হরি ভক্ত ভক্তিমতি পিতামাতা দের চরণে আমার ভক্তিপূর্ণ প্রনাম। পর বিশেষ সমাচার এই যে,02/11/2021 তারিখ । ভারত, ওড়িশা, মালকানগিরি ডিস্ট্রিক্ট ,গ্রাম:- এম. ভি -31নং জগদিস গোসোইর বাড়িতে বাৎসরিক মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছিলো ।
(কবিতা রসরাজ তারক চন্দ্র সরকারের কবি জীবনের কিছু কথা)
-সুভাষচন্দ্র তরফদার-
কবিগানের প্রথম পর্যায়ে লোক মনোরঞ্জনের মাধ্যম হিসাবে কাব্য,ছন্দ,লহর(লহর- শ্লেষ ও ব্যাঙ্গ)আদি রস মিশিয়ে পরিবেশিত হত।একথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।প্রাচীন কবি বা শ্রোতাদের কাছে শুনেছি আগে কবিগান পরিবেশিত হত গ্রাম থেকে দূরে কোন ছাড়া ভিটেয় অথবা ধান কেটে নিয়ে যাওয়া মাঠে অর্থাৎ নাড়া বনে। যেখানে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দের বা মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ ছিল ।সেই কবির নাম ছিল লাল কবি।
উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কবিগানের পরিবর্তন বা কবিগানকে অশ্লীলতা আবিলতা মুক্ত করেন কবি রসরাজ তারক চন্দ্র সরকার।কবিগানের লোকরঞ্জন ধর্ম বজায় রেখে ধর্ম শাস্ত্র নীতিকথা সমাজনীতি অর্থনীতি শিক্ষানীতি রাজনীতি আধ্যাত্মবাদ গুরুবাদ ও বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারা মাথায় রেখে কবিগানের আমূল পরিবর্তন আনেন। তখন থেকে কবিগান চণ্ডীমণ্ডপে মেলার ময়দানে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে সভ্য সমাজে নারী-পুরুষ সকল শ্রেণীর মানুষের শ্রবণযোগ্য স্থানে স্থান পেতে শুরু করেছিল।
কবি রসরাজ তারক চন্দ্র সরকার ছিলেন সর্ব শাস্ত্র বিশারদ সমাজ সংস্কারক মানব দরদী এক মহান কবি।তার জন্ম বাংলা ১২৫২ও ইংরেজি ১৮৮৫ সালে মার্গশীর্ষ আমাবস্যা শনিবার,যশোর জেলা নড়াইল মহকুমার অন্তর্গত জয়পুর গ্রামে।মাতা অন্নদা দেবী,পিতা লোকো কবি কাশীনাথ তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত কবি ছিলেন।তিনিও প্রচলিত কবিগানের অশ্লীলতা দূরীকরণের চেষ্টা প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি তার প্রচেষ্টায় সফল না হলেও তার উত্তর অধিকারী সুযোগ্য পুত্র পিতৃধারা অবলম্বন করে বাংলার ঐতিহ্য কবিগানের অশ্লীলতা মুক্ত করে অমরত্ব লাভ করেন। তিনি পাঠ্য বিদ্যায় খুব বেশি শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু তার রচনার গভীরতা অসীম। তার অমর সৃষ্টি শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত মহাকাব্য।
পূর্ববঙ্গের কবি গানের ধারা দুই ভাগে বিভক্ত। এক পদ্মা নদীর উত্তর পূর্ব পারে ঢাকা নরর্সিংদির প্রখ্যাত কবি হরি আচার্যের ধারা।দুই পদ্মানদীর দক্ষিণ পশ্চিম পারে কবিরাজ তারক চন্দ্রের ধারা।
কবি চূড়ামণি তারক চন্দ্র সরকার সুদীর্ঘ চুয়ান্ন বছর পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন কবিদের সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে কবিগান করেছেন।তিনি ছাত্রবৃত্তি পর্যন্ত লেখাপড়া শিখলেও যুক্তি তর্ক শাস্ত্র জ্ঞান সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য ছিল অসাধারণ।কবিগান ছাড়াও পন্ডিত হিসাবে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন স্থানে জটিলতম সমস্যার সমাধান করতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো। কঠিন থেকে কঠিন সমস্যার সমাধান সহজ-সরল ভাষায় করে পন্ডিত সমাজ থেকে বহু উপাধি লাভ করেছিলেন।যেমন-যশোহরের কালিয়া গ্রামের পন্ডিত সমাজ উপাধি দিয়েছিলেন "কবি রসরাজ।" নড়াইল জমিদার বাড়ির কবিগানে পণ্ডিতগণ খেতাব দিয়েছিলেন "তারক ভাগবত।"পণ্ডিত প্রবর" খেতাবে অলংকৃত করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ভট্টপাড়া বা ভট্টপল্লীর পন্ডিতগন। ফরিদপুর মল্লকান্দি গ্রামের মৃত্যুঞ্জয় গোসাই উপাধি দিয়েছিলেন "তারক রসনা।"সুকবি" অলঙ্কারে ভূষিত করেছিলেন ইতিনার ভট্টাচার্য গন।ওড়াকান্দি শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর "প্রেমিক কবি"নামে নামাঙ্কিত করেন।
ডা: উপেন্দ্রনাথ সরকার "কবি চুড়ামনী" নামে ভূষিত করেন।ঈশান চন্দ্র রায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গোপালগঞ্জ তিনি উপাধি দিয়েছিলেন "অতি মানব তারক সরকার।"পান্ডিত্যে তারক"8বলে অভিহিত করেন সংস্কৃত পণ্ডিত কেশব কুমার দত্ত গোপালগঞ্জ।
প্রাসাঙ্গিক কারণে কবি চূড়ামণি তারক সরকারের সহশিল্পীদের বা দোহারের কিছু নাম এখানে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করি।ডুমুরিয়া সূর্যনারায়ন সিকদার, পদমা কালিচরন,মৃধাপুর কোলাপাটগাতির মধুসূদন সরকার,ঘষিয়াখালী নবীন চন্দ্র বসু প্রমুখ। যাদের সঙ্গে কবি রসরাজ কবিগান করেছেন- হরিচরণ আচার্য ঢাকা,বাটিকামারী অম্বিকাচরণ বিশ্বাস,গোবিন্দ তাঁতি মাগুরা, নবীনচন্দ্র তাঁতি, আনন্দ সরকার,দ্বারিক বিশ্বাস, মথুরা দে,হরিবর সরকার,মনোহর সরকার, বিষ্ণুপদ সরকার,পাগলা কানাই, নদের চাঁদ সরকার,রজনী সরকার,বেচারাম সরকার,রাইচরন সরকার, হাকিম চাঁদ সরকার,ইদু বিশ্বাস,ফজর আলী বয়াতি প্রমুখ। এছাড়া কবিরাজের কাছ থেকে কবিগান শিক্ষা করেছেন ১৩০জন বলে জানা যায়।
কবি চূড়ামণি তারক সরকারের রচনার মধ্যে মালসী, সখীসংবাদ ,কবি,ধুয়া গান, মহাকাব্য আদি জীবনমুখী সাহিত্য-শিল্প সৃজনশীলতায় অধ্যবধি অচৈতন্য মানবকে চেতনশীল করে তোলে। তাঁর কাব্য সাহিত্য ভান্ডার থেকে একখানা দুষ্প্রাপ্য মালসী গানের অংশবিশেষ তুলে ধরছি ,যা তাঁর সমসাময়িক কালে মানব ধ্বংসী দূর্ভিক্ষের কাহিনী অবলম্বনে রচিত।
প্রথম ধরণ --সাধন করবো সুখী হব মা সুখের দিন না পাই।
পাড়ন--ভাবি একদিন সুখের সুদিন, সম্মুখে সেও মা দুর্ভিক্ষের কাটাই।
১ ফুকার--মাগো বারোশো বাহাত্তর সালে ।বৎসরের ভেতর প্রলয়ঙ্কর ঝড় হলো মাগো -
দৌলতখাঁ একবার ভাঙলো খন্ড প্রলয় ১৬ সালে অন্নের কষ্ট হলো।
মিশ--মাগো কতবার মন্বন্তর দেহঘরে দৌলতখা নেই মা ধন-দৌলত দায়ীনী
আমার গুরুর ধন-দৌলতের হানি করল দুরন্ত শনি।
মুখ--মাগো বারে বারে ভারতবর্ষে, দুর্ভিক্ষ মন্বন্তর আসে,
ঝড়-বাতাসের বসত করল খালি।।
এছাড়া কবি গানের মধ্যে ধুয়া গানের প্রচলন করেন কবি চূড়ামণি তারক চন্দ্র সরকার ।তাঁর রচিত ধুয়া গানগুলি অদ্যবধি মহাসংকীর্তন নামে ভক্ত মহলে বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধার সহিত সমাদৃত।
_________________________
Channel: Ami Matua
Administrator & Editing: SUNIL SARKAR
Ami Matua Team Contact number/WhatsApp +919178415460
বিশেষ অনুরোধ একান্ত প্রয়োজনে যোগাযোগ করবে
________________________
#Harichand_Sarkar #Jagodish_Gosai #ami_matua #আমি_মতুয়া
Информация по комментариям в разработке