অভিমানের অন্তরালে ভালোবাসা একটি রোমান্টিক গল্প। এখানে হাসি কান্না অভিমান ঝগড়া সব কিছুই বিদ্যমান।
নীল রঙা আসমানটার সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাদা মেঘের ভেলা ভাসমান। খুব সূক্ষ্ম নজরে খেয়াল করলে, সাদা মেঘ খন্ডের গতিময়তার ব্যাপারটা চোখে পড়ে। ধীর আন্দোলনে একেকটা মেঘ খন্ড যেন অবিরাম চলছে, গন্তব্যহীন কোনো পথে। সফেদ রঙা তুলোর মতো মেঘগুলোর এহেন মনোমুগ্ধকর চলন্ত রূপ দেখে হাত বাড়িয়ে, উচ্ছ্বল কিশোরীর ন্যায় ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে তা।
কিশোরী মনের আবেগে ভেসে গিয়ে, দ্বিগিদ্বিক ছুটে স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে সেই নীলাভ আসমানটাকে। কিন্তু তা ছোঁয়ার সাধ্য তো মনুষ্যকূলের একদম নেই, আর না আছে সেখানে পৌঁছানোর কোনো ক্ষমতা। তবুও মনে ইচ্ছে জাগে সুদূর বিস্তৃত গগনটাকে একটুখানি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে… শুধু একটুখানি ছুঁয়ে মন প্রফুল্লকর আদুরে মায়ায় মিশে যেতে।
মনের এমন অবান্তর সব ভাবনায় ঠোঁট এলিয়ে হেসে ফেলে আদ্রিতা। মুহূর্তেই আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, নিজের ভাবনার লাগাম টানে সে। ইতিমধ্যে চোখদুটো অশ্রুতে টলমল তার। সময়টা দুপুর। মধ্যদুপুরের রৌদ্রজ্জ্বল আকাশপানে দীর্ঘক্ষণ চেয়ে থাকার দরুন, চোখ থেকে আপনাআপনি জল গড়িয়েছে তার।
মাথা নুইয়ে, ডানহাতের কনিষ্ঠ অঙ্গুলি দিয়ে সেই জলটুকু মুছে নিয়ে, মিষ্টি করে হাসে আদ্রিতা। আজ তার মনের আনাছে-কানাছে খুশির জোয়াড়। আনন্দে পুলকিত হয়ে চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে তার। ক্ষণে ক্ষণে আবার অদ্ভুত উৎকন্ঠায় এবং অস্থিরতায় মুষড়ে উঠছে। হৃৎপিন্ড স্পন্দিত হচ্ছে তুমুল বেগে। ঢোক গিলেও, ভেতরের অস্থির যন্ত্রটাকে থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে সে।
হাঁসফাঁস করে জানালা থেকে সরে দাঁড়িয়ে, অস্থির পদচারণে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো আদ্রিতা। পলক ঝাপটিয়ে, নিজ প্রতিবিম্বের দিকে একবার চেয়ে লাজুক হাসলো সে। প্রিয় মানুষটার পছন্দের রঙে সজ্জিত করেছে আজ নিজেকে। কালো ও সাদার মিশ্রণে লং সালোয়ার-কামিজ গায়ে জড়িয়েছে। জামার সঙ্গে ম্যাচিং করে কানের দুল ও হাতে চুড়ি পরেছে।
গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা বিধায়, মুখে সামান্য পাউডার ব্যতীত অন্য কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করেনি। কোমর সমান চুলগুলো সদ্যস্নানে ভেজা থাকায় ছেড়ে রাখা। ঠোঁটদুটো টিপে লাজুক নয়নে আবারও চাইলো সে আয়নার দিকে। খানিক চেয়ে থাকলে, নিজের শুষ্ক ঠোঁটজোড়া নজরে পড়ে তার। শুষ্ক হয়ে থাকা ওষ্ঠদ্বয়কে নমনীয় করতে, লিপ বাম লাগিয়ে নিল তৎক্ষণাৎ।
মাথায় ওড়না দিতে গিয়েও দিল না। নিজের বাড়িতে ঘোমটা দিয়ে এরূপ বউ সেজে থাকলে সবাই কি ভাববে? তাকে নিশ্চয়ই ক্ষেপাতে ভুলবেনা কেউ। মুহূর্তেই মুখটা ভোঁতা করে, এদিক-ওদিক পায়চারি শুরু করে দিল আদ্রিতা। মানুষটা কখন আসবে? আর যে দেরি সহ্য হচ্ছে না।
প্রায় ছয় বছর পর বাসায় ফিরছে সে। এখনও কি আগের মতোই আছে? অবশ্য, আগের মতো নেই! যেটা ফোনে ছবি দেখেই কিছুটা বুঝেছে সে। মানুষটার চেহারা, চাল-চলন, কথা-বার্তায়ও নাকি বিশাল পরিবর্তন এসেছে, এরকমই শুনেছে সে।
তবে আদ্রিতার এসব বিশ্বাস হয় না। চেহারার পরিবর্তন লক্ষ্য করলেও, লোকটার আবেগ, অনুভূতি এবং ব্যবহারের নিশ্চয়ই পরিবর্তন হবেনা। এরকমটা সম্ভব নয়, একদম না। আদ্রিতা নিজের মনকে এসব বলে বোঝ দেয়, তবুও মনটা কিছুতেই বোঝে না, উল্টো খচখচ করে ভীষণ পীড়া দেয় তাকে।
লোকটা যদি পূর্বের সব অনুভূতি ভুলে বসে, তাহলে তার কি হবে? তাকে ঘিরেই তো সমস্ত অনুভূতি তার… দিনরাত নিত্যনতুন স্বপ্ন বুনে, নিজের সেই স্বপ্নপুরুষকে নিয়ে। এখন বড্ড আফসোস হয়! কেন সে এত অবুঝ ছিল তখন? কেন বুঝতে পারেনি তখন আদীবের অনুভূতিময় একেকটি বাক্য!
চোখ-মুখ কুঁচকে, আদ্রিতা যখন নিজের দুঃখবিলাসে মগ্ন, তখনই বাহির থেকে আমেজপূর্ণ আওয়াজ ভেসে আসে। আদ্রিতা সচকিত হয়, নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠে ক্রমান্বয়ে। অশান্ত নিশ্বাস ছেড়ে, দরজার দিকে চেয়ে রয়। পরক্ষণে, তার রুমের দরজার সামনে নিজেরই ছোটভাই আরাফের উচ্ছ্বসিত গলা শুনে চমকে উঠে,
"আপু, আদীব ভাইয়া এসেছে। জলদি আসো।"
আদ্রিতা স্থির হয়ে রয়। স্তব্ধ ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকে ক্ষণকাল। এতক্ষণ মানুষটার আসা নিয়ে ছটফট করলেও, এখন বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। সর্বাঙ্গে এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। লাজে মূর্ছা যাচ্ছে সে।
কি করে মুখোমুখি হবে লোকটার? এতবছর পর তাকে দেখে কেমন রিয়াকশন দেবে আদীব? পূর্বের রাগ কি এখনো মনে পুষে রেখেছে সে? নাকি সব ভুলে, নতুন আদীব রূপে ফিরে এসেছে? এত দোটানা কেন হচ্ছে তার! কেন মনে হচ্ছে লোকটা তাকে দেখে খুশি হবেনা, এড়িয়ে চলবে তাকে! এসব ভেবে আদ্রিতার মনটা খুব খারাপ হয়।
নিজের প্রতি বিরক্তি নিয়েই মলিন মুখে, নিজ রুম থেকে বের হয়। সিঁড়ির কাছাকাছি এসে থমকে দাঁড়িয়ে, নিচে উঁকি দিয়ে আদীবকে খোঁজার চেষ্টা চালায়। মুহূর্তে, পেয়েও যায়। লোকটা স্যুট, বুট পরে সোফায় বসে আছে, আর তাকে ঘিরে পরিবারের সকলেই দাঁড়িয়ে আছে। সকলের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছে সে। সেই হাসির পানে চেয়েই আদ্রিতার বুকে কম্পন শুরু হলো।
দুরুদুরু বুকে, চোরাদৃষ্টিতে কয়েক পল তাকালো তার দিকে। উজ্জ্বল শ্যামরঙা গায়ের রঙ, গাঢ় পল্লববিশিষ্ট দুটো চোখ, সরু নাসিকা, রক্তাভ ঠোঁটদুটো আগের মতোই আছে। নতুন হিসেবে সংযোজন হয়েছে গালের খোঁচা-খোঁচা চাপ দাড়ি, আর গায়ের রঙটাও আগের চেয়ে উজ্জ্বল লাগছে।
স্বচ্ছ হাসিতে দশ বছর বয়সী আরাফকে কোলে নিয়ে আদর করছে সে। আর সেটা বিমুগ্ধ নয়নে ফ্যালফ্যাল করে দেখছে আদ্রিতা। কে বলে তার আদীব ভাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে? সে তো দেখছে... আগের মতোই আছে লোকটা। পূর্বেকার দিনের মতোই প্রাণবন্ত হাসছে সে।
হঠাৎ মনে খটকা লাগলো আদ্রিতার। আদীব সবার সাথে যে ব্যবহারটা করছে, তার সাথেও কি এমন করবে? নাকি পূর্বের ঘটনার রেশ ধরে, পরপর নজরে দেখবে! এসব ভেবে ফের মন খারাপ হলো তার।
#golpo #romantic #valobasar_status #গল্প #রোমান্টিক #love #গল্পের_ঝুলি #ভালোবাসার_গল্প #lovestory #story #motivational #ভূতের_গল্প
Информация по комментариям в разработке