রোজার প্রস্তুতি ও যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় না ।। মিজানুর রহমান আজহারী।। Radiant Of Islam ।। Waz।।
Subscribe : Radiant Of Islam
এমন কিছু কাজ আছে, যার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অথচ অনেকে এগুলোকে রোজাভঙ্গের কারণ মনে করে।
ফলে এমন কোনো কাজ হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করে। পক্ষান্তরে কেউ কেউ এসব কাজ পরিহার করতে গিয়ে অনাবশ্যক কষ্ট ভোগ করে।
সুতরাং এসব বিষয়ে রোজাদারদের অবগত হওয়া জরুরি।
যেসব বিষয় রোজা ভঙ্গের কারণ নয়
০১. অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর ধুলা-বালি, ধোঁয়া অথবা মশা-মাছি প্রবেশ করা।
০২. অনিচ্ছাকৃত কানে পানি প্রবেশ করা।
০৩. অনিচ্ছাকৃত বমি আসা অথবা ইচ্ছাকৃত অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখ ভরে নয়)।
০৪. বমি আসার পর নিজে নিজেই ফিরে যাওয়া।
০৫. চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা।
০৬. ইনজেকশন নেয়া।
০৭. ভুলক্রমে পানাহার করা।
০৮. সুগন্ধি ব্যবহার করা বা অন্য কিছুর ঘ্রাণ নেয়া।
০৯. নিজ মুখের থুথু, কফ ইত্যাদি গলাধঃকরণ করা।
১০. শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করা।
১১. ঠাণ্ডার জন্য গোসল করা।
১২. মিসওয়াক করা। যদিও মিসওয়াক করার দরুন দাঁত থেকে রক্ত বের হয়। তবে শর্ত হলো গলার ভেতর না পৌঁছানো।
১৩. ঘুমের মাঝে স্বপ্নদোষ হলে।
১৪. স্ত্রীলোকের দিকে তাকানোর কারণে কোনো কসরত ছাড়া বীর্যপাত হলে।
১৫. স্ত্রীকে চুম্বন করলে, যদি বীর্যপাত না হয় (রোজা না ভাঙলেও এটা রোজার উদ্দেশ্যের পরিপন্থী)।
১৬. দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা গোশত খেয়ে ফেললে (যদি পরিমাণে কম হয়), পরিমাণ বেশি হলে রোজা ভেঙে যাবে।
এবার কোরআন-হাদিসের আলোকে বিষয়গুলো অনুধাবনের চেষ্টা করা যাক। মনে রাখা দরকার যে, রোজা ভঙ্গ হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে-
১. রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা
যদি না জেনে রোজা ভঙ্গকারী কোনো একটিতে লিপ্ত হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারায় বলেন-
‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাকড়াও করবেন না, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা কোনো ভুল করে বসি। ’ -সূরা বাকারা : ২৮৬
তখন আল্লাহতায়ালা বললেন, ‘অবশ্যই আমি তা কবুল করেছি। ’ অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা ভুলে যা কর, তাতে কোনো অপরাধ নেই। অবশ্য ইচ্ছাপূর্বক তোমাদের হৃদয় যা করছে তার ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু। ’ -সূরা আহজাব : ৫
না জানার কারণে রোজা না ভাঙ্গার বিষয়টি ব্যাপক, হতে পারে সে শরিয়তের হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ। যেমন, সে ধারণা করে যে এ জিনিসটা রোজা ভাঙ্গবে না, ফলে তা করে বসে। অথবা কাজ করা অবস্থায় বা সময়ে সেটি তার অজানা ছিল। যেমন, সে ধারণা করে যে, ফজর বা সুবহে সাদিক এখনও উদিত হয়নি, ফলে সে পানাহার চালিয়ে যায় অথচ ফজর উদিত হয়ে গেছে। কিংবা সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে মনে করে খেয়ে ফেলল অথচ সূর্য তখনও অস্ত যায়নি। এসব কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ সহিহ বোখারিতে হজরত আসমা বিনতে আবি বকর (রা.)-এর হাদিসে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা নবী করিম (সা.)-এর যুগে ইফতার করেছিলাম এক মেঘলা দিনে তারপর সূর্য দেখা গিয়েছিল। ’
এখানে তিনি উল্লেখ করেননি যে, নবী (সা.) তাদেরকে রোজাটি কাজা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন; কারণ তাদের সময় অজানা ছিল।
২. রোজার কথা স্মরণ থাকা
যদি রোজা পালনকারী নিজ রোজার কথা ভুলে রোজা ভঙ্গকারী কোনো কাজ করে ফেলে তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে, তাকে আর সেটা কাজা করতে হবে না। যেমনটি সূরা বাকারার আয়াতে গত হয়েছে। তাছাড়া হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে রোজা পালনকারী ভুলে পানাহার করল, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। ’
নবী (সা.) কর্তৃক রোজা পরিপূর্ণ করার নির্দেশ প্রদান সে রোজা সহিহ হওয়ার স্পষ্ট দলিল। আর ভুলে যাওয়া ব্যক্তির খাওয়ানো ও পান করানোর সম্পর্ক আল্লাহর দিকে করা প্রমাণ করে যে এর ওপর কোনো পাকড়াও বা জবাবদিহিতা নেই। কিন্তু যখনই স্মরণ হবে কিংবা কেউ স্মরণ করিয়ে দেবে তখনই: সেটা থেকে বিরত থাকবে এবং মুখে কিছু থাক লে তাও নিক্ষেপ করবে; কারণ এখন তার ওযর দূরীভূত হয়েছে।
৩. স্বতঃস্ফূর্তভাবে রোজা ভঙ্গ করা
রোজা ভঙ্গকারী নিজের পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী যদি রোজা ভঙ্গকারী কিছু করে তবেই কেবল তার রোজা নষ্ট হবে। অন্যথায় যদি রোজা পালনকারীকে জোর-জবরদস্তি করে রোজা ভঙ্গ করানো হয় তবে তার রোজা বিশুদ্ধ হবে, তার আর সেটা কাজা করা লাগবে না। কারণ, আল্লাহতায়লা কুফুরির হুকুমকে সে ব্যক্তি থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন যাকে কুফুরি করতে জোর করে বাধ্য করা হয়েছে, যখন তার অন্তর ঈমানের ওপর অটল থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করলে এবং কুফরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরির জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচলিত। ’ -সূরা আন নাহল : ১০৬
মাসয়ালা : যদি কোনো লোক তার স্ত্রীকে সহবাস করতে বাধ্য করে অথচ সে রোজা পালনকারিনী, তাহলে মহিলার রোজা শুদ্ধ হবে। তাকে সেটার কোনো কাজা করতে হবে না। যদিও লোকটির জন্য বৈধ নয় স্ত্রীকে রোজা অবস্থায় সহবাসে বাধ্য করা। হ্যাঁ, যদি কোনো মহিলা তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা পালন করে সেটা ভিন্ন কথা। ৎ
মাসয়ালা : চোখে ওষুধ-সুরমা ইত্যাদি লাগালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। হজরত আনাস (রা.) রোজা অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন। -আবু দাউদ ১/৩২৩
Copyright Use Disclaimer :-
FAIR USE**
Copyright Disclaimer under section 107 of the Copyright Act 1976, allowance is made for “fair use” for purposes such as criticism, comment, news reporting, teaching, scholarship, education and research.
Fair use is a use permitted by copyright statute that might otherwise be infringing.
Non-profit, educational or personal use tips the balance in favor of fair use.
Информация по комментариям в разработке