Скачать или смотреть জান্নাতে যাওয়ার গ্যারান্টি কি সবার আছে। নোমান আলী খান - Noman Ali Khan Bangla lecture

ইসলামে ঈমান (বিশ্বাস) এবং সবর (ধৈর্য) মুমিনের আসল পরিচয়ের ভিত্তি হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি গুণকে একে অপরের পরিপূরক এবং সফলতার চাবিকাঠি মনে করা হয়।
ঈমান (বিশ্বাস)
ঈমান হলো ইসলামের মূল ভিত্তি। এটি শুধু মুখে স্বীকার করা নয়, বরং অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়ন-এর সমন্বিত নাম। একজন মুমিন বিশ্বাস করেন:
আল্লাহর একত্ববাদ: আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় এবং তাঁর কোনো শরীক নেই।
আল্লাহর ফেরেশতাগণ: ফেরেশতাদের অস্তিত্ব ও কার্যাবলী।
আসমানী কিতাবসমূহ: কুরআনসহ পূর্বে নাযিল হওয়া কিতাবসমূহ।
নবী ও রাসূলগণ: সমস্ত নবী-রাসূলগণের সত্যতা ও তাঁদের আদর্শ।
আখেরাত বা পরকাল: বিচার দিবস, জান্নাত ও জাহান্নামের অস্তিত্ব।
তাকদীর বা আল্লাহর বিধান: ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
প্রকৃত মুমিনরা আল্লাহকে স্মরণ করলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, আল্লাহর আয়াত শুনলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে। (সূরা আল-আনফাল: ২-৪)
সবর (ধৈর্য)
সবর হলো ঈমানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আলী (রাঃ) বলেছেন, "ঈমান ও সবর (ধৈর্য) দেহের মধ্যে মাথা ও শরীরের মতো।" যদি কারও ধৈর্য না থাকে, তবে তার ঈমানও থাকে না।
ইসলামে সবর-কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং মুমিনের জীবনে এই তিন প্রকার ধৈর্যই অপরিহার্য:
আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে ধৈর্যধারণ: নিয়মিত সালাত, সাওমসহ সকল ফরয কাজ কঠিন হলেও তা পালনে অবিচল থাকা।
পাপ ও আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ: গুনাহের প্রলোভন এড়িয়ে চলা এবং নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা।
বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ: রোগ, শোক, সম্পদের ক্ষতি বা যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অস্থির না হয়ে আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া এবং তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে সবরকারীদের জন্য সুসংবাদ ও মহা প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, "হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)।
সবর মুমিনের জীবনকে আলোকিত করে এবং তাকে মানসিক দৃঢ়তা ও প্রশান্তি দেয়।
মুমিনের আসল পরিচয়
ঈমান ও সবর একসাথে একজন মুমিনের আসল পরিচয় ফুটিয়ে তোলে:
ঈমান একজন মুমিনকে সঠিক আকীদা (বিশ্বাস) ও পথের দিশা দেয়।
সবর সেই ঈমানকে বাস্তব জীবনে ধরে রাখতে এবং সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে শক্তি যোগায়।
যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে এবং সবরকে জীবনের পাথেয় করেছে, সে দুনিয়ার জীবনে সৌভাগ্যবান এবং আখেরাতে জান্নাত লাভ করবে। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "কালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।" (সূরা আল-আসর: ১-৩)। এই আয়াতে স্পষ্ট যে, ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য ঈমান ও সৎকর্মের পাশাপাশি পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেওয়া অপরিহার্য। এটিই একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।