৩০শে ডিসেম্বর রোজ শুক্রবার হাজার ভিক্ষুকে পিণ্ডদান ২০২২ অনুষ্ঠানের বর্ণনা।
মহামানব গৌতম বুদ্ধের জীবিতকালীন সময়ের পরে, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে সর্বপ্রথম খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দক্ষিণ মধুপুরে অবস্থিত আমাদের বাড়ী ও এর সংলগ্ন ধান্য জমিতে আয়োজিত ৩০শে ডিসেম্বর রোজ শুক্রবার হাজার ভিক্ষুকে পিণ্ডদান-২০২২ অনুষ্ঠানে ১১৫৭ জন শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু/ভান্তে (গ্রুপ-A: ৯৭জন, গ্রুপ-B:২২৬জন, গ্রুপ-C:২১১জন, গ্রুপ-D:১৯৮জন, গ্রুপ-E:১৯৩জন, গ্রুপ-F:২০১জন এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৩১জন ভিক্ষু সহযোগিতা করেন) এবং ৫৮ জন শ্রমণ সহ সর্বমোট ১২১৫ জনকে পিণ্ডদান করা হয়। ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম এবং বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, এবং বান্দরবান থেকে আগত শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু/ভান্তেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধাচিত্তে পিণ্ড গ্রহণ করেন। শ্রদ্ধেয় ভান্তেদেরকে পিণ্ডদানের জন্য ১০৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানের সময় সার্বিক সহযোগিতার জন্য ১৯৫ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানের দিন ট্রাফিক ও রোড ব্যবস্থাপনায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন ৩১ জন শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু/ভান্তে(মহাস্থবিরসহ) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সহযোগিতা করেন। মাননীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহ অন্যান্য সংস্থা ও সংগঠন এবং সাংবাদিকবৃন্দ অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
এই অনুষ্ঠানে বুদ্ধমুর্তি দান, উপগুপ্ত ভান্তে মুর্তি দান, সীবলী ভান্তে মুর্তি দান, অষ্ট পরিষ্কার দান, মহাসংঘ দান, ৮৪ হাজার প্রদীপ দান, কল্পতরু দান, মং দান, ত্রিপিঠক দান, মহাপিণ্ডদান, প্রানী দান বা অবমুক্ত করন , চীবর দান, রাঙামাটির রাজবন বিহারের বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা নির্মাণে টাকা দান, এবং নানাবিধ দান সহ পঞ্চশীল প্রার্থনা ও গ্রহন, ফানুস উৎসর্গ, মহামঙ্গলসূত্র/মহাপরিত্রাণসূত্র প্রার্থনা ও শ্রবন, ধর্মীয় সঙ্গীত বাজিয়ে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, এবং স্বধর্ম দেশনা শ্রবন করে দেশ ও জাতির জন্য শান্তি এবং মঙ্গল কামনা করা হয়। আগত পূণ্যার্থীদেরকে জিলাপি বিতরন করে মিষ্টিমুখ করা হয়। সকল স্বেচ্ছাসেবক এবং ভান্তেদেরকে বহন করা গাড়ির চালকদের জন্য দুপুরের খাবার আয়োজন করা হয়।
এই অনুষ্ঠানের Gist Video সবার জন্য আপলোড করা হল। হাজার ভিক্ষুকে পিণ্ডদান ২০২২ আয়োজন কমিটির পক্ষ থেকে এবং আমার পরিবার ও ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই এবং শ্রদ্ধাচিত্তে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সবাই ভাল থাকবেন। সব্বে সত্ত্বা সুখিতা হোনতু। জগতে সকল প্রাণী সুখী হোক। বিনীত নিবেদক - ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত তালুকদার, MBA (Monash University, Australia), Former AusAID Scholar, সদস্য সচিব, হাজার ভিক্ষুকে পিণ্ডদান ২০২২ অনুষ্ঠানের আয়োজন কমিটি।
(প্রশ্ন: পিণ্ডদান কি? কেন এবং কিভাবে ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান করা হলো এবং এই কর্মের তাৎপর্য কি?
উত্তর: শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু/ভান্তে এবং শ্রমণকে যে সমস্ত খাবার সকাল ও দুপুরে দান করা হয় তাহাকে পালি ভাষায় পিণ্ডদান বলা হয়। ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান করা একটি মহৎ এবং পুণ্যের কাজ।
গৌতম বুদ্ধ জীবিতকালীন সময়ে মহাউপাসক অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠী এবং মহাউপাসিকা বিশাখা ৫০০ থেকে ১০০০ ভিক্ষুকে পিণ্ডদান করতেন যাহা বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। ভগবান বুদ্ধ অঙ্গুত্তর নিকায়ে বলেছেন ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদানের ফলে পঞ্চধর্ম বা পাঁচটি বিষয় লাভ হয় যথাঃ ১। আয়ু ২। বর্ণ ৩। সুখ ৪। বল এবং ৫। প্রজ্ঞা। যেকোন ব্যক্তি ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান করলে দেবলোকে হোক বা মনুষ্যলোকে হোক উক্ত পঞ্চধর্ম বা পাঁচটি জিনিস অবশ্যই লাভ করে থাকেন।
একজন বৌদ্ধ এবং উপাসক হিসেবে হাজার ভিক্ষুকে পিণ্ডদান ২০২২ অনুষ্ঠানটি সুসম্পন করার জন্য আমি এবং আমার পরিবার শ্রদ্ধেয় বৌধিপাল ভান্তের অভিপ্রায়, পরামর্শ ও নির্দেশনা মোতাবেক প্রধান দায়িত্বভার নিয়েছিলাম। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধেয় বিমলানন্দ মহাস্থবির, শ্রদ্ধেয় আর্যবৌধি মহাস্থবির, শ্রদ্ধেয় সুগতপ্রিয় স্থবির, বাবু চম্পানন চাকমা, বাবু সুখময় খীসা, বাবু আয়ুস কান্তি চাকমা, এবং বাবু জিতেন চাকমার নাম উল্লেখ না করলেই নয়, উক্ত অনুষ্ঠানটি সুশৃংখল ও বিনয় সম্মত ভাবে গত ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২২ সুসম্পন্ন করা হয় যাহা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে ইতিহাস রচিত হয়ে নজিরবিহীন এক ঐতিহাসিক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
হাজার ভিক্ষুকে পিণ্ডদান ২০২২ অনুষ্ঠানে প্রধান শ্রদ্ধাদানকারী ব্যাতিত দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রদ্ধাদান কারী ছিলেন না। সবাই যাতে একান্ত নিজের ইচ্ছায় বা স্বেচ্ছায় এই অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধাদান দিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই সুযোগ রাখা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য কারোর নিকট দানীয় সামগ্রী বা শ্রদ্ধাদান এর চাহিদা দেয়া হয়নি। শুধু স্বেচ্ছায় শ্রদ্ধাদান বা দানীয় সামগ্রী দিয়ে অনুষ্ঠানের এই দানকার্যে শ্রদ্ধাবান দায়ক-দায়িকারা অংশগ্রহন করেন। শুধুমাত্র ভিক্ষুসংঘকে এই অনুষ্ঠানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রণ/ফাং করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল পূণ্যার্থীবৃন্দ সম্পূর্ণভাবে নিজের ইচ্ছায় বা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেন।)
Информация по комментариям в разработке