Скачать или смотреть Rabindranath Tagore Bangiya Sahitya Parishad Usha Ranjan Bhattacharya সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ১৩০ তম প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে ৮ শ্রাবণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ (২৫ জুলাই ২০২২) প্রকাশিত হল পরিষদের সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা গ্রন্থের ছাব্বিশ তম খণ্ড। এবারের খণ্ডের বিষয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চরিতমালার এই গ্রন্থের রচয়িতা বিশিষ্ট রবীন্দ্র-গবেষক ড. উষারঞ্জন ভট্টাচার্য। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ড. ভট্টাচার্য ইতিমধ্যে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তিনটি বই লিখে ফেলেছেন। নীল সোনালির বাণী: রবীন্দ্রনাথ ও অসম সম্পর্ক, রবীন্দ্রনাথ ও কুইনি, এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে রবীন্দ্রচর্চা।
সাহিত্য-সাধক-চরিতমালার জন্য ড. ভট্টাচার্য যে রবীন্দ্রজীবনী রচনা করেছেন তার সূচিতে আছে জীবনবৃত্ত, সৃষ্টিলোক (ক) ও সৃষ্টিলোক (খ)। সৃষ্টিলোক (ক)-এর বিষয় রবীন্দ্রনাথের কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। সৃষ্টিলোক (খ)-এর বিষয় রবীন্দ্রনাথের সংগীত, চিত্র, নৃত্য, ছন্দ ইত্যাদি। এ ছাড়াও ২৫৮ পৃষ্ঠার এই বইটির পরিশিষ্ট বিভাগে আছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক নিয়ে নানা তথ্য।
২০১৭ সালে পরিষদের কর্ম পরিষদের পক্ষ থেকে রবীন্দ্রজীবনী রচনার অনুরোধ জানানো হয় ড. ভট্টাচার্যকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "পরিষদের পক্ষ থেকে যখন সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা সিরিজে এক খণ্ডে রবীন্দ্র-জীবনী রচনার অনুরোধ আসে, সত্যি বলতে কী ভয়ই পেয়েছিলাম। আমায় সাহস জুগিয়েছেন অপ্রতিম মানুষ ও কবি শঙ্খ ঘোষ।" তিনি আরও বলেন, "আজ কয়েক জনের কথা খুব মনে পড়ছে। শঙ্খ ঘোষ, শিশিরকুমার দাস, অরুণকুমার বসু, আনিসুজ্জমান, হোমেন বরগোহাঞি, এবং আমার পিতৃদেব উমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। আজ তাঁরা নেই। তাঁরা এই বই দেখে খুশি হতেন।" অসমের বরাক উপত্যকার কৃতী সন্তান ড. ভট্টাচার্য এই গ্রন্থ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, "আমি দূরের পথিক। তবু আমার উপর ভরসা রাখার জন্য এই ভরসাকে নমস্কার। আমার মতো প্রান্তবাসী বাঙালিকে এমন মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎকে জানাই কৃতজ্ঞতা।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা প্রকাশ হতে শুরু করেছিল প্রায় আশি বছর আগে। সাহিত্য পরিষৎ তার জন্মলগ্ন থেকে প্রাচীন পুঁথি ও পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিল। তবে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ থেকে তারা উনিশ শতক নিয়ে চর্চায় মনোযোগী হয়ে ওঠে। এরপর এক সময় পরিষৎ কর্তৃপক্ষের মনে হল, খ্যাতকীর্তি অথচ বিস্মৃত বা অর্ধ-বিস্মৃত প্রয়াত সাহিত্য-সাধকদের জীবনচরিত প্রকাশ করতে হবে। এই প্রকল্পের আদর্শ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত 'মেন অব লেটার্স'-কে।
১৩৪৬ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে প্রকাশিত হল সাহিত্য-সাধক-চরিতমালার প্রথম গ্রন্থ। বিষয়: কালীপ্রসন্ন সিংহের জীবন ও সাহিত্যকর্ম। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একে-একে তিনি ৮৭টি পুস্তকে ১৪২ জন সাহিত্য-সাধকের জীবন ও সাহিত্যকর্ম তুলে ধরেছেন। সেই ধারা অব্যাহত রেখে নানা গুণিজনকে নিয়ে চরিতমালা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে এসেছে।
কিন্তু এই সমস্ত প্রচেষ্টায় একটি ত্রুটি ছিল বলে মনে পরিষৎ। কেননা চরিতমালা গ্রন্থ গত আট দশক ধরে প্রকাশিত হয়ে এলেও রবীন্দ্রনাথকে আজ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। অথচ এই পরিষদের সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের ছিল এক নিবিড় সম্পর্ক।
প্রথম চরিতমালা গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর অবশেষ আজ ৮৩ বছর পর পরিষদের চরিতমালায় স্থান পেলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।