শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় মশাইয়ের কৃপায় আমি অজিত কুমার বন্দোপাধ্যায়, ব্যোমকেশ বক্সীর সহচর, আজ আপনাদের সামনে ব্যোমকেশের এমনই এক অনাবিষ্কৃত রহস্যের জাল বুনবো, যা আপনাদের মস্তিষ্কের তন্তুকেও হয়তো নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। সেদিনের কথা আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে, যখন ব্যোমকেশ এক অদ্ভুত চিঠি হাতে নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল, তার কপালের ভাঁজগুলো যেন কোনো দুর্বোধ্য সংকেত পাঠ করছিল।
তখন সবে হেমন্তের শুরু। কলকাতার বাতাসে একটা হালকা হিমেল পরশ লেগেছে, যা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের নরম রোদ আমাদের বালিগঞ্জের ভাড়াবাড়ির দক্ষিণমুখী জানলা দিয়ে এসে ব্যোমকেশের পড়ার টেবিলে খেলা করছিল। সেই আলোয় তার তীক্ষ্ণ চোখ দুটোকে আরও উজ্জ্বল, আরও রহস্যময় দেখাচ্ছিল। আমি সবে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে খবরের কাগজটা খুলেছি, 'দৈনিক বসুমতী'র পাতায় রাজনৈতিক অস্থিরতা আর বিশ্বযুদ্ধের কালো ছায়ার খবরগুলো চোখ বোলাচ্ছিলাম, এমন সময় ব্যোমকেশ হাতের চিঠিটা টেবিলে রেখে গম্ভীর মুখে বলল, "অজিত, একটা নতুন কেস মনে হচ্ছে। বেশ অদ্ভুত ধরনের। সাধারণ চুরির ঘটনা নয়, আবার খুনও নয়, অথচ কেমন যেন একটা চাপা উত্তেজনা আছে।"
আমি চায়ের কাপটা টোল টেবিলের ওপর রেখে ব্যোমকেশের দিকে তাকালাম। ওর মুখের এমন গাম্ভীর্য দেখলেই বুঝতাম, কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, তার বুদ্ধির খোরাক যোগাবে এমন কিছু একটা ঘটেছে। "কী ব্যাপার ব্যোমকেশ? সকাল সকাল আবার কোন রহস্যের গন্ধ পেলে? নতুন কোনো ভূত-পেত্নীর উপদ্রব নাকি?" আমি খানিকটা রসিকতার ছলেই বললাম।
ব্যোমকেশ একটা মৃদু হাসি হাসল, যা তার গাম্ভীর্যকে বিন্দুমাত্র কমাতে পারল না। সে চিঠিটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। চিঠিটা ছিল সংক্ষিপ্ত, মাত্র কয়েকটি বাক্য, কিন্তু তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল এক গভীর রহস্যের ইশারা। প্রেরকের নাম ছিল না, শুধু নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা ছিল "এক হতভাগিনী"। চিঠির কাগজটা ছিল হালকা গোলাপী রঙের, সুগন্ধি, যা থেকে বোঝা যাচ্ছিল প্রেরিকা একজন রুচিশীল মহিলা, হয়তো কোনো অভিজাত পরিবারের সদস্য। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, প্রেরিকা এক অদৃশ্য মায়াজালে আটকা পড়েছেন, যেখানে প্রতিদিন সকালে তার ঘরে একটি করে অচেনা জিনিস রেখে যাওয়া হচ্ছে – কখনও একটি পাখির পালক, কখনও একটি শুকনো গোলাপের পাপড়ি, আবার কখনও একটি মসৃণ পাথরের টুকরো। সবচেয়ে রহস্যময় ব্যাপার হলো, তার ফ্ল্যাটটি তিনতলায়, এবং সে নিজে ছাড়া আর কারো কাছে চাবি নেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই জিনিসগুলো রাখার পর কোনো সুরক্ষাকর্মীও কোনো আগন্তুককে দেখেননি, এমনকি ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরাতেও কোনো সন্দেহজনক গতিবিধি ধরা পড়েনি।
Byomkesh Bakshi | রহস্যময়ী মায়াজাল | অদৃশ্য জাল | Detective Story | সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ
please like, command, subscribe 🙏🙏🙏
Информация по комментариям в разработке