ক্রিয়েটিনিন কিঃ ক্রিয়েটিনিন হচ্ছে মাংসপেশির ক্রিয়েটিন ফসফেট ভেঙে তৈরী হওয়া উৎপাদ। এটা শরীরে সর্বদা একটা নির্দিষ্ট অনুপাতে তৈরী হতে থাকে। তবে এটা পেশীর ভর বা ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। মানবশরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল পরিমাপ করে চিকিৎসকগন বুঝতে পারে যে আপনার কিডনি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। অর্থাৎ কিডনির এই ফিল্টারিং কার্যক্রম যথাযথ ভাবে চলছে কিনা তা পরীক্ষা করা যায়। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হয় তাহলে আপনার কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে?
আপনার কিডনিতে কোন সমস্যা দেখা দিলে কিডনি তখন তার স্বাভাবিক ফিল্টার করার কাজ সম্পাদানে ব্যর্থ হয়। তখন রক্ত কিডনি দিয়ে অতিবাহিত হওয়ার সময় ক্রিয়েটিনিন রক্ত থেকে আলাদা হতে পারে না। ফলে তা রক্তেই থেকে যায় এবং এর দ্বারা রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বেড়ে যায়।
রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?
রক্তে ক্রিয়েটিনিন প্রতি ডেসিলিটারে কত মিলিগ্রাম থাকে সে হিসাবে পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ, মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার হিসাবে। তবে, যারা মাসল ম্যান বা যাদের শরীরে মাংসপেশী অধিক থাকে তাদের ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেশী থাকতে পারে। তাছাড়া, বয়স এবং লিঙ্গ ভেদে মানুষের রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল কম বেশী হতে পারে।সাধারণ ভাবে, পুরুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ০.৯ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার থেকে ১.৩ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অপরদিকে, মহিলার বেলায় তা ০.৬ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার থেকে ১.১ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে, উপরোক্ত লেভেল ঐ সব পুরুষ বা মহিলার বেলায় হবে যাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ মধ্যে হবে। ষাটোর্ধ মানুষের ক্ষেত্রে এই মাত্রা কিছুটা বেশী হতে পারে।
রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ক্রিয়েটিনিন এর উপস্থিতি বলে দেয় যে কিডনি তার স্বাভাবিক কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। যা ঠিক মত কাজ করতে পারছে না। তবে, নিচের রোগ সমূহের কারণে ক্রিয়েটিনিন এর পরিমান কিছুটা বেশী হতে পারে –
মুত্র নালীতে ব্লক থাকলে
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে
পানিশূণ্যতা হলে
কিডনিতে ইনফেকশন থাকলে, ইত্যাদি।
আপনার রক্তে যদি অধিক পরিমানে ক্রিয়েটিনিন ধরা পড়ে তাহলে যে কারণে এটি হয়েছে তা সর্বপ্রথম চিহ্নিত করতে হবে। তারপর, সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে তা স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসতে পারে।
আপনাদের জন্যই চ্যানেলের সকল কর্মকান্ড আসুন পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ কি কি?
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হিসাবে নিচের উপস্বর্গগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন-
ঘুমের সমস্যা হলে
ক্ষুধামন্দা সৃষ্টি হলে
মুখ মন্ডল, হাতের কব্জি, পা এবং পেটের চারপাশে ফুলে গেলে
কোমরের উপরে যেখানে কিডনি অবস্থান করে সেখানে ব্যথা অনুভুত হলে
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হলে এবং প্রস্রাবের পরিমান পরিবর্তন হলে
চোখের নিচের অংশ ফুলে গেলে
বমি বমি ভাব মনে হলে
বমি হলে, ইত্যাদি।
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?
এটি আসলে সে ভাবে বলার সুযোগ নেই। আপনার চিকিৎসক আপনার সার্বিক অবস্থা বিচার করে ক্রিয়েটিনিন ছাড়াও আরোও বেশ কিছু পরীক্ষা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে, সাধারণত: দেখা যায়, যাদের কিডনি ফাংশন কমতে কমতে ১৫% বা তারও কমে গিয়ে দাড়ায়, তখন ডায়ালাইসিস করতে দেখা যায়। যা কিডনি ফাংশন হ্রাসের পাঁচটি ধাপের মধ্যে সর্ব শেষের ধাপ হিসাবে পরিগনিত।
আপনাদের জন্যই চ্যানেলের সকল কর্মকান্ড আসুন পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে কি হয়?
রক্তে যখন ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি হয়ে যায়, তখন আমাদের অবশ্যই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা উচিত। অনেকেই ভুল করে থাকেন, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে প্রথম দিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। না দেওয়ার কারণে এই ক্রিয়েটিনিনের মাত্রাটা বেড়ে দেখা যায়, যখন অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন তাঁর কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায় এবং কিডনির প্রধান সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। এ কারণে আমাদের সবার আগে চেষ্টা করতে হবে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অবশ্যই ১.২-এর নিচে রাখতে। ১.২ যখন ক্রস করে যাচ্ছে, তখনই আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন ক্রিয়েটিনিন আর বেড়ে না যায়।
রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে গেলে কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করতে হবে?
এই সময় আমাদের পটাসিয়ামযুক্ত খাবার, ফসফরাসযুক্ত খাবার এবং সোডিয়ামযুক্ত খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে বলা হয়ে থাকে। যে ধরনের খাবারে পটাসিয়ামের মাত্রা কম আছে, সেগুলোকে গ্রহণ করতে বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা প্রতিদিন যে খাবার গ্রহণ করছি, সে খাবারের মধ্যে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি চলে যাচ্ছে।
আলুর মধ্যে অনেক পটাসিয়াম থাকে। এটার দিকে অনেকে নজর দেন না। অধিকাংশ মানুষ মনে করে থাকে, ডাল বা ডালযুক্ত খাবার বন্ধ করে দিলে বা প্রোটিন গ্রহণ কম করলে এটা ঠিক হয়ে যাবে। এটা তো অবশ্যই মেইনটেইন করতে হবে, পাশাপাশি কিন্তু আরও যে খাবার আছে, সেগুলো নিষেধ করে দিতে হবে বা আমাদের এগুলোকে মেইনটেইন করতে হবে। যেমন আলুর নামটা বলেছি। এ ছাড়া শিম, বরবটি, পেঁপে, মূলা, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, কলিজা, গরুর মাংস, যে কোনও ডাল বা ডালের তৈরি যে কোনও খাবার—যাঁদের রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ১.২-এর ওপরে চলে গেছে, তাঁদের অবশ্যই এ খাবারগুলো বন্ধ করতে হবে।
আপনাদের জন্যই চ্যানেলের সকল কর্মকান্ড আসুন পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন
Информация по комментариям в разработке