Скачать или смотреть হিন্দি ভাষার আগ্রাসন ও বাংলা ভাষার বাজার|| Hindi imposition and market of bengali language

না,জোর করে পশ্চিমবঙ্গে কাউকে বাংলা শেখাতে চাই না,বাংলা বলতেও বাধ্য করতে চাই না। আমরা চাই,পশ্চিমবঙ্গের সরকার এ রাজ্যে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাব বলয় গঠনে যত্নবান হোক। জোর করে শুধু বাঙালি কেন কোনো জাতিসত্তার হওয়া বা করা যায় না। বাংলায় বাইরে থেকে আসা বহু মানুষ কালক্রমে বাঙালি হয়ে গেছে,সেকি জোর করে হয়েছে? এটা হয়েছে,বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাব বলয়ে দীর্ঘ কয়েক প্রজন্ম লালিত পালিত হওয়ার ফলে। বঙ্গদেশে বাংলা ভাষা ও বাঙালির সংস্কৃতির প্রভাব বলয় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এর ব্যতিক্রম হওয়াটাই অস্বাভাবিক। কোনো একটি ভূখণ্ডে কোনো একটি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাব বলয় তৈরি হয় প্রশাসনিক,সামাজিক,বানিজ্যিক ও ধর্মীয় কারণে। খণ্ড-বিখণ্ড বঙ্গদেশে উক্ত কারণগুলোর নিয়ন্ত্রক আজ বাঙালি নয়। সর্বক্ষেত্রে অবাঙালিদের কাছে বাঙালিকে প্রতিনিয়ত জমি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। বাঙালি হিন্দু বা মুসলমানের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা ভাষা 'সংস্কৃত' বা 'আরবি'-র মত পবিত্র ভাষাও নয়। সেদিক থেকেও বঙ্গদেশে বাংলা ভাষা মর্যাদা হীন। সব ভাষার মতো বাংলা ভাষারও নানা উপভাষা আছে,তেমনি আছে মান্য রূপ--এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। সারা পৃথিবীতে এই মান্য বাংলা বোঝে পঁচিশ-সাতাশ কোটির ওপর বাঙালি। অথচ এই ভাষা বা তার উপভাষার সাহিত্য,গান,সিনেমা ইত্যাদি হিন্দি আগ্রাসনে বাজার হারাচ্ছে। শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশেও। হিন্দির এই বাজার তার উৎকর্ষতার গুণে বা অহিন্দিভাষীদের ভালোবাসার জন্য তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক প্রশাসনিক,বানিজ্যিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। ১৯৪৭-র আগে তো হিন্দির এই রমরমা ছিল না। সারা পৃথিবীতে ইংরেজি ভাষার এই যে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠা,এটা কি ইংরেজি ভাষার শুধু উৎকর্ষতার জন্য সম্ভব হয়েছে ? ফরাসি, জার্মান,ইতালিয়ান,রুশ ইত্যাদি ভাষা গুলোর সাহিত্য,দর্শন,বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রে পারদর্শিতা ইংরেজির থেকে কোনো অংশে কম নেই। তবু ইংরেজি আন্তর্জাতিক হতে পেরেছ,কারণ ইংরেজি বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহযোগিতা পেয়েছে। কোনো ভাষা ক্রম উৎকর্ষতা লাভ করে তার বহুল ব্যবহারে। ভাষা জোর করে ভাষা চাপাতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। তার উদাহরণ বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা জোর করে চাপানোর প্রশ্নই নেই। বাংলা ভাষার ভিত্তিতে গঠিত এই রাজ্যটিতে স্বাভাবিক ভাবেই বাংলা ভাষার প্রভাব বলয় থাকা উচিত। এই প্রভাব বলয়টি না থাকা কোনো ঔদার্য নয়, বরং এটা অন্য ভাষার আগ্রাসনের কাছে বাংলা ভাষার পরাজয়ের চিহ্ন। এই পরাজয়কে সারা ভারতজুড়ে স্বাভাবিক ব্যাপার বলে তুলে ধরা হচ্ছে,হিন্দির প্রভাব বলয় গড়ে তোলার কর্মসূচিতে। এই কর্মসূচিতে দেখিয়ে দেওয়া গেছে,কিভাবে জোর না খাটিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে,সুকৌশলে দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমে অন্য ভাষার বাজার দখল করা যায়। তার জলজ্যান্ত ফলাফল ভারত জুড়ে হিন্দির আগ্রাসন। বর্তমানে বিজেপি হিন্দিকে গৌরবান্বিত করার জন্য একে "হিন্দুর ভাষা" হিসেবেও তুলে ধরছে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই,আমার বাজার,জীবন-জীবিকার রক্ষার লড়াই। আমার জাতিসত্তা রক্ষার লড়াই।