সূরার পরিচয় :
সূরার নাম : সূরা মাউন সূরার অর্থ : প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী
সূরা নং : ১০৭ রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ৭ সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ২৫ শ্রেণী : মাক্কী
বর্ণ সংখ্যা : ১১২ পারার সংখ্যা : ৩০
সূরা মাউন سورة الماعؤن Sura maun এর তাফসীর ও শানে নুযুল
بسم الله الرحمن الرحيم
”শুরু করছি আল্লাহর নামে; যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু।”
(١)- أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ
(১) আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচার দিবসকে মিথ্যা বলে?
(٢)-فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ
(২) সে ওই ব্যক্তি; যে এতিমকে (গলা) ধাক্কা দেয়।
(٣)-وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ
(৩) এবং মিসকীনকে খাদ্য দিতে উৎসাহিত করে না।
(٤)-فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
(৪) অতএব, দুর্ভোগ সেসব নামাজির;
(٥)-الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
(৫).যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বেখবর।
(٦)-الَّذِينَ هُمْ يُرَاؤُونَ
(৬) যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে থাকে ।
(٧)-وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
(৭) এবং নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য বস্তু অন্যকে দেয় না।
শাব্দিক বিশ্লেষণ :
أَرَأَيْتَ : শব্দটির মূল হলো رؤية (দেখা, লক্ষ করা, চিন্তা করা, উপলব্ধি করা)। رءيت (আপনি দেখেছেন) ক্রিয়া, অতীতকাল, মধ্যম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন। ارءيت এর শুরুতে “ا” (কি?) প্রশ্নবোধক অব্যয়। এ বাক্যে শব্দটি প্রশ্নবোধক অর্থ বোঝানো এবং অবাক অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে “ارءيت” অর্থ: আপনি কি দেখেছেন?
يُكَذِّبُ : শব্দটির মূল হলো تكذيب (অস্বীকার করা, মিথ্যা অভিহিত করা, প্রতারণা করা)। আর “ يُكَذِّبُ” (অস্বীকার করে) ক্রিয়া, বর্তমানকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন । الذى يكذب অর্থ: যে অস্বীকার করে।
الدِّينِ : শব্দটি বিশেষ্য, একবচন, এর বহুবচন হলো “اديان” দ্বীন শব্দটি ইসলাম ধর্ম, বিচার দিবস, প্রতিফল, পরকাল ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়। بالدين শব্দে ال নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বোঝানোর জন্য এবং ب সমন্ধসূচক অব্যয়, দ্বারা বা সাথে অর্থে ব্যবহার হয়।
يكذب بالدين অর্থ: ইসলাম ধর্মকে অস্বীকার করে অথবা পরকালকে অস্বীকার করে এবং পরকালের বিচার ও প্রতিফলকে অস্বীকার করে।
يَدُعُّ : শব্দটির মূল হলো “دعا” (কঠোরভাবে ধাক্কা দেওয়া)। আর يَدُعُّ ক্রিয়া, বর্তমানকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন । অর্থ: কঠোরভাবে ধাক্কা দিচ্ছে।
يَتِيمَ : (পিতৃহীন, অনাথ) বিশেষ্য, একবচন। অভিধানে এ শব্দটি হারানো, পৃথক হওয়া, একক হওয়া ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলামী পরিভাষায় অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোর যে তার পিতাকে হারিয়েছে, তাকে এতিম বলে। এর বহুবচন ايتام, يتاحى ‘আইতাম’। “يدع اليتيم” অর্থ: এতিমকে ধাক্কা দেয়।
يَحُ
يُرَاؤُونَ : ক্রিয়া, বর্তমানকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, বহুবচন। একবচন হলো, يراء “(অন্যদেরকে দেখায় বা দেখানোর জন্য করে।) এর মূল হলো “مراءاة, رياء, رءاء”
الْمَاعُونَ : বিশেষ্য, একবচন। থালা-বাটি, হাঁড়ি-পাতিল, সুই-সুতা, পানি, লবণ, আগুন ইত্যাদি নিম্ন মূল্যের প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী, যা পরস্পরকে উদার হিসেবে আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে । বহুবচন হলো “المؤاعين” এর মূল হলো “المعن, المعنة” (নিম্ন মানের, অতি নগণ্য জিনিস)। “يَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ” অর্থ: প্রয়োজনীয় সাধারণ গৃহসামগ্রী অন্যদেরকে দিতে বিরত থাকে বা সাহায্য করা থেকে বিরত থাকে।
সূরা মাউন এর শানে নুযুল
ইবনে জুরাইয থেকে বর্ণিত, আবু সুফিয়ান প্রতি সপ্তাহে একটি উট জবাই করত। একদিন জনৈক এতিম তার কাছে গোশত চাইলে সে ওই এতিম শিশুটিকে লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করে। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা’আলা সূরা মাউন অবতীর্ণ করেন। মতান্তরে আস বিন ওয়াইল, ওয়ালিদ বিন মুগিরা অথবা আবু জাহেলের এমন নির্মম অপকর্মের প্রেক্ষাপটে এ সূরা অবতীর্ণ হয় ।
সূরা মাউন এর তাফসীর
আয়াত-১.
একটি অবাক কাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ স.-কে সম্বোধন করে বলেন, আপনি কি দেখেছেন, যে ইসলাম ধর্মকে অস্বীকার করে, অথবা পরকালকে অস্বীকার করে এবং পরকালের বিচার ও প্রতিফলকে অস্বীকার করে? তার পরিচয় হলো, সে এতিমকে কঠোরভাবে ধাক্কা দেয় এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করে না।
আয়াত-২.
সে ওই ব্যক্তি, যে এতিমকে কঠোরভাবে ধাক্কা দেয়। অর্থাৎ এতিমের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ ও জুলুম নির্যাতন করে। তার যথাযথ পাওনা তাকে দেয় না এবং তার প্রতি সহনশীল ও ভালো আচরণ করে না।
আয়াত-৩.
এবং অভাবীদেরকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করে না। অর্থাৎ গরিব, এতিম ও অসহায়কে নিজেও সাহায্য-অনুগ্রহ করে না, অন্যদেরকেও এদিকে উৎসাহিত করে না। অথচ অভাবগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করা মানবিক দায়িত্ব এবং বিত্তশীলদের প্রতি অসহায়দের অধিকার।
আয়াত-৪.
অতএব দুর্ভোগ এমন নামাযীদের জন্য, যাদের নামাযে আগত ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতে উল্লিখিত খারাপ লক্ষণগুলো রয়েছে। তারা নামাযের প্রতি উদাসীন এবং লোক-দেখানো আমল করে।
আয়াত-৫.
যারা নিজেদের নামাযের প্রতি উদাসীন। অবহেলার সাথে নামায আদায় করে। যথাসময়ে নামায আদায় করে না। নামাযের শর্ত ও রুকনগুলো যত্ন সহকারে আদায় করে না। তাদের নামাযে মনোযোগ এবং খোদাভীতি থাকে না, তাদের জন্য দুর্ভোগ। রাসূলুল্লাহ স. বলেন, তা হলো মুনাফিকের নামায। (সহীহ মুসলিম-১০৩৩) আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন, অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন দাঁড়ায় একান্ত অলসভাবে লোক-দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সূরা আন নিসা-১৪২)
উল্লেখ্য যে, উদাসীনতার সাথে নামায আদায় করা মুনাফিকের কাজ। এভাবে এতিমের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করাও সত্যিকার মুসলমানের কাজ নয়। বরং তাও মুনাফিকদের কর্মের অন্তর্ভুক্ত। তাই দুটি বিষয় সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় একত্রে আলোচনা করেছেন।
আয়াত-৬.
যারা আত্মপ্রদর্শন করে। নামায এবং অন্যান্য আমল, দান-সাদকা আল্লাহর জন্য নিষ্ঠার সাথে না করে পরস্পর দেখানোর জন্য করে, তাদের জন্য দুর্ভোগ।
Информация по комментариям в разработке