Скачать или смотреть কোরআন হাদিসের আলোকে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যু বরণ কারী কি শহীদ !

দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যারা প্রাণ হারান, ইসলাম তাদের শহীদের মর্যাদা প্রদান করেছে। অবশ্য শহীদের অনেক স্তর রয়েছে। পারিভাষিক অর্থে শহীদ হলো যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নির্যাতিত মুসলিম জাতি বা মুসলিমদের জনবসতি রক্ষায় শত্রুপক্ষের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন। এমন ব্যক্তিদের গোসল ও কাফন পরানো ছাড়াই দাফন করার কথা বলা হয়েছে ইসলামে। কেয়ামতের দিন জান্নাতে উঁচু মর্যাদা অর্জন করবেন তারা। হাদিসের ভাষ্যমতে আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়া আরও সাত শ্রেণির মুসলিম শহীদের মর্যাদা পাবেন।

তারা হলেন ১. মহামারিতে মৃত ব্যক্তি। ২. পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি। ৩. প্রুরিসি (কণ্ঠ ও ফুসফুসের ঝিলি­র প্রদাহজনিত গুরুতর ব্যাধি) রোগে মৃত ব্যক্তি। ৪. কলেরা বা অনুরূপ পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি। ৫. আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি। ৬. ধসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি ও ৭. গর্ভাবস্থায় মৃত মহিলা। (আবু দাউদ)। এ হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী সমপ্রতি নেপালে বাংলাদেশের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মুসলমানরা অবশ্যই শহীদের মর্যাদা পাবেন, ইনশাআল্লাহ।

নিহতদের জন্য দোয়া করা কর্তব্য

নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মুসলিম ব্যক্তিরা শহীদদের মর্যাদা পাবেন। হাদিসে আছে কেউ যদি সন্তান জন্মদানের সময় মারা যান, তিনি শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন। এভাবে কেউ দেয়াল ধসে মারা গেলে বা আগুনে পুড়ে মারা গেলেও শহীদের মর্যাদা পাবেন। যারা শহীদের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন, ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের কবরের আজাব মাফ এবং জান্নাতে তারা অফুরন্ত নেয়ামত লাভ করবেন। নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের জন্য আমরা দোয়া করব। এটা আমাদের দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘আল্লাহর রাস্তায় যারা নিহত হয় তাদের মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; তোমরা তা বোঝ না।’ (সূরা বাকারা : ১৫৪)।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আপনজনের মৃত্যুতে বিপদগ্রস্তদের যারা সান্ত্বনা দেয় ও সাহায্য করে, আল্লাহ তাদের কেয়ামতের দিন সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন এবং মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনে যারা শরিক হয়, উহুদ পর্বত পরিমাণ সওয়াব তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ)।

ঈমানদার আমলকারীরাই শহীদ

ইসলামে শহীদ দুই প্রকার ১. বাস্তব অর্থে শহীদ। যারা ইসলামের জন্য যুদ্ধে নিহত হন, তারা সত্যিকারের শহীদ। আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদা অপরিসীম। ২. রূপক অর্থে শহীদ। বাস্তব শহীদ ছাড়াও কেউ যদি দুর্ঘটনায় মারা যান, এ অবস্থায় আল্লাহর ওপর তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকে এবং তিনি নেক আমলকারী হন, তাহলে রূপক অর্থে তিনিও শহীদ। কিন্তু কেউ যদি গোনাহের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায়, কিংবা নামে মুসলিম, কাজকর্মে ইসলামের বিধিবিধানের তেমন ধার ধারে না, এ রকম ব্যক্তি দুর্ঘটনায় মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবে না।
ইসলামে শহীদের মর্যাদা অনেক। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব; আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সূরা আনকাবুত : ৬৯)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাস্তায় যারা নিহত হয় তাদের মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; তোমরা তা বোঝ না।’ (সূরা বাকারা : ১৫৪)।

নাগরিক সমাজের উত্থাপিত ২১ দফা দাবি হলো-

১. নিহতদের পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসাসহ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে
২. দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে
৩. সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে
৪. শিক্ষার্থীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য প্রতিটি কমিউনিটিতে সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রতিদিনই তাদের প্রধান সড়ক পার হতে না হয়।
৫. চলমান আন্দোলনে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে
৬. মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর যুগোপযোগী সংশোধনী ও বাস্তবায়ন করতে হবে
৭. পথচারী ও অযান্ত্রিক যানে নিরাপদে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে
৮. উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে
৯. যথাযথভাবে ও দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান সড়কপথ পরিচালনা ও মেরামত করতে হবে
১০. ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের নিষিদ্ধ ও শাস্তি প্রদান এবং হেলপারদের দিয়ে হাড়ি চালানোয় সাজার বিধান চালু করতে হবে।

১১. পরিবহন মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং অপরাধের ভিত্তিতে শাস্তির বিধান চালু করতে হবে
১২. ক্রটিযুক্ত ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ করতে হবে; এ বিষয়ে ব্যর্থ বা অনাগ্রহী ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
১৩. গাড়ি চালকদের ট্রিপের পরিবর্তে মাসিক বেতনে নিয়োগের ব্যবস্থা চালু করতে হবে
১৪. সড়ক ব্যবহারকারী সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে
১৫. যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে
১৬. বিআরটিএ’কে দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত এবং কার্যকর করতে হবে
১৭. রেল ও নৌ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করতে হবে এবং সড়ক নির্ভরতা কমাতে হবে
১৮. প্রশিক্ষিত, দক্ষ চালক তৈরি করতে প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণ একাডেমি চালু করতে হবে
১৯. যাত্রী, যানবাহনের মালিক, চালক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকলের সহযোগিতায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
২০. পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে মালিকপক্ষ থেকে নিয়োগপত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং
২১. পরিবহন ব্যবস্থা মনিটরিং করার জন্য নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয়ে স্থানীয় ভিত্তিক তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে।