পৃথিবীর বুকে জেগে ওঠা নতুন এক মহাদেশ | 8th Continent Zealandia | আমাদের পৃথিবী,
সমুদ্রের তলায় লুকিয়ে আছে কতোই না ঐশ্বর্য, আর কতোই না রহস্য! এভাবে সমুদ্রের তলায় রহস্যের সন্ধান করতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা এক চরম বিস্ময়ের খোঁজ পেলেন, যা ছিলো এক কথায় অবিশ্বাস্য! প্রথম দিকে অনেকেই দ্বিধান্বিত ছিলেন এই ভেবে যে, সত্যিই কি তারা আবিষ্কার করতে চলেছেন কোটি কোটি বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে শুয়ে থাকা নতুন এক মহাদেশ!
‘জিল্যান্ডিয়া’ হলো সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীদের সন্ধান পাওয়া এক নতুন অঞ্চলের নাম। গবেষকদের দাবি, মহাদেশ হিসেব স্বীকৃতি পাওয়ার সব ধরনের যোগ্যতাই রয়েছে এই অঞ্চলটির। এটি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব পাশে অবস্থিতো। এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অ্যান্টার্কটিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া- এই শাতটি মহাদেশের বাইরে অষ্টম মহাদেশ হিসেবে ‘জিল্যান্ডিয়া’কে তালিকা ভুক্ত করার জন্য বিজ্ঞানীরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নতুন মহাদেশটি কোথায় অবস্থিত? কবে, কোথায়, কীভাবে এর জন্ম হলো? কেনই বা এই নামকরণ? কেমন হবে মহাদেশটির আকার? আয়তনের দিক থেকে কি অন্য সব মহাদেশের সমকক্ষ হবে, নাকি শুধু ক্ষুদ্র একটি মহাদেশ হিসেবে এই পৃথিবীর বুকে তার অস্তিত্ব জানান দেবে জিল্যান্ডিয়া? কী জন্যই বা বিজ্ঞানীরা এতোটা উঠে পড়ে লেগেছেন একে মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য? চলুন তাহলে মনের মধ্যে জমে থাকা এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
উনিশ শো পোচানব্বই সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ব্রুস লুয়েন্ডিক ‘জিল্যান্ডিয়া’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। উনিশ শো ষাট সালে সমুদ্রের নিচে তেলের খনি অনু সন্ধানের সময় এই মহাদেশের অস্তিত্ব খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। তার পর জাতি সংঘের তত্ত্বাবধানে আরো বিস্তৃত গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এ সময় বিজ্ঞানীদের হাতে এমন কিছু তথ্য আসে যার উপর ভিত্তি করে তারা জিল্যান্ডিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
জিল্যান্ডিয়া একটি প্রায় নিমজ্জিত মহাদেশীয় ভূ খণ্ড। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে এক বিশাল অঞ্চল এই জিল্যান্ডিয়া, এটি মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। জিল্যান্ডিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলই পানির নিচে নিমজ্জিত। নিউজিল্যান্ড হচ্ছে এই মহাদেশের জেগে থাকা একমাত্র পবর্তের চূড়া।
সমুদ্র তলদেশ থেকে প্রায় বারো হাজার ২ শো সওত্তর ফুট উচ্চতায় এই মহাদেশের অবস্থান। নিউজিল্যান্ডের জি এন এস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দীর্ঘ ছয় বছরের গবেষণায় উঠে আসে মহাদেশটি সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য। মহাদেশটি খুবই সম্পদশালী। এর সমুদ্রের নিচে রয়েছে বিপুল পরিমাণের জীবাশ্ম জ্বালানি, যা পৃথিবীর ভবিষ্যতের দীর্ঘ সময়ের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এর মূল্য হবে বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্য মতে, ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকার চেয়ে একেবারেই আলাদা হবে এই জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ।
আপাতদৃষ্টিতে জিল্যান্ডিয়াকে বৃহৎ এবং সমন্বিত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। এর অর্থ দাঁড়ায়, জিল্যান্ডিয়াকে মহাদেশ হিসেবে দাবি করা যায় না। এমন যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন একদল গবেষক। কিন্তু সম্প্রতি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এবং সমুদ্র তলের মাধ্যাকর্ষণ মানচিত্র ব্যবহার করে জিল্যান্ডিয়াকে একটি সমন্বিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিতো করা হয়েছে। সমুদ্রের প্রায় ৩ হাজার ২ শো আশি ফুট নিচে নতুন এই মহাদেশটির সীমারেখা দেখতে পাওয়ার পর থেকেই তার উপর ভিত্তি করে ভূতাত্ত্বিকগণ জিল্যান্ডিয়াকে মহাদেশ হিসেবে মেনে নেয়া যায় বলে জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন।
জিল্যান্ডিয়ার কিছু মাটি ও পাথরের নমুনা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। এর মাটির সাথে মহাদেশ ভিত্তিক যে ভূখণ্ড রয়েছে তার আশ্চর্য জনক মিল রয়েছে। কিন্তু সমুদ্রের তলদেশের গঠনের সাথে এই মাটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই জিল্যান্ডিয়াকে মহাদেশ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এগারো জন ভূতাত্ত্বিকের দীর্ঘ গবেষণার ফলা ফল এই যে, একটি মহাদেশ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান জিল্যান্ডিয়ার। এর মধ্যে আছে ভূখণ্ডের উচ্চতা, মহাসাগরীয় ভূত্বকের তুলনায় উচ্চ অবস্থান, বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ডের আগ্নেয় গিরি, রূপান্তরিত ও পাললিক শিলার উপস্থিতি এবং সমুদ্রের তলদেশের ঘনত্ব গতানুগতিকতার চেয়ে বেশি- এসব বৈশিষ্ট্য। ফলে মহাদেশ হিসেবে বিবেচিত হবার জন্য অবস্থানে আছে জিল্যান্ডিয়া।
গবেষণায় অংশ গ্রহণকারী বিজ্ঞানী হামিশ ক্যাম্পবেল ২ হাজার শাত সালে তার প্রকাশিত হওয়া ‘ইন সার্চ অব এনশিয়েন্ট নিউজিল্যান্ড’ শীর্ষক বইয়ে নতুন এই মহাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, “আগে পুরো জিল্যান্ডিয়া মহাদেশটিই জলের তলায় ছিলো, কিন্তু পরবর্তীকালে প্লেট মুভমেন্টের ফলে জলের উপরে উঠে আসে নিউজিল্যান্ড। বর্তমানে নিউজিল্যান্ড এবং প্রশান্ত মহাসাগরের আরো একটি দ্বীপ রাষ্ট্র ফরাসি উপনিবেশ নিউ ক্যালিডোনিয়ার মধ্যবর্তী অংশেই জিল্যান্ডিয়ার অবস্থান।” নিউজিল্যান্ডের ভূতত্ত্ববিদ নিক মরটিমার মতে, জিল্যান্ডিয়া নিয়ে বিজ্ঞানীরা দুই দশকের বেশি সময় নিয়ে গবেষণা করছেন।
মরটিমা আরো বলেন, একটি মহাদেশ হতে যা দরকার তার চেয়ে বেশি বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব রয়েছে এই জিল্যান্ডিয়ার। মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে প্রয়োজনীয় সকল কোটা পূরণ করেছে এই ভূখণ্ড। তাই একে মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায় বলেই তার অভিমত।
bangla infotainment,infotainment,মহাদেশ,অষ্টম মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া,সাগর তলের হারানো মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া,zealandia,zealand,জিল্যান্ড,জিল্যান্ডিয়া,জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ,বিশ্বের অষ্টম মহাদেশ,নতুন মহাদেশ জিল্যান্ডিয়া,new continent,পানির নীচে মহাদেশ,8th Continent Zealandia,পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ,Zealandia,8th Continent,zealandia continent,zealandia mapping,zealandia documentary,জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ,zealandia new continent,Zealandia Continent,zealandia history
Информация по комментариям в разработке