#জান্নাতের_হুর #ইসলামিক_ভিডিও #JummaMubarak #QuranHadith #IslamicEducation
জান্নাতের হুর (হূরুল-আইন) বলতে সেই অপূর্ব সুন্দর সঙ্গীনীদের বোঝায়, যাঁদের আল্লাহ পরকালে জান্নাতে মুমিনদের জন্য তৈরি রেখেছেন। কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী, জান্নাতের হুররা অসাধারণ সৌন্দর্য, পবিত্রতা ও সেবাপরায়ণতার এক অপরূপ নিদর্শন। এই ভিডিওতে আমরা কুরআন-হাদীসের আলোকে জান্নাতের হুরদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং বুঝতে চেষ্টা করবো কেন এটি আমাদের জন্য একটি প্রেরণা ও আকর্ষণের বিষয়।কুরআনে হুরদের বর্ণনাপবিত্র কুরআনে জান্নাতের হুরদের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য বহুস্থানে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা জানান, পরকালে ধার্মিক পুরুষদেরকে সুন্দরী “আয়তলোচনা হুর” (বিশাল মনোমুগ্ধকর চোখবিশিষ্ট হুর) স্ত্রী হিসেবে দান করা হবেdhakapost.com। কুরআনের একাধিক আয়াতে হুরদেরকে “রক্ষিত মোতির মতো” বলা হয়েছে – অর্থাৎ তারা এতটাই স্বচ্ছ ও পবিত্র যেমন আবরণে সুরক্ষিত ঝকঝকে মুক্তা। আবার সূরা আর-রহমানে হুরদেরকে চিত্রিত করা হয়েছে এভাবে যে, তারা বিশেষ তাঁবুতে সুরক্ষিত থাকে এবং তাদেরকে এর আগে কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি। এই বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে হুররা সম্পূর্ণ পবিত্র ও নিষ্কলুষ – তাদের দুনিয়ার স্পর্শ বা অপবিত্রতার কোনো চিহ্ন নেই।কুরআন জানায় আল্লাহতায়ালা জান্নাতে মুমিনদেরকে হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করবেন। উদাহরণস্বরূপ, সূরা দুখানে আল্লাহ বলেন: “আমি তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর নয়না হুরদের সাথে।” এছাড়া জান্নাতের এসব সঙ্গিনীরা চিরযৌবনা ও কুমারী হবে। আল্লাহ বলেছেন: “আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি এবং তাদেরকে করেছি কুমারী” (সূরা আল-ওয়াকেয়া, ৫৬:৩৫-৩৬)। অর্থাৎ হুরসহ জান্নাতি নারীরা সকলেই চিরতরুণী ও অপূর্ব রূপবতী হয়ে থাকবে।হাদিসে হুরদের বিবরণহাদীসে জান্নাতের হুরদের সৌন্দর্য এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা আমাদের কল্পনাকেও হার মানায়। নবী করীম (সা.) বলেছেন, যদি জান্নাতের একজন নারী (হুর) পৃথিবীতে এক ঝলক উদয় হন, তাহলে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সমস্ত স্থান আলোয় ভরে যাবে এবং সুবাসে মৌতাত হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেছেন, ঐ হুরের মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সমস্ত সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যবান ও উত্তম।সহিহ বুখারির এক বর্ণনায় আসে, জান্নাতীদের প্রত্যেকের জন্য অন্তত দুইজন হুর স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্য এত নিখুঁত ও স্বচ্ছ হবে যে তাঁদের পায়ের নলদেশের মজ্জা পর্যন্ত দেখা যাবে। হাদিসে আরও এসেছে, প্রথম জান্নাতী দলের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে এবং তাঁদের হৃদয় সকল প্রকার বিদ্বেষ থেকে মুক্ত ও একতাবদ্ধ থাকবে। এর থেকে বুঝা যায়, জান্নাতে সব সম্পর্ক হবে ভালোবাসা ও শান্তিতে পরিপূর্ণ – হুররা তাঁদের স্বামীদের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত ও চোখ অবনত রাখা স্ত্রী হবে। তারা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবে না এবং স্বামীদের প্রতিও থাকবে অগাধ ভালবাসা ও সন্তুষ্টি।জান্নাতি নারীদের মর্যাদা ও প্রাপ্তিঅনেকে প্রশ্ন করেন – জান্নাতে কি শুধুই পুরুষরা হুর পাবে? নারীরা কী পাবে? পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে এর উত্তর হলো, জান্নাতে নারী-পুরুষ সবাই নির্ধারিত পুরস্কার পাবেন এবং কারো প্রতি সামান্যতম অবিচার হবে না। নারীদের জন্য পুরুষ হুর উল্লেখ না করে সম্মানের কারণে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় বলেছেন যে, জান্নাতে “তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা প্রাণে আকাঙ্ক্ষা করো– অর্থাৎ যা চাও তা-ই পাবে।বিশেষ করে, দুনিয়ার যেসব নারী ঈমানদার ও সৎকর্মশীল, জান্নাতে তাঁরা হুরদের চেয়েও উঁচু মর্যাদা ও সৌন্দর্য লাভ করবেন এক হাদিসে এসেছে, এক বৃদ্ধা মহিলা জান্নাতের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে রাসূল (সা.) মশকরার ছলে বলেছিলেন যে বৃদ্ধা অবস্থায় কেউ জান্নাতে যাবে না। পরে ব্যাখ্যা করেন যে, আল্লাহ সকল জান্নাতি নারীকে পুনরায় যৌবন দান করবেন এবং তাদের কুমারী অবস্থায় পুনঃসৃষ্টি করবেন অর্থাৎ দুনিয়ায় বৃদ্ধা অবস্থায় মারা গেলেও জান্নাতে প্রত্যেক নারী তরুণী ও সুন্দরী রূপে পুনরুত্থিত হবেন। কুরআনে নিজেই বলা হয়েছে জান্নাতি নারীরা হবে “সোহাগিনী ও সমবয়সী”, যার মানে সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমান্তরাল ভালোবাসা ও বোঝাপড়া থাকবে।দুনিয়ার জীবনে যে নারীর একাধিক বিয়ে হয়েছে (প্রথম স্বামী মারা গেলে অন্যকে বিয়ে করেছেন), সে জান্নাতে শেষ স্বামীর সাথে থাকবে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। আর যদি কোনো নারীর স্বামী জান্নাতে না যান (নাউযুবিল্লাহ), তবে জান্নাতে প্রবেশের পর সে এমন একজন পুরুষ সঙ্গী পছন্দ করে নিতে পারবেন, যিনি জান্নাতে অবিবাহিত বা যাঁর স্ত্রী জাহান্নামে গেছে– আল্লাহ তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দেবেন। সর্বোপরি, জান্নাতে প্রতিটি নেককার ব্যক্তি তার প্রাপ্য সুখ ও সম্ভোগ পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করবে, সেখানে কোনো বা অসম্পূর্ণতা থাকবে না।হুরের সংখ্যা ও ভুল ধারণাকুরআনে হুরদের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যার উল্লেখ নেই। অনেকেই ৭২ হুরের কথা বলে থাকেন, যা মূলত শহীদদের বিশেষ পুরস্কার সংক্রান্ত একটি হাদিসের সূত্র ধরে বলা হয়ে থাকে। সাধারণ জান্নাতবাসীদের ক্ষেত্রে হাদিসে দুইজন হুর স্ত্রী পাওয়ার কথা এসেছে তবে সংখ্যাটি স্থির নয়। বাস্তবিকপক্ষে, জান্নাতে কেউ যদি অসংখ্য হুর চায়, আল্লাহ তাকে সেই আকাঙ্ক্ষাও পূরণ করবেন – জান্নাতের নিয়ামতসমূহ সীমাহীন। এজন্য হুরের নির্দিষ্ট সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজন নেই; বরং জান্নাতের সব ই অসীম ও অপূর্ব রকমের হবে।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – জান্নাতে কোনো হিংসা, প্রতিযোগিতা বা অসন্তোষ থাকবে না। দুনিয়ায় সহধর্মিণীদের মধ্যে যে মানসিক দ্বন্দ্ব বা ঈর্ষা হতে পারে, জান্নাতে তার লেশমাত্র থাকবে না। আল্লাহ প্রত্যেক মুমিনের হৃদয় থেকে পার্থিব সব হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে নিবেন। তাই জান্নাতে হুর কিংবা দুনিয়ার স্ত্রী যেই সঙ্গী হোক না কেন, সকলেই নিজের অবস্থান নিয়ে পরিপূর্ণ সুখ ও তৃপ্তিতে থাকবে এবং পরস্পরের প্রতি সম্পূর্ণ সদ্ভাব পোষণ করবে।উপসংহার: জান্নাতের হুরদের ধারণা আমাদের জন্য মূলত আল্লাহর অপার পুরস্কার ও অনুগ্রহের পরিচায়ক।
Информация по комментариям в разработке