Скачать или смотреть টাকার মান নিয়ে কেন ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা (Expectation of Money's Value)টাকার মান বাড়লে কমলে কি হয়

ব্যাংকিং, অর্থনীতি এবং ব্যবসা সংক্রান্ত একমাত্র চ্যানেল। নিয়মিত ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইভ করে রাখুন।

টাকার মান নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা কেন ভিন্ন ভিন্ন হয়ঃ

টেন মিনিট ব্যাকিং এর পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগতম। আজ আমরা জানবো টাকার মান নিয়ে কেন আমাদের প্রত্যাশা ভিন্ন ভিন্ন।

বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা চায় টাকা দুর্বল থাকুক। আমাদানীকারকেরা চায় টাকা শক্তিশালী হোক। আবার রপ্তানিকারকেরা চায় টাকা দুর্বল হোক। এছাড়াও টাকার মান নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যেও দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই টাকার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়ে সময়ে প্রয়োজন অনুয়ায়ী টাকাকে শক্তিশালী বা দুর্বল করার উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আমাদের মনে হয়তো নতুন একটা প্রশ্ন জেগেছে কোন দেশ কি স্বইচ্ছায় নিজ দেশের মুদ্রাকে দুর্বল করে থাকে। আমারা সেই ইস্যুটা আগামী পর্বে কাভার করবো। তাহলে আমাদের আজকের বিষয়টি শুরু করা যাক।

প্রথমে একটু ভাবুনতো প্রবাসী ভাইদের কথা। তারা যখন দেশের বাহিরে কাজ করে তখন তারা কি উপার্জন করে। তারা কিন্তু টাকা উপার্জন করে না। তার কেউ ডলার, কেউ ইউরো, কেউ রিয়েল, কেউ দেহরাম বা অন্যান্য মুদ্রায় অর্থ উপার্জন করে। তাহলে সহজ কথায় বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ উপার্জন করে। এই অর্থ পরবর্তীতে তারা দেশে পাঠায়। দেশে তাদের পরিবার প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকা পেয়ে থাকে। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হয়ে টাকায় রূপান্তরিত হয়। তাই প্রবাসীদের প্রকৃত আয় বিনিময় হারের উপর নির্ভর করে।

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। মনে করুণ একজন প্রবাসী প্রতিমাসে ১০০০ ডলার পরিবারের নিকট পাঠায়। বর্তমানে এক ডলার সমান ৮৫ টাকার কাছাকাছি। তাহলে প্রবাসী দেশে ১০০০ ডলার পাঠালে তার পরিবার ১০০০*৮৫ অর্থাৎ ৮৫০০০ হাজার টাকা পাবে। এখন মনে করুণ কিছুদিন পরে এক ডলার সমান হয়ে গেল ৮০ টাকা। সেক্ষেত্রে প্রবাসী ১০০০ ডলার পাঠানোর পর তার পরিবার ১০০০*৮০ অর্থাৎ ৮০০০০ টাকা পাবে। যদিও বিদেশে তার কোন বেতন হৃাস পায়নি, কিন্তু টাকার মান শক্তিশালী হওয়ায় অর্থাৎ ১ ডলার সমান বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা হওয়ায় দেশে তার পরিবার ৫০০০ টাকা কম টাকা পাবে।

এবার আমরা একটু ভিন্নভাবে কল্পনা করি। মনে করুণ টাকা দুর্বল হয়ে এক ডলার= ৯০ টাকা হয়ে গেল। সেক্ষেত্রে ১০০০ ডলার পাঠালে তার পরিবার ১০০০*৯০ অর্থাৎ ৯০০০০ টাকা পাবে। তাহলে সংক্ষেপে বললে বিষয়টি কি দাড়ায় দেখা যাক। টাকা দুর্বল হলে প্রবাসীদের প্রকৃত আয় বেড়ে যায়। আর টাকা শক্তিশালী হলে প্রবাসীদের আয় কমে যায়। এই উদাহরণটি যেকোন দেশের প্রবাসীদের জন্য প্রযোজ্য। তাহলে বলুনতো আপনি প্রবাসী হলে কি আশা করতেন। অবশ্যই চাইতেন টাকা যেন দুর্বল থাকুক। এতে করে দেশে আপনার পরিবার বেশি পরিমান টাকা পাবে। তাহলে বুঝা গেল কেন প্রবাসীরা চায় টাকা দুর্বল থাকুক।

এবার আসা যাক কেন আমদানীকাকেরা চায় টাকা শক্তিশালী হোক। আমরা পত্র পত্রিকায় মাঝে মাঝে দেখতে পাই আমদানীকাকেরা সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে যেন টাকাকে শক্তিশালী করা হয়। তাহলে জানা যাক এর পিছনের উদ্দেশ্যটি। বিদেশ থেকে দেশে অধিকাংশ পণ্য আমদানী করতে হয় ডলার ব্যবহার করে। মনে করুন একজন আমদানীকারক বিদেশ থেকে একটি পণ্য দেশে আমদানী করতে চায় যার মূল্য এক ডলার। যেহেতু ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট হয়, তাই আমদানীকারকে ব্যাংক থেকে টাকা দিয়ে ডলার ক্রয় করে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। পণ্যটির মূল্য এক ডলার হলে ৮৫ টাকা ব্যয় করে পণ্যটি ক্রয় করতে হবে। যদি ১ ডলার সমান বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা হয়ে যায়, তাহলে বিদেশে পণ্যটির দাম না বাড়লেও আমদানীকারক কর্তৃক ১ ডলারের পণ্যটি এখন ৯০ টাকা খরচ করে ক্রয় করতে হবে। অর্থাৎ টাকা দুর্বল হওয়ায় বিদেশী পণ্যটি ক্রয়মূল্য বেড়ে যাবে। এতে করে আমদানীকারককে এখন পূর্বের চেয়ে বেশি দামে পণ্যটি বিক্রয় করতে হবে। আমরা জানি পণ্যের দাম বাড়লে, পণ্যের বিক্রি কমে যায়। আর পণ্যের বিক্রি কমলে, ব্যবসায় লাভ কমে যায়।

একই ভাবে যদি ১ ডলার সমান বিনিময় মূল্য ৮০ টাকা হয়ে যায়, তাহলে বিদেশী পণ্যটি ক্রয় করতে আমদানীকারকের ৫ টাকা কম খরচ হবে। এতে করে কম দামে অধিক পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায় আয় বাড়বে। অর্থাৎ টাকার মান বাড়লে বা শক্তিশালী হলে আমদানীকারকদের ব্যবসা অধিক লাভজনক হয়। তাহলে আমরা বুঝতে পেরেছি কেন আমদানীকারকেরা সব সময় চায় টাকা শক্তিশালী থাকুক। এছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতি বছর বিদেশ থেকে আমাদেরকে ৫০-৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য আমদানী করতে হয়। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন-তেল, চিনি, ডাল, গম ইত্যাদি। এছাড়া যানবাহন এবং শিল্পকারখানা জ¦ালানী তেল, লোহা, তামা, ইস্পাত, টিন, গাড়ীসহ অসংখ্য জিনিস অন্তভুক্ত রয়েছে। তাই টাকার মান কমে অনেক গেলে বা দুর্বল হয়ে গেলে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম বেড়ে যাবে এবং বাজারে মুল্যস্ফীতি হবে।

তাহলে বাকী থাকলো রপ্তানিকারক। রপ্তানিকারকেরা বিদেশে পণ্য বিক্রি করে থাকে। যখন টাকা দুর্বল হবে, তখন বিদেশী ক্রেতার নিকট বাংলাদেশী পণ্যের দাম কমে যাবে। এতে করে বিদেশী ক্রেতা অন্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে বেশি পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হবে। ফলে রপ্তানিকারকেরা অধিক পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। তাই রপ্তানিকারকেরা সবসময় চায় টাকার মান দুর্বল থাকুক। তাহলে আমরা এতক্ষণে নিশ্চয় জানতে পেরেছি টাকার মান নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা ভিন্ন ভিন্ন কেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সময়ে সময়ে টাকা শক্তিশালী বা দুর্বল করার জন্য নানা পদক্ষেপ হাতে নিতে হয়। টাকা দুর্বল হলে প্রবাসীরা উপকৃত হবে এবং রপ্তানি বাড়বে। কিন্তু টাকা অত্যধিক দুর্বল হলে আমদানী ব্যয় বেড়ে গিয়ে বাজারে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। আবার টাকা অধিক শক্তিশালী হলে দেশে আমদানীকৃত পণ্য বেড়ে যাবে এবং দেশীয় শিল্পকারখানা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই এখানে একটা শাখের করাতের মত অবস্থা থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মূল্যস্ফীতি, প্রবাসীদের স্বার্থ এবং দেশের রপ্তানিকে বিবেচনায় নিয়ে অনেক কৌশল অবলম্বন বা ট্রেড অফ করতে হয়।