দেবতাখুম বান্দরবানের ভ্রমণচিত্র। BLOG - 2। Devotakum Bandarban। Chittagong

Описание к видео দেবতাখুম বান্দরবানের ভ্রমণচিত্র। BLOG - 2। Devotakum Bandarban। Chittagong

অনেককাল আগের কথা। ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তারাছা খালের ঝিরিপথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। গভীর আর বুনো অরণ্যে ঘেরা এই খুম থেকে যদি বেশি মাছ পাওয়া যায়, এই আশায়। বৃদ্ধ কখন যে খুমের একদম গভীরে বিশাল এক পাথরের কাছে চলে এসেছে, বলতেই পারবে না। মাছ ধরার ফাঁকে হঠাৎ করেই দৈত্যাকৃতির এক কচ্ছপ দেখে ভয়ে নিজের প্রাণ নিয়ে দৌড়ে পালায় সে। শীলবাধা পাড়াতে ফিরে এসে বৃদ্ধের প্রচণ্ড জ্বর আসে রাতে। ঘুমের ঘোরে সে স্বপ্নে দেখে সেই কচ্ছপ তাকে বলছে,

পাহাড়ের বুকে মারমাদের বসবাস। তাদের আবাসভূমির উপর দিয়েই পর্যটকদের পদচারণা। পাহাড়ি মানুষগুলোর বাড়ির উঠোন ধরে এগোলেই পাওয়া যায় গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকা দেবতাখুম। শীলবাধা পাড়ার বেশিরভাগ ঘরগুলো মাটি থেকে দুই ফুট উপরে অবস্থিত। এটিই হয়তো তাদের ঘর তৈরির নিয়ম। পর্যটকদের ক্যামেরায় হরহামেশাই বন্দি হয় এই ঘরগুলো। অথচ যাদের ঘর নিয়ে পর্যটকদের এত উন্মাদনা, তাদের নেই পর্যটকদের নিয়ে তেমন আগ্রহ। স্থানীয় মারমা সদস্যরা নিজেদের কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন।

দেবতাখুম বান্দরবানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত স্থান পর্যটকদের কাছে। দেবতাখুম ভ্রমণে শুরু থেকে রোমাঞ্চ হাতছানি দিয়ে যায়। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু পথ দিয়ে চান্দের গাড়ির যাত্রায় শান্ত প্রকৃতি পর্যটকদের অন্তরে সুখের পরশ বুলিয়ে দেয়। বান্দরবান শহর থেকে প্রথমেই রোয়াংছড়ি পৌঁছাতে হয়। সেখানে দর্শনার্থীদের নাম-ঠিকানা জমা করতে হয় রোয়াংছড়ি থানায়। সকলের জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে ভ্রমণ আবশ্যক। দেবতাখুম ভ্রমণে গাইড ছাড়া এক পা-ও এগোতে দেবে না স্থানীয় প্রশাসন। রোয়াংছড়ি থানায় নাম-ঠিকানা জমা দেওয়ার পর কচ্ছপতলী বাজারে লিরাগাঁও সেনাবাহিনী ক্যাম্পে আবারও জমা করতে হয় দর্শনার্থীদের নাম-ঠিকানা।
সেনাবাহিনীর কাছে চেক ইন করার পর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দুপুরের খাবার আপনি কচ্ছপতলী বাজারে খাবেন, নাকি দেবতাখুমের পথে পাহাড়িদের বাড়িতে। অনেকেই স্থানীয়দের হাতে তৈরী রান্না খেতে ভালোবাসেন। পাহাড়ি জুমের তৈরী চাল, লাল মুরগির সমন্বয়ে সুস্বাদু খাবারের আয়োজন থাকে সেখানে। এক্ষেত্রে গাইডের সাথে আলোচনা করে রাখবেন আগে আগেই। গাইডই সব ব্যবস্থা করে দেবে। গাইডের নির্দেশনানুযায়ী ভ্রমণ করলে দেবতাখুম সফর অনেকখানি সাবলীল হয়ে যায় পর্যটকদের। বলে রাখা ভালো, দুপুর ১২টার মধ্যেই রোয়াংছড়ি থানা ও কচ্ছপতলী বাজারের লিরাগাঁও সেনাবাহিনী ক্যাম্পে চেক ইন কর‍তে হবে।

বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি মাত্র ঘণ্টাখানেকের পথ। পথিমধ্যে যতদূর চোখ যায়, রাস্তার দু'ধারে ধরা পড়ে ঢেউ খেলানো অসংখ্য পাহাড়। দিগন্তবিস্তৃত উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়ে ঘিরে থাকা অঞ্চল তার বিশালতা প্রমাণ করে। পাহাড়ের চূড়ায় গুচ্ছাকারে কিছু জমে থাকা থাকা মেঘ ধরা পড়ে চোখে। নীলগিরির পথের মতো স্বচ্ছ মেঘ এখানে খালি চোখে ধরা না দিলেও সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় সামান্য মেঘের স্তুপ ভ্রমণে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। চান্দের গাড়িতে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করলে ৩৬০ ডিগ্রি প্রাকৃতিক দৃশ্যের অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়। পাহাড়ি লোকেদের পরিশ্রমের প্রমাণ পাওয়া যায় পাহাড়ের বুকে বেড়ে ওঠা কলাগাছ, আখ, জুম চাষের ক্ষেত দেখে।

আখকে মারমা ভাষায় 'ক্র‍্যাং' বলা হয়ে থাকে। পাহাড়ের বুকে চাষাবাদ হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কাজ। মারমা নারী-পুরুষ উভয়েই চাষাবাদের কাজ করে থাকে। বলিষ্ঠ শরীরে ক্লান্তিহীন পরিশ্রমে দিনাতিপাত তাদের। তাদের কাছে জীবন মানেই পাহাড়-ঝিরি-চাষাবাদ। দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষদের জীবনের চেয়ে তাদের জীবন একেবারেই ভিন্ন।

কচ্ছপতলী বাজার থেকে দেবতাখুম পৌঁছানোর রাস্তা দুটি। আপনি যদি রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চান, তাহলে পাহাড়ি পথে পা বাড়াবেন আর যদি শারীরিক পরিশ্রমকে কাছে না টেনে স্বস্তি চান, তাহলে ঝিরিপথে যাওয়াই মঙ্গল। পাহাড়ি পথের যাত্রায় একদম প্রথম কদম থেকেই আপনাকে তীব্র শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। দীর্ঘদিনের জং ধরে থাকা শরীর আপনার মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ক্লান্তি ধরিয়ে দেবে। সুবিশাল উঁচু পাহাড়ে প্রতি পদে পদে আপনার শারীরিক সক্ষমতার কঠিন পরীক্ষা হবে। একে একে তিনটি পাহাড় মাড়াতে হবে। পাহাড়ের বুকে বেড়ে ওঠা গাছ ও সবুজ দৃশ্য আপনার মানসিক মনোবল বৃদ্ধি করবে সামনে এগোতে।

পরপর তিনটি পাহাড় পেরিয়ে আপনার উপলব্ধি হবে, পর্যটক ও স্থানীয় মারমা সম্প্রদায়ের কৃষিকাজ করা ব্যক্তিদের পদচারণায় পাহাড়ের বুকে মাটি অনেকখানি সিঁড়িতে রূপ নিয়েছে। এই সিঁড়িরূপী পাহাড়ি মাটি সামনের পথেও বন্ধু হয়ে দেখা দেবে। একধাপ-দু'ধাপ করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে এগোবেন নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে। কয়েক প্রজাতির পাখি ও গাছের সংমিশ্রণে দেবতাখুমের যাত্রাপথ সমৃদ্ধ। আমাদের গাইড উল্লাসদা সর্বদাই সামনে এগিয়ে। শক্তিতে তিনি আমাদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। পঞ্চাশ মিনিটের অধিক সময় পাহাড়ি পথ পেরিয়ে আমরা দেখা পেয়েছিলাম প্রথম ঝিরিপথের। ঝিরির পানির স্রোত শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট করলেও মানসিক তৃপ্তি উপহার দেবে তার হিমশীতল বৈশিষ্ট্যে। ঝিরিপথের বাকি অংশ কেবলই উচ্ছ্বাসের গল্প। কারণ অল্প একটু এগোলেই শীলবাধা পাড়া।
এ পাড়ায় গুটিকয়েক ঘর দেখা যায়। সেখানে মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস। পাড়ার মারমাদের জীবিকা নির্ভর করে পাহাড়ে চাষাবাদ করে। দুয়েকটি দোকান দেখা গেলেও পণ্যের ঘাটতি রয়েছে। নিজেরাই মালিক, আবার নিজেরাই খদ্দের। পাড়ার ঘরগুলো যেহেতু মাটি থেকে দু'ফুট উপরে অবস্থিত, তাই নিজেদের তৈরি কাঠের সিঁড়ি কাজে লাগায় তারা। এই পাড়ার পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে বেয়ে চলা ঝিরিপথ, চারপাশ ঘিরে থাকা পাহাড়, পাথুরে পথ ও চমৎকার নীল আকাশ চোখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এখান থেকেই দেবতাখুমের মূল আকর্ষণ শুরু। লাইফ জ্যাকেট কিনে একটু সামনে এগোলেই ঝিরির পানি সবুজ হতে শুরু করে। বাকি পথটুকু পর্যটকদের দুবার নৌকায় পার করে দেয়। নৌকা সর্বদা প্রস্তুত সেখানে। লাইফ জ্যাকেট পরিধান বাধ্যতামূলক।



📌Get In Touch......

My Facebook ID -   / saiful.h.mobin  

My Instagram ID -  / saiful_hoq_mobin  

My Twitter ID -   / @mdsaifulhoq  

#debotakhum #দেবতাখুম #hills #boat #bandarban #beach #river

Комментарии

Информация по комментариям в разработке