মেটাবলিজম কি? মেটাবলিজম সম্পর্কে জানেন তো? । Nutritionist Aysha Siddika
#banglahealthtips
#nutritionistayshasiddika
মেটাবলিজম হল আপনার দেহের ক্যালোরি পোড়ানোর প্রক্রিয়া। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খাবারের মধ্যে থাকা উপাদান শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। মেটাবলিজম বা বিপাক একটি মেডিকেল পরিভাষা, যা সম্মিলিতভাবে আপনার শরীরের সমস্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে বুঝায়। আপনার মেটাবলিজম যত দ্রুত বা গতিশীল হবে, আপনার শরীর তত বেশি ক্যালরি হজম বা বার্ন করে শক্তি অর্জন করার উপযোগি হবে। অর্থাৎ, আমাদের শরীরের যন্ত্রগুলিকে চালু রাখতে প্রতিদিন যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে শক্তি তৈরি এবং ব্যয় হয় তাই হল মেটাবলিজম। আর শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন, তাই হল আমাদের মেটাবলিজম এর হার। তবে মেটাবলিজমের মাত্রা কতোটা হবে তা বয়স, শরীরের ওজন ও জিনের উপরে নির্ভর করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেটাবলিজমের মাধ্যমে ক্যালোরি বার্ন হয়। মেটাবলিজম বেশি হলে বেশি ক্যালোরি বার্ন হয়, খাদ্য দ্রুত হজম হয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং শরীরে মেদ বা চর্বি জমতে পারে না। আরো সহজ করে বললে, মেটাবলিজম ভাল হলে শরীরে মেদ বা চর্বি কমে কিন্তু শক্তি বৃদ্ধি পায়। আর মেটাবলিজম কম হলে কম শক্তি উৎপাদিত হয় এবং শরীরে মেদ জমা হতে থাকে। যাদের মেটাবলিজম শক্তি কম তারা যতই কম খাওয়াদাওয়া করুক না কেন, তাদের ওজন বাড়তে থাকবে।
যাদের শরীরে পেশির পরিমাণ বেশি আর মেদ কম, মেদবহুল মোটা গড়নের ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের মেটাবলিজম অনেক বেশি। কারণ, ফ্যাটের চেয়ে পেশিগুলিকে সচল রাখতে অনেক বেশি শক্তি ব্যয় হয়। আমরা আমাদের খাবারের মাধ্যমে যে পরিমাণ শক্তি পেলাম, যদি আমাদের শরীরযন্ত্রকে চালু রাখতে তার চেয়ে কম শক্তি খরচ হয়, তাহলে এই বাড়তি শক্তি মেদ বা চর্বি হয়ে শরীরের ভেতরে বাইরে নানা জায়গায় জমতে থাকে। আর যদি যতটা শক্তি পেলাম সারাদিনে তার চেয়ে বেশি শক্তি খরচ হয় তাহলে শরীরের ভিতরে জমে থাকা মেদ ঝরে যেতে থাকে। কারণ, শরীর ধীরে ধীরে জমে থাকা বাড়তি মেদ বা ফ্যাট থেকে এই শক্তি জোগাড় করে নেয়।
বিশ্রামে থাকলে কম শক্তি ব্যয় হয়। আর ব্যায়াম বা পরিশ্রমের কাজ করলে বেশি শক্তি ব্যয় হয়। এ কারণে বলা হয়, শরীরচর্চা করলে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া অনেক উন্নত হয়, শরীরের বাড়তি ওজনও ঝরে যায় ও শরীর সুস্থ থাকে।
মেটাবলিজমের কারণে প্রাণিদেহ টিকে থাকে ও বেড়ে ওঠে। দেহের গঠন ঠিক থাকে, পুনরুৎপাদনে সক্ষম হয় এবং পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বয়স ও লিঙ্গভেদে মেটাবলিজমের হার ভিন্ন হয়। এমনকি ওজনও মেটাবলিজমের হার ঠিক করে দেয়। স্বাস্থ্যকর মেটাবলিজম যথাযথ পুষ্টির ওপর নির্ভর করে।
মেটাবলিজমের প্রধান তিনটা উদ্দেশ্য হলো:
১. খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা।
২. প্রোটিন, লিপিড, নিউক্লিক এসিড ও কিছু শর্করা ধরনের খাদ্যকে দেহ গঠনের ব্লকে পরিবর্তিত করা; এবং
৩. দেহ থেকে নাইট্রোজেন ধরনের উপাদানকে বর্জ্য হিসাবে অপসারিত করা।
মেটাবলিক রেট বা বিপাকিয় হার
মেটাবলিজম হল আপনার কেমিকেল ইঞ্জিন যা আপনাকে জীবন্ত রাখে। মেটাবলিজমের গতি একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। যাদের মেটাবলিজমের গতি কম তাদের শেষ ভাগের জ্বালানি (ক্যালরি) চর্বি হিসেবে শরীরে জমা হতে থাকে। অন্যদিকে, যাদের মেটাবলিজম গতি বেশি, তারা বেশি পরিমাণ ক্যালরি বার্ন করতে পারে এবং তাদের শরীরে চর্বি জমার সম্ভাবনা কম থাকে। এই কারণেই কিছু মানুষকে দেখা যায়, যারা প্রচুর খাদ্য গ্রহন করতে পারে, অথচ তাদের শরীরে কোন চর্বি জমা হয় না। অন্যদিকে কম খাওয়ার পরও অনেককে মোটা হতে দেখা যায়।
মেটাবলিজমের গতিই সাধারণভাবে মেটাবলিক রেট হিসেবে পরিচিত। এটি হল একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনি কতটা ক্যালরি বার্ন করতে পারেন তার পরিমাণ। এটি ক্যালরি খরচ নামেও পরিচিত। তবে মেটাবলিজমের মাত্রা কতোটা হবে তা বয়স, শরীরের ওজন ও জিনের উপরে নির্ভর করে।
মেটাবলিক রেটকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:
ব্যাসাল মেটাবলিক রেট মৌলিক বিপাকিয় হার: আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন বা গভীর বিশ্রামে থাকেন এটি হল তখনকার মেটাবলিক রেট। এটা ঠিক করে আপনার শরীরের ম্যাক্সিমাম ক্যালরি খরচের জন্য কত মিনিমাম শক্তির দরকার হবে। এই রেট অনুযায়ী বেঁচে থাকার জন্য আপনি প্রতিদিন দেহের ৪০ থেকে ৭০ পার্সেন্ট শক্তি খরচ করেন। এটি হল মিনিমাম বা সর্বনিম্ন মেটাবলিক রেট, যা আপনার শরীর উষ্ণ রাখা, লাঙ্স ব্রিথিং, হার্ট পাম্পিং এবং ব্রেইন সচল রাখার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। মেটাবলিজমের এই হার আপনার জীবন যাপনের ধরনের ওপরও নির্ভর করে; আপনি কতটা সক্রিয় তার ওপর। কেউ যদি বলে আপনার মেটাবলিজম কম - এর অর্থ হচ্ছে আপনার বিএমআর কম।
বিশ্রামের বিপাকীয় হার বা জবংঃরহম সবঃধনড়ষরপ ৎধঃব (জগজ): এটিও বিশ্রামে থাকাকালীন সর্বনিম্ন বিপাকীয় হার, যা আপনার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন হার। এতে মোট ক্যালরির ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচ ধরা হয়।
খাদ্যে তাপীয় প্রভাব বা ঞযবৎসরপ বভভবপঃ ড়ভ ভড়ড়ফ (ঞঊঋ): শরীরে খাদ্য পরিপাক এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় ক্যালোরি বার্নের পরিমাণ বের করাই হল খাদ্যে থার্মিক বা তাপীয় প্রভাব।
থার্মিক ইফেক্ট অব এক্সারসাইজ (ঞঊঊ) : শরীর চর্চার সময় ক্যালরি পোড়ানোর পরিমাণ নির্ণয়।
শরীর চর্চা বহির্ভুত শারীরিক কার্যকলাপ বা ঘড়হ-বীবৎপরংব ধপঃরারঃু ঃযবৎসড়মবহবংরং (ঘঊঅঞ) : শরীরচর্চা ব্যতিত অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপের দ্বারা কতটুকু ক্যালরি বার্ন হয় তা নিরূপন এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে চঞ্চলতা, অস্থিরতা, অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন, দাঁড়ানো এবং হাঁটা-চলাও রয়েছে।
সারাংশ: মেটাবলিক রেট বা বিপাকীয় হার শরীরের ক্যালোরি খরচের হিসাব নামে পরিচিত। এটা হল একটি নির্দিষ্ট সময়ে শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর সংখ্যা বা পরিমাণ।
যেসব বিষয় মেটাবলিজম নির্ধারণ করে
বেশ কিছু বিষয় আপনার মেটাবলিক রেটকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আমরা এখানে আলোচনা করছি:
Информация по комментариям в разработке