Скачать или смотреть Language movement - ভাষা আন্দোলন

*ভাষা আন্দোলন* বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল। এটি বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হিসেবে পরিচিত। ভাষা আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া। এটি ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর থেকেই শুরু হয় এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়, এবং এটি পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) তখন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে সমগ্র পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে, যা পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগণের জন্য একটি বড় অবিচার হিসেবে দেখা দেয়। কারণ পূর্ব বাংলার প্রায় সব মানুষ বাংলায় কথা বলত।

ভাষা আন্দোলনের প্রধান ধাপসমূহ

1. **১৯৪৮ সালের ভাষা সংকট**: ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, "উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"। এই ঘোষণায় পূর্ব বাংলায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ করতে শুরু করে।

2. **১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন**: আন্দোলন ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিল করে। পাকিস্তানি পুলিশ এই মিছিলের ওপর গুলি চালায়, যার ফলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন শহীদ হন।

3. **বিজয় এবং স্বীকৃতি**: বাঙালির রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে সংবিধানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

ভাষা আন্দোলনের প্রভাব

ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তি স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি পালিত হয়।

ভাষা আন্দোলন বাঙালির সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক জীবনে একটি মাইলফলক। এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়, ভাষার অধিকার এবং সংস্কৃতি রক্ষার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।