Скачать или смотреть আলোকচিত্রশিল্পী মার্ক রিবুর ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ : শোক ও সকাল’ শীর্ষক একক আলোকচিত্র

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিশ্বখ্যাত ম্যাগনাম আলোকচিত্রশিল্পী মার্ক রিবুর ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ : শোক ও সকাল’ শীর্ষক একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যঁ মারা সু। 

প্রদর্শনী আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে ‘লা’সেসিও লেসামি দ্য মাখ রিব্যো’ ও গিমে মিউজিয়াম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তোলা আলোকচিত্রের এই অনুপম প্রদর্শনীতে ছিল অপ্রকাশিত ৫০টি আলোকচিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং কিউরেটিং করেছেন মফিদুল হক ও লরেন ড্রুরে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম আলোকচিত্রশিল্পী মার্ক রিবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কলকাতায় আসেন। তিনি শরণার্থীশিবির ও মুক্তাঞ্চল ঘুরে  দেখেন। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বরে যখন ভারত-পাকিস্তান সর্বতোভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে অগ্রসরমাণ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাঁর অভিযাত্রা শুরু হয় জামালপুর-শেরপুর থেকে। তারপর প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে তিনি প্রত্যক্ষ করেন জামালপুরের বিজয়সূচক যুদ্ধ। সেগুলো তিনি বিস্তৃতভাবে ক্যামেরাবন্দি করেন। 

মার্ক রিবু ছিলেন প্রথম সাংবাদিকদের অন্যতম, যাঁরা ঢাকায় প্রবেশ করে এই নগরীর মুক্তিকে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। এসব ছবির বেশির ভাগই আজ পর্যন্ত অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।

এই মার্ক রিবু প্রথম প্রজন্মের ম্যাগনাম আলোকচিত্রীদের অন্যতম। ফরাসি বিদগ্ধ এই আলোকচিত্রশিল্পীর জন্ম লিঁওর কাছাকাছি সাঁ-জেনি-লাভালে ১৯২৩ সালে। ২০১৬ সালে প্যারিসে ৯৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

তিনি তাঁর প্রথম ছবিগুলো তুলেছিলেন প্যারিসে, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এক্সপোজিসিও ইউনিভেখসেলে ১৯৩৭ সালে ছোট ভেস্ট পকেট কোডাক ক্যামেরা দিয়ে। ওই ক্যামেরা ছিল তাঁর ১৪তম জন্মদিন উপলক্ষে বাবার দেওয়া উপহার। ১৯৪৪ সালে তিনি হানাদার নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে ভেখকোর প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি লিঁওর ইকোল সস্থ্রালে প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর তাঁর কর্মজীবন শুরু। তবে তিন বছর পরই পেশা পরিবর্তন করে তিনি একজন আলোকচিত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৫৩ সালে মার্ক রিবুর তোলা আইফেল টাওয়ারের ওপর কাজে ব্যস্ত একজন রংমিস্ত্রির ছবি লাইফ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত আলোকচিত্র। তারপর অঁরি কাখতিয়ের-ব্রেসন ও রবার্ট কাপার আমন্ত্রণে তিনি ম্যাগনাম ফটোতে যোগ দেন।

১৯৫৫ সালে তিনি সড়কপথে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফগানিস্তান হয়ে ভারতে পরিভ্রমণ করেন, সেখানে তিনি এক বছরের বেশি সময় অবস্থান করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি কলকাতা থেকে প্রথমবারের মতো যান বেইজিং, যেখানে পরে আরো বহুবার অবস্থান করেছেন। জাপানে তিনি খুঁজে পান সেই অনুপ্রেরণা, দূরপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণের পর যা তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘জাপানের নারীরা’ লিখতে উৎসাহিত করেছিল। 
সোভিয়েত ইউনিয়নে তিন মাসকালীন প্রবাসজীবন শেষে ১৯৬০ সালে তিনি আলজেরিয়া ও সাবসাহারা আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ছবি তোলেন। ১৯৬৮ ও ১৯৭৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনিই ছিলেন সেই স্বল্প কয়েকজন ব্যক্তির অন্যতম, যাঁরা যুগপৎ উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে ছবি তোলার অনুমতি পেয়েছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে পেন্টাগনের সামনে আন্দোলন চলাকালীন তাঁর তোলা ‘ফুল হাতে একজন তরুণী’র ছবি শান্তির আন্তর্জাতিক প্রতীকে পরিণত হয়।

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে তিনি প্রায়ই ফিরে যেতেন প্রাচ্যে ও দূরপ্রাচ্যে, বিশেষ করে অ্যাংকর ও হুয়াং-শানে, কিন্তু তিনি চীনের দ্রুত এবং গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরগুলোও অবলোকন করেছেন, এমন একটি জাতি যাকে তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রত্যক্ষ করেছেন। ২০১১ সালে মার্ক রিবু ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৭ সালের ভেতর তাঁর ধারণ করা ১৯২টি আলোকচিত্রের মূল প্রিন্ট প্যারিসের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টকে (সেন্টার জর্জ পম্পেদু) দান করেন। তাঁর আলোকচিত্র অনেক মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা অর্জন করেছে এবং অন্যান্য অনেক জায়গার মতোই প্যারিস, নিউ ইয়র্ক, সাংহাই ও টোকিওর জাদুঘর ও গ্যালারিগুলোতে প্রদর্শিত হয়েছে।