রাস পেল। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) একে অস্বস্তিকর জায়গা বলে অভিহিত করেন।
কুসংস্কারে বিশ্বাস স্থাপন, কোনো কিছুর প্রতি কুলক্ষণ ভেবে মন-মানসিকতা তৈরি করা বা তার প্রতি আস্থাশীল হওয়া পাপ। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে যে, গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট লোক আল্লাহর রহমত থেকে অনেক দূরে অবস্থান করবে। তারা আল্লাহ-রাসুলের নীতি আদর্শবিরোধী অলীক ধ্যানধারণায় বুঁদ হয়ে আছে।
কুসংস্কারের প্রভাবে পড়ে যারা এহেন অলীক কল্পনাপ্রসূত কুরীতিগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আসছে, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের মতাদর্শবহির্ভূত নতুন নতুন ভ্রান্ত ধারণাকে সৃষ্টি ও প্রচলন রাখার জন্য সচেষ্ট রয়েছে, তাদের সম্পর্কে তিরমিজি ও আবু দাউদে উল্লেখ আছে যে, এ ধরনের নব নব পন্থা উদ্ভাবন করা কিংবা নতুন কিছু সৃষ্টি বা প্রচলন করা গোমরাহি। এ ধরনের পথভ্রষ্টদের পরিণামে দোজখে শাস্তিভোগ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, যারা স্বেচ্ছায় পাপের পথের প্রতি আসক্ত হয়, নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ তাদের আহার্য হবে, গলিত তামার মতো এবং চামড়াদগ্ধকারী ফোটানো পানির মতো, যা তাদের পেটের ভেতরে ফুটতে থাকবে।
যাত্রাকালীন টিকটিকির ডাক, কাকের ডাক, পশুপাখির ডাক, গ্রহ-নক্ষত্র-চন্দ্র-সূর্যের প্রতি অলীক বিশ্বাস এবং খালি কলসি দেখে রওনা হওয়া, ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে না যাওয়া, যাত্রাকালে হোঁচট খাওয়া, রাশিফল নির্ণয় করে প্রতিদিনের কর্মক্ষেত্রে গমন করা কুসংস্কারের বহিঃপ্রকাশ। শুধু তা-ই নয়, মুসলিমসমাজের অনেক কল্যাণের আশায় বিয়ে-শাদিতে ধান-দূর্বা দিয়ে বহুরঙা কুলোয় বর-কনেকে বরণ করে, কবরে বাতি জ্বালায়, ফুল ছড়ায়, চাদর দেয়, মহররম ও শবেবরাতে বিভিন্ন রীতি-রেওয়াজ পালন করে। জিন-ভূত ছাড়ানো থেকে শুরু করে তাবিজ-কবজের নামেও নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। যেসবের কোনো ভিত্তি নেই ইসলামে। কুসংস্কারের কারণে অনেক সময় নারীর সম্ভ্রমহানি এমনকি জীবনহানির ঘটনা ঘটে। এভাবে নানা কুসংস্কার আমাদের সমাজ ও ব্যক্তিজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এছাড়া এলাকাভেদে আরও অনেক কুসংস্কারের প্রচলন রয়েছে। আমাদের উচিত এসব কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রচলিত এ সব কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।
সংকলনঃ
মাও আবু তাহের নেত্রকোনী।
প্রতিষ্ঠাতা, দারুল উলুম ক্বাওমি মাদ্রাসা।
ভূগী (উত্তর পাড়া), পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
নিয়মিত লেখকঃ ইসলামিক জার্নাল বিভাগ,
নেত্রকোণা জার্নাল ডটকম পত্রিকা
Total views 439
FacebookTwitterEmailShare

0Shares
নেত্রকোণা জার্নাল এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
News কুসংস্কার সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার

Информация по комментариям в разработке