মানুষের মাঝে বহুল প্রচলিত একটা কথা হচ্ছে, "আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়েনা" - এমন কথা ক্বুরআন বা হাদীসের কোথাও নেই। ক্বুরানে আছেঃ যদি গাছের একটা পাতা নড়ে, আল্লাহ সেটাও জানেন। মহান আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেনঃ
"তাঁরই (আল্লাহর) নিকেটে গায়েব (অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানের) চাবি রয়েছে; তিনি ব্যতীত অন্য কেউ গায়েব জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে, তা তিনিই অবগত। তাঁর অজ্ঞাতসারে (গাছের) একটি পাতাও পড়ে না, মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণা অথবা রসযুক্ত কিম্বা শুষ্ক এমন কোন বস্তু পড়ে না, যা সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) নেই।" সুরা আনআ'মঃ ৫৯।
.
আয়াতের তাফসীরঃ (সুস্পষ্ট কিতাব) বলতে ‘লাওহে মাহফূয’ বুঝানো হয়েছে। এই আয়াত থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, ‘আলেমুল গায়ব’ (অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা) কেবল মহান আল্লাহর সত্ত্বা। গায়েবের সমস্ত ভান্ডার তাঁরই কাছে। তাই কাফের, মুশরিক এবং বিরোধিতাকারীদেরকে কখন আযাব দেওয়া হবে - এর জ্ঞানও কেবল তাঁরই আছে এবং তিনি তাঁর হিকমতের দাবী অনুযায়ী এর ফায়সালা করেন। হাদীসেও এসেছে যে, গায়বের চাবি হল পাঁচটি। কিয়ামত কখন ঘটবে, বৃষ্টি কোথায় কখন হবে, মায়ের গর্ভাশয়ে কি বাচ্চা আছে, কাল কি ঘটবে এবং মৃত্যু কখন আসবে? এই পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নেই।
সহীহ বুখারীঃ তাফসীর সূরা আনআম।
উতসঃ তাফসীর আহসানুল বায়ান।
.
"আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়েনা, এই কথাটা বিশ্বাস করেনা এমন খুব কম মানুষই আছে। অথচ কথাটা মারাত্মক গোমরাহী এবং কুফুরী একটা কথা।
.
আপনি কি জানেন, কেনো এই কথাটা কুফুরী হবে?
আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়েনা, এই কথাটা যদি সত্যিই হয়, তাহলে মানুষের কি দোষ?
একটু লক্ষ্য করুন,
যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলছে, সেতো আল্লাহর হুকুমেই মিথ্যা বলছে!
যে ব্যক্তি চুরি করছে, সেতো আল্লাহর হুকুমেই চুরি করছে!
যে ব্যক্তি মদ পান করছে, সেতো আল্লাহর হুকুমেই মদ পান করছে!
যে ব্যক্তি জিনা করছে, সেতো আল্লাহর হুকুমেই জিনা করছে!
.
আর তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এই পাপ কাজের জন্যে আল্লাহ আমাদের শাস্তি দিবেন কেনো?
তিনিইতো এইগুলো করতে আমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন?
.
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, একারণেই এই কথাটা কুফুরি হবে যে, আমি ভালো কাজ করি, আর মন্দ কাজ করি, সব কিছুর হুকুমদাতা যদি হন আল্লাহ, তাহলে আমার মন্দ কাজের জন্যেওতো তিনিই দায়ী। এটাকেই বলা হয়, ‘জাবরিয়া মতবাদ’, মানে আল্লাহ বান্দার উপরে সবকিছু জোর করে চাপিয়ে দেন, বান্দা শুধু যন্ত্রের পুতুলের মতো কাজ করে যায়। অনেক পীর, ফকির, বাউল, মাজারপূজারী ইত্যাদি পথভ্রষ্ট গোমরাহকারী লোকেরাও এইরকম আকিদাহ বা বিশ্বাস রাখে। অথচ, আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে শুধুমাত্র ভালো কাজ করতে আদেশ দেন এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ করেন ন্যায় বিচার ও মানুষের সাথে ভালো আচরণ করার জন্যে, এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার জন্য। আর তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” সুরা আন-নাহলঃ ৯০।
.
প্রশ্নঃ আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না, এই কথাটা কি সঠিক?
উত্তরঃ হ্যা, এই কথাটা সঠিক। মহান আল্লাহ তাআ'লা বলেন, “তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কোন কিছু ইচ্ছাই করতে পার না।” সুরা তাকবীরঃ ১৯।
.
.
(২) আল্লাহর হুকুমের বাইরেও কিছু হয়?
উত্তরঃ আপনার, প্রশ্নটা ব্যখ্যার প্রয়োজন আছে। আল্লাহ মহিলাদেরকে আদেশ করেছেন, বাইরে বের হলে পর্দা করে বের হবে। কয়জন মুসলিম নারী এই আদেশ মানে? তাহলে এই যে তারা আদেশ অমান্য করছে, এটা কি আল্লাহর হুকুমের ভেতরে নাকি বাইরে?
আল্লাহ বান্দাকে যেই হুকুম বা আদেশ করেছেন, সেটা বান্দা মানতেও পারে, নাও মানতে পারে, তার এই ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। তবে আল্লাহ যদি কোন কিছু চান সেটা অবশ্যই হবে, তার ইচ্ছাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। অর্থাৎ, আল্লাহকে কেউ অপারগ করতে পারবেনা।
Информация по комментариям в разработке