❝ নামাজ ❞
-------
সকাল থেকে সন্ধ্যা, আর সন্ধ্যা থেকে সকাল অবধি আমরা অসংখ্য জরুরি ও অজরুরি, দুনিয়াবি ও আখেরাতের কাজে ব্যস্ত থাকি। যদি এ কাজগুলোর তুলনা করি, তবে সূর্যের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠবে—এসবের মধ্যে নামাজই সবচেয়ে মহিমান্বিত, নামাজই জীবনের মূল সত্তা, আর দাসত্বের নির্যাস। নামাজে অতিবাহিত প্রতিটি মুহূর্ত দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে বহু গুণে শ্রেষ্ঠ। নামাজি পৃথিবীতে আল্লাহর দলিলস্বরূপ হয়ে ওঠে, আর আল্লাহর হুকুমেই তার মুখ কথা বলে।
কিছু নেক আমলের ব্যাপারে আল্লাহর কিতাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, এগুলো পালনকারীদের সঙ্গেই আল্লাহ থাকেন। যেমন—
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন”,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গে আছেন”,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন”।
কিন্তু নামাজের ক্ষেত্রে এ রকম কোনো বাক্য কোথাও নেই যে—“আল্লাহ নামাজিদের সঙ্গে আছেন”। কারণ নামাজের অর্থই হলো আল্লাহর সঙ্গ। এক আয়াতে এসেছে—“আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ করো”। এখানে “আল্লাহর সাহায্য” বলতে বোঝানো হয়েছে নামাজকে, যার বিস্তারিত অন্য আয়াতগুলোতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যে নামাজকে আল্লাহ থেকে আলাদা কোনো ব্যাপার মনে করে, সে অন্তঃদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত, বোধবুদ্ধিহীন। সে কুফরের আসল অর্থের কাছাকাছি, আর ঈমানের আসল অর্থ থেকে অনেক দূরে।
নামাজের পুরো কাঠামোই আল্লাহর সঙ্গের সাক্ষ্য বহন করে। নামাজের ভেতরের দিক আল্লাহর সান্নিধ্য আর তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ কথোপকথন। নামাজের বাইরের দিক হলো পবিত্রতা, আনুগত্য আর আধ্যাত্মিক ঔজ্জ্বল্য। এ দুনিয়ায় কোনো জিনিস নেই যার ভেতর ও বাহির সমান। শুধু নামাজই সেই মর্যাদা পেয়েছে, যে দিক থেকে তাকানো হোক না কেন—একই রকম ঐশী একাত্মতা প্রকাশ পায়, রবের রহমত বিকশিত হয়, সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা ছায়া বিস্তার করে। নামাজে দাঁড়ানো মানুষ তার রবের সামনে উপস্থিত হয়, তার অন্তরে উচ্ছ্বাস জাগে, হৃদয়ের ভেতর আলোকোজ্জ্বল প্রদীপ জ্বলে ওঠে, তার বুদ্ধি শয়তানের ধোঁকা থেকে সুরক্ষিত থাকে।
নামাজির মর্যাদা কী?
সবচেয়ে দামী জিনিসও তার চেয়ে তুচ্ছ। সে যেন আরশে মওলার প্রতিবেশী, আর বাকি সবকিছু নিছক পৃথিবীর স্থলভাগ। নামাজ চরিত্রকে উন্নত করে, পাপকে দূর করে। অথচ আমরা মসজিদ ধ্বংসের কথা শুনে সহ্য করতে পারি না, কিন্তু নিজেদের নামাজ নষ্ট করে দিচ্ছি—তবুও কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। মসজিদ পুনরুদ্ধারের জন্য যেমন আমরা উদ্বিগ্ন হই, যদি তার একটুখানি উদ্বেগও নামাজ রক্ষায় থাকত!
যদি আমরা নামাজের প্রতি মনোযোগী হই, তবে অন্য জাতিগুলো নিজেরাই আমাদের বলবে—“এই নাও আমাদের উপাসনালয়, তোমরা এগুলো গ্রহণ করো, আর পূর্ণ করো। কারণ তোমাদের নামাজই তোমাদের ধর্মের সত্যতার সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য।” নামাজের বাহ্যিকতা ও আন্তরিকতা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করে—এটাই সত্যবাদীদের উপাসনার পদ্ধতি।
আমরা প্রায়ই বলি—রাজনৈতিকভাবে আমরা এতটাই দুর্বল যে ইসলাম কায়েম করতে পারছি না। কিন্তু একটু ভাবুন, নামাজ অবহেলার দায় কাকে দেব? নামাজ কি আল্লাহর সবচেয়ে বড় হুকুম নয়? নামাজ পড়েও কি অপমানিত হওয়া যায়? নবীদের সংগ্রামের সূচনা কি অন্য কিছু দিয়ে হয়েছিল, নাকি নামাজ দিয়েই হয়েছিল?
নামাজই জাতিগুলোকে দুর্বলতা থেকে উত্তোলন করেছে, সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃঢ়তা দিয়েছে। আসল কথা হলো—নামাজ এত মহান যে, এসব কিছুই এর মর্যাদা বাড়ায় না। নামাজ পড়তে গিয়ে যদি সম্পদ ও রাজত্ব চলে যায়, যাক—কারণ যার নামাজ আছে, তার আর কী অভাব রইল?
নামাজের সৌন্দর্য ও প্রভাব
যখন আমি কাউকে নামাজ পড়তে দেখি, তার প্রতি হৃদয়ে ভালোবাসা বেড়ে যায়, মন চায় তাকে চুমু দিই, মাথায় তুলে রাখি। নামাজিদের সান্নিধ্যে এমন এক সুগন্ধ পাই যা ভাষায় প্রকাশের বাইরে। আল্লাহর তাসবিহ ও তাসদীস আমার কাছে কতই না প্রিয়! আর যখন সেই পরিবেশ নামাজে ফুটে ওঠে, তখন আত্মা কেঁপে ওঠে।
যদি মানুষের এমন কোনো অবস্থা থাকে, যা ফেরেশতাদের অবস্থাকেও ছাড়িয়ে যায়, তবে তা হলো—নামাজের অবস্থা।
মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান
হে আমার মুসলিম ভাইয়েরা! গাফিল ও মত্ত জীবনের পথ ছেড়ে দাও। নামাজের দিকে ফিরে আসো—কারণ দাসত্বের ভিত্তি হলো নামাজ। যে নামাজ পড়েছে, সে কখনো বঞ্চিত হয়নি।
কোরআনে যেখানে-যেখানেই মুসলমানদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রথমেই নামাজের উল্লেখ আছে। যেখানে জান্নাতিদের গুণাবলি বলা হয়েছে, সবার আগে বলা হয়েছে নামাজ পড়ার কথা। আর যেখানে জাহান্নামিদের কথা এসেছে, সেখানে বিশেষভাবে বলা হয়েছে নামাজ ত্যাগ ও অবহেলার কথা।
আমি ছোটবেলায় আমার গ্রামে হাঁটতে-চলতে প্রায়ই গুনগুন করতাম শায়খ সাদীর এ কবিতা—
“কিয়ামতের কঠিন দিনে
প্রথম প্রশ্নই হবে নামাজ নিয়ে।”
যে নামাজ পড়ে না, তাকে কি মুসলমান বলা যায়? নামাজ ছাড়া কোনো ইসলাম নেই—না কিতাবুল্লাহতে, না নবীদের সুন্নতে, না সাহাবা ও সলফে সালেহীনের জীবনে। তাঁদেরকে নামাজই উঁচুতে তুলেছিল, আমরাও নামাজ দিয়েই উন্নত হব।
মানবিক পূর্ণতা নামাজেই নিহিত। সব গুণাবলি ও শ্রেষ্ঠত্ব নামাজেই নির্ভরশীল। ত্যাগ ও নির্লিপ্ততা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, ধৈর্য ও সহনশীলতা, দয়া ও দানশীলতা, নিঃস্বার্থতা ও বিনয়, সাহস ও বীরত্ব—সবই এ বরকতময় বৃক্ষের শাখাপ্রশাখা। নামাজের ফলফলই আখেরাতের সান্নিধ্যের মূল সম্পদ।
যে স্থান নামাজে মুখরিত হয়, তা আকাশের হিংসার কারণ হয়ে ওঠে, বরং জান্নাতের বাগিচারই প্রতিচ্ছবি হয়ে যায়।
সেজদার প্রেমে মগ্ন হয়ে আমি এক দরবার খুঁজে পেয়েছি,
যেন একটুখানি জমিনকে আকাশের সমান মর্যাদা দেওয়া হলো।
খাতা-কলমের অসংখ্য দফতর কালো হয়ে যাক,
তবুও নামাজের গুণগান কখনো পূর্ণ হতে পারবে না।
আমরা কে? আমাদের আসলেই কী গুরুত্ব?
যদি সব নবী, তাঁদের সাহাবিগণ, সব সিদ্দীক ও# সালেহীন,
এমনকি সকল ফেরেশতা, যারা আরশের কাছাকাছি,
মিলেও নামাজের ফজিলত বর্ণনা করেন,
তবুও নামাজ এর চেয়ে অনেক বেশি মহান ও উচ্চমর্যাদারই থেকে যাবে।
“মজলিস শেষ হয়ে গেল, জীবনও শেষপ্রায়,
কিন্তু আমরা এখনো তোমার বর্ণনার শুরুতেই রয়ে গেছি।”
--------------------
#ভিডিওটি_ভালো_লাগলে_অবশ্যই_চ্যানেলটি_সাবস্ক্রাইব_করবেন_
#ভাইরাল_ভিডিও
#kamruljaman920
Информация по комментариям в разработке