হাইপারটেনশন, যার আরেক নাম উচ্চ রক্তচাপ, HTN , বা HPN, হল একটি রোগ যখন কোন ব্যক্তির রক্তের চাপ সব সময়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে।
সাধারনভাবে, যদি কোনও একজনের হৃদ-সংকোচন বা সিস্টোলিক রক্ত চাপ উভয় বাহুতে ১৪০ মি.মি পারদ অথবা উপরে থাকে (চাপের একটি একক) কিংবা হৃদ-প্রসারণ বা ডায়াস্টলিক চাপ ৯০ মি.মি পারদ অথবা উপরে থাকে,তাহলে তার উচ্চ রক্ত চাপ বলা যেতে পারে। ডায়াবেটিস মেলিটাস অথবা কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে ১৩০/৮০ অধিক রক্তচাপকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং এর দ্রুত চিকিৎসা হওয়া উচিত।
#বাংলাস্বাস্থ্যসেবা #Hypertension
কারণঃ
যে সকল কারণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে সেগুলো হল: বেশি লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত মেদ, কাজের চাপ, মদ্যপান, পরিবারের আকার, অতিরিক্ত আওয়াজ এবং ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা। উচ্চমাত্রার লবণের ব্যবহার এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ধারণা করা হয় প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ রোগী লবণের ব্যবহার দ্বারা প্রভাবিত হন।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অসুস্থতার মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এই সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। উচ্চরক্তচাপ বৃক্কজনিতঅসুস্থতার কারণেও ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে যা হয় তা হল , বৃক্কের কলাসমূহের মাঝে রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়, কারণ রেনিন-এনজিওটেন্সেন সিস্টেমের প্রধান অথবা শাখা ধমনী সমূহ সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে।
যদিও উচ্চ রক্তচাপ আলাদাভাবে কোন অসুস্থতা নয়, কিন্তু প্রায়ই এর চিকিৎসা প্রয়োজন হয় কারণ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর এর স্বল্প থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। বিশেষত স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিউর, হৃদক্রিয়া বন্ধ, চোখের ক্ষতি এবং বৃক্কের বিকলতা ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
নির্ণয়ঃ
রক্তচাপ মাপার যন্ত্র(স্ফিগমোম্যানোমিটার)
হাইপারটেনশনের অবস্থা নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হলে ধরে নেয়া হয়। সাধারণত এক সপ্তাহের বিরতিতে কমপক্ষে তিনবার মাপা লাগে। সঠিক চাপ মাপার জন্য কয়েকটি নিয়ম মানা জরুরী এবং অন্যান্য যেসকল বিষয় রক্তচাপকে প্রভাবিত করে সেগুলোও বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন, রক্তচাপ মাপার কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে থেকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ক্যাফেইন গ্রহণের কমপক্ষে একঘণ্টা পরে মাপতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত অবস্থায় মাপা জরুরী।
লক্ষনঃ
রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়ে গেলে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন, মাথা ব্যাথার পাশাপাশি চোখে ব্যাথা বা ঝাপসা দেখা, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
ক্ষতিকর দিকঃ
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে না পেরে ব্যক্তির হৃতপিণ্ড কাজ বন্ধ করতে পারে বা হার্ট ফেল করতে পারে। এছাড়া, এমন সময় রক্তনালীর দেয়াল সঙ্কুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে।
চিকিৎসাঃ
মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের রক্তচাপের জন্য চিকিৎসকেরা ওজন কমানো এবং নিয়মিত ব্যায়ামকে চিকিৎসার প্রথম ধাপ হিসেবে ধরেন। যদিও এই পদ্ধতিগুলি রক্তচাপ কমানোর জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ, কিন্তু এইগুলি বলার চেয়ে করা প্রকৃতপক্ষে সহজ নয়। বেশিরভাগ রুগীই মাঝারি থেকে উচ্চ রক্তচাপে যারা ভূগছেন, তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঔষধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাদের রক্তচাপ নিরাপদ মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য। যদিও ধূমপান ছেড়ে দেয়া সরাসরি রক্তচাপ কমায় না, কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সাথে এটি অত্যন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের বেশকিছু উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আসে যেমন স্ট্রোক অথবা হার্ট এটাক। মৃদু উচ্চরক্তচাপ সাধারণত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং শারিরীক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। ফল, শাক সব্জি, স্নেহ বিহীন দুগ্ধজাত খাদ্য এবং নিম্নমাত্রার লবণ ও তেলের খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ বিশিষ্ট রোগীর রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম রক্ত চলাচলের উন্নতি করে, এবং রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পরিবেশগত চাপ যেমন উঁচু মাত্রার শব্দের পরিবেশ বা অতিরিক্ত আলো পরিহার করাও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকারী হতে পারে।
বাজারে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বহু রকমের ঔষধের ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলো অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ নামে পরিচিত যা রক্তচাপ কমিয়ে আনে। অবশ্যই অবিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কিছু উপকারী খাবার ঃ
১. কলা
সব মৌসুমের সহজলভ্য এই ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ম্যাজিকের মত! কলা পটাশিয়ামে পূর্ণ, যে উপাদানটি রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয় দশ গুণ দ্রুততায়। সেইসঙ্গে কিডনিকেও ভালো রাখে কলা। তাই হাইপার টেনশনের রোগীদের দিনে ১ থেকে ২ টি কলা খাওয়া উচিৎ নিয়মিত।
২. গোল মরিচ
যাদের স্বল্প মাত্রার রক্তচাপ ওঠা-নামার সমস্যা রয়েছে তারা কালো ও লাল গোল মরিচে খেলে সুফল পেতে পারেন। গোলমরিচ খেলে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালী প্রসারিত হয়, যার ফলে রক্ত চলাচল থাকে স্বাভাবিক।
৩. পেঁয়াজ
পেঁয়াজে রয়েছে কুয়েরসেটিন নামের এক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, যা রক্তচাপ কমায় দ্রুত হারে। এছাড়াও এতে রয়েছে সালফার যা রক্তচাপ বৃদ্ধিকে রুখতে পারে সহজেই।
৪. মধু
মধুতে রয়েছে অলিগোস্যাকারাইড নামের একধরণের কার্বোহাইড্রেট। এটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রক্তনালীকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড, যা সিস্টোলিক ব্লাডপ্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫. রসুন
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন সত্যিই সহায়ক। কাঁচা এবং রান্না করা- দুই অবস্থাতেই রসুন রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে হাইড্রোজেন সালফাইড, যার মাধ্যমে পেটের গ্যাস কমে যায় দ্রুত। এতে হৃৎপিণ্ডও থাকে বাড়তি চাপমুক্ত।
৬. লেবু
রক্তনালীকে নরম রাখতে সাহায্য করে লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন সি ক্ষতিকর উপাদান থেকে হৃৎপিণ্ডকে রক্ষা করে।
Информация по комментариям в разработке