#শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা_পাঠ/৯ম অধ্যায়/শ্লোক-(১-১০)#Gita #Ch-9#Sl(1-10)@rkmnewtown.Swami_Harimayananda
শ্রীমদ্ ভগবদ্গীতা
অনুবাদঃ স্বামী হরিময়ানন্দ
নবম অধ্যায়
রাজবিদ্যা-রাজগুহ্যযোগ
শ্রীভগবান উবাচ
[প্রভাবসহ জ্ঞানের বিষয়]
ইদং তু তে গুহ্যতমং প্রবক্ষ্যাম্যনসূয়বে।
জ্ঞান বিজ্ঞানসহিতং যজ্জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসে৳শুভাৎ।।১
অর্থ – শ্রীভগবান বললেন – তুমি দোষদর্শী নও, তাই অতি গোপনীয় বিজ্ঞান-সহিত এই পরমাত্মা ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান তোমাকে উপদেশ করব, যা জানলে তুমি সংসারবন্ধন থেকে অশুভ থেকে সদ্যই মুক্ত হবে।
রাজবিদ্যা রাজগুহ্যং পবিত্রমিদমুত্তমম্।
প্রত্যক্ষাবগমং ধর্ম্যং সুসুখং কর্তুমব্যয়ম্।।২
পদবিচ্ছেদ – ইদম্ = এই জ্ঞান, রাজবিদ্যা = সমস্ত বিদ্যার রাজা বা শ্রেষ্ঠ, রাজগুহ্যম্= অতি গুহ্য; ব্রহ্মজ্ঞ গুরুর উপদেশ ছাড়া বোধ হয় না, পবিত্রম্= অতি পবিত্র, উওমম্ =উত্তম,প্রত্যক্ষ-অবগমং= প্রত্যক্ষ ফলপ্রদ, ধর্ম্যং= ধর্মসঙ্গত, কর্তুম্=সাধন করতে,সু-সুখম্=অতি সুখসাধ্য, অব্যয়ম্ চ = এবং অক্ষয় ফলপ্রদ।
অর্থ – এই ব্রহ্মবিদ্যা সকল বিদ্যার শ্রেষ্ঠ, এবং অতি গোপনীয়,অতি উত্তম, অত্যন্ত পবিত্রকারক, প্রত্যক্ষফলপ্রদ, ধর্মসঙ্গত, অতিসুখে অনুষ্ঠেয় ও অক্ষয়ফলপ্রদ।
অশ্রদ্দধানাঃ পুরুষা ধর্মস্যাস্য পরন্তপ।
অপ্রাপ্য মাং নিবর্তন্তে মৃত্যুসংসারবর্ত্মনি।।৩
পদবিচ্ছেদ - পরন্তপ= হে পরন্তপ, অস্য =এই তত্ত্বজ্ঞানরূপ, ধর্মস্য = ধর্মে, অশ্রদ্দধানাঃ=শ্রদ্ধারহিত, পুরুষাঃ= ব্যক্তিগণ, মাম্=আমাকে, অপ্রাপ্য= না পেয়ে, মৃত্যু-সংসার-বর্ত্মনি=মৃত্যুরূপ সংসার চক্রে, নিবর্তন্তে=গমনাগমন করে।
অর্থ –হে পরন্তপ অর্জুন, আমাতে ভক্তিসংযুক্ত জ্ঞানলক্ষণ এই ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিগণ আমাকে লাভ করতে পারে না, ফলে তারা মৃত্যুময় সংসার পথে নিরন্তর গমনাগমন করে।
ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমূর্তিনা।
মৎস্থানি সর্বভূতানি না চাহং তেষ্ববস্থিতঃ।।৪
পদবিচ্ছেদ - ময়া=আমার দ্বারা, ততম্= ব্যাপ্ত, ইদম্ সর্বম= এই সকল, জগৎ =বিশ্ব, অব্যক্ত-মূর্তিনা=অব্যক্ত শক্তিরূপ, মৎস্থানি= আমাতে স্থিত আছে, সর্ব-ভূতানি= ভূতসকল, ন=না,চ=ও, অহম্=আমি, তেষু=তাদের মধ্যে, অবস্থিতঃ=অবস্থিত।
অর্থ- আমি অব্যক্তরূপ শক্তির দ্বারা এই সমস্ত জগৎ ব্যপ্ত হয়ে রয়েছি। ভূতসকল আমাতেই অবস্থান করছে, কিন্তু আমি তাদের মধ্যে অবস্থিত নই।
ন চ মৎস্থানি ভূতানি পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্।
ভূতভৃন্ন চ ভূতস্থো মমাত্মা ভূতভাবনঃ।।৫
পদবিচ্ছেদ - ভূতানি চ= ব্রহ্মা আদি ভূতগণও, ন মৎস্থানি= আমাতে অবস্থিত নয়। মে=আমার,ঐশ্বরম্=ঈশ্বরীয় প্রভাব, যোগম্=যোগমায়া,ভূতভৃৎ= ভূতগণের ধারণ-পোষণকারী, ন=নয়, চ=ও,ভূতস্থঃ=ভূত মধ্যে স্থিত, মম =আমার, আত্মা =স্বরূপশক্তি,ভূত-ভাবনঃ=ভূতগণের উৎপাদক।
অর্থ- আমি নিঃসঙ্গ বলে আমাতে ভূতগণ অবস্থান করছে না। এটি আমার ঐশীশক্তি। আমার স্বরূপশক্তি সকল ভূতের ধারক ও পালক এবং উৎপাদনের হেতু। তথাপি আমি কোন ভূতে অবস্থান করছি না।
যথাকাশস্থিতো নিত্যং বায়ুঃ সর্বত্রগো মহান্।
তথা সর্বাণি ভূতানি মৎস্থানীত্যুপধারয়।।৬
পদবিচ্ছেদ - যথা=যেমন,[আকাশ থেকে উৎপন্ন] সর্বত্রগঃ= সর্বত্র বিচরণকারী, মহান্ বায়ুঃ= মহান্ বায়ু,নিত্যম্=সর্বদা, আকাশ-স্থিতঃ= আকাশে স্থিত আছে, তথা=তেমনি[আমার সংকল্প দ্বারা উৎপন্ন বলে] সর্বাণি ভূতানি= সকল ভূত, মৎস্থানি=আমাতে স্থিত আছে, ইতি=এরূপ, উপধারয়= জানবে।
অর্থ- যেমন সর্বত্রগামী ও মহান বায়ুরাশি নিয়তই আকাশে অবস্থিত রয়েছে অথচ আকাশে সংশ্লিষ্ট নয়, তেমন সকল ভূত আমাতে অবস্থান করে রয়েছে- এটি জানবে।
[জগতের উৎপত্তির বিষয়]
সর্বভূতানি কৌন্তেয় প্রকৃতিং যান্তি মামিকাম্।
কল্পক্ষয়ে পুনস্তানি কল্পাদ্যৌ বিসৃজাম্যহম্।।৭
পদবিচ্ছেদ কৌন্তেয়= হে কুন্তিনন্দন, কল্পক্ষয়ে= কল্পের শেষে, সর্বভূতানি= ভূত সকল, মামিকাম্=আমার, প্রকৃতিং যান্তি =প্রকৃতিতে লয় হয়, কল্পাদ্যৌ=কল্পের আদিতে,তানি= তাদের অহম্=আমি পুনঃ=পুনরায়, বিসৃজামি= সৃষ্টি করে থাকি।
অর্থ- হে কুন্তীপুত্র অর্জুন, প্রলয়কালে সকল ভূতগণই আমার প্রকৃতিতে লীন হয়, এবং পুনরায় সৃষ্টিকালে আমিই সেই সকলকে প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্টি করে থাকি ।
প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য বিসৃজামি পুনঃ পুনঃ।
ভূতগ্রামমিমং কৃৎস্নমবশং প্রকৃতের্বশাৎ।।৮
পদবিচ্ছেদ - স্বাম্= নিজের , প্রকৃতিম্=ত্রিগুণময়ী মায়াকে, অবষ্টভ্য= বশীভূত করে, বিসৃজামি=সৃষ্টি করি, পুনঃ পুনঃ =বারংবার, ভূতগ্রামম্= ভূত সকল, ইমম্=এই, কৃৎস্নম্=সমগ্র, প্রকৃতেঃ বশাৎ= প্রকৃতির বশীভুত, অবশম্= পরাধীন।
অর্থ- আমি নিজ মায়াশক্তিতে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রকৃতিবশীভূত এই সমস্ত ভূতগণকে বার বার সৃষ্টি করি।
ন চ মাং তানি কর্মাণি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয়।
উদাসীনবদাসীনমসক্তং তেষু কর্মসু।।৯
পদবিচ্ছেদ- ন=না, চ=ও, মাম্=আমাকে, তানি কর্মাণি= এই সকল কর্ম, নিবধ্নন্তি=আবদ্ধ করতে, ধনঞ্জয়=হে ধনঞ্জয়,উদাসীনবৎ=উদাসীনের মত,আসীনম্=অবস্থিত, অসক্তম্=আসক্তি রহিত, তেষু কর্মষু=সে সব কর্মে।
অর্থ- হে ধনঞ্জয়, সেই সকল জগৎ সৃষ্টি প্রভৃতি কর্মে আমি আসক্তি রহিত, উদাসীনের মত অবস্থিত, সেই সব কর্ম আমাকে আবদ্ধ করতে পারে না।
ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূয়তে সচরাচরম্।
হেতুনানেন কৌন্তেয় জগদ্বিপরিবর্ততে।।১০
পদবিচ্ছেদ- ময়া=আমার দ্বারা, অধ্যক্ষেণ=অধিষ্ঠানের জন্
অর্থ- হে কৌন্তেয়, প্রকৃতি আমার অধিষ্ঠানমাত্র লাভ করে এই বিশ্ব চরাচর সৃষ্টি করছে। আমার অধিষ্ঠান নিমিত্তই এই জগৎ সৃষ্টি ও প্রলয়রূপ চক্র পরিবর্তিত হচ্ছে।
Информация по комментариям в разработке