বাংলাদেশ ও মিয়ানমার—দুই দেশের সামরিক শক্তি তুলনা করতে গেলে অনেক দিক বিবেচনা করতে হয়: সৈন্যবাহিনী, অস্ত্রনির্ভর উপাদান (ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, নৌবাহিনী), বাজেট, ভৌগোলিক সুবিধা, অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও আধুনিকায়ন পরিকল্পনা ইত্যাদি।
সার্বিক র্যাংকিং ও সামর্থ্য
Global Firepower (GFP)-এর সাম্প্রতিক র্যাংকিং অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৩৫তম স্থানে আছে সামরিক শক্তিতে।
একই সময়ে, মিয়ানমার কিছুটা আগেই—বাংলাদেশের তুলনায় সামরিক শক্তিতে একটু এগিয়ে আছে র্যাংকিং-এ।
সৈন্যবাহিনী ও জনবল
বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশ মিয়ানমার
সক্রিয় সৈনিক সংখ্যা (Active Personnel) প্রায় ১৬০,০০০ প্রায় ৩০০,০০০+
রিজার্ভ ও প্যারামিলিটারী বাহিনী রিজার্ভ ও প্যারামিলিটারী সংক্রান্ত কিছু জনবল আছে, বিশেষ করে করোনা বাহিনী, বিজিবি, র্যাব ইত্যাদি। মিয়ানমার—রিজার্ভ ও কনসক্রিপশন ব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি; অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বিদ্রোহ মোকাবেলায় প্যারামিলিটারী/আধাসামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অস্ত্র ও যান্ত্রিক সক্ষমতা
ট্যাঙ্ক ও যানবাহন:
মিয়ানমারে ট্যাঙ্ক সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি; বাংলাদেশে কিছুটা কম কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নতুন অর্জন ও আধুনিকায়ন প্রচেষ্টা চলছে।
বিমান বাহিনী ও যুদ্ধবিমান:
বাংলাদেশে মোট বিমানবাহিনীর সংখ্যা ও ধরণের ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে—যদিও খুব সমসাময়িক প্রযুক্তিতে কিছুটা পিছিয়ে আছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
মিয়ানমারও যুদ্ধবিমান ক্রয় ও হেলিকপ্টার নানা উৎস থেকে নিচ্ছে; অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ ও সীমান্ত সংঘর্ষে এদের ভূমিকা বেশি।
নৌবাহিনী:
বাংলাদেশের নৌবাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে সাবমেরিন অর্জন করেছে এবং প্যাট্রোলোয়ার জাহাজ, ফ্রিগেট ইত্যাদিতে সক্ষমতা বাড়ছে।
মিয়ানমারের নৌবাহিনী সংখ্যায় বেশি নাও হতে পারে, কিন্তু সীমান্তবর্তী জলসীমা নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ নদী ও উপকূল অঞ্চলের নিরাপত্তায় তারা বেশি সক্রিয়।
বাজেট ও আধুনিকায়ন
বাংলাদেশের মিলিটারী বাজেট: সাম্প্রতিক তথ্য মতে বাজেট রয়েছে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পর্যায়ে; অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বৃদ্ধির সাথে সাথে সামরিক খরচও সময়ের সঙ্গে বাড়ছে।
মিয়ানমারের বাজেট: বিশ্বস্ত উৎস অনুযায়ী মিয়ানমারের সামরিক বাজেট তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি বা বেশ কিছু ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা ও অস্ত্র আমদানিতে বেশি খরচ হয়।
আধুনিকায়ন পরিকল্পনা:
বাংলাদেশে “Forces Goal 2030” নামে একটি বড় পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে তিন বাহিনীর (থল, নৌ, বিমান) আধুনিকায়ন, অস্ত্র উপাদান বাড়ানো, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়ন ও ড্রোন, রাডার, নাবিকীয় সক্ষমতার উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত।
মিয়ানমারও বিদেশ থেকে অস্ত্র ও প্রযুক্তি আমদানি করছে, বিশেষত রাশিয়া ও চীন থেকে; অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও বিদ্রোহ মোকাবেলায় তাদের প্রয়োজন ও দিকনির্দেশনা এই আমদানিতে বেশি।
ভৌগোলিক ও স্ট্র্যাটেজিক দিক
ভৌগোলিক অবস্থান:
বাংলাদেশ উপকূলপ্রধান দেশ, বঙ্গোপসাগর সমীপে; সমুদ্রসীমা, উপকূল ও দ্বীপপন্তের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়ানমার উত্তর, উত্তরপূর্ব ও পার্শববর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের সাথে সীমান্ত রয়েছে, বিভিন্ন নৃজাতিগত গোষ্ঠীর বিদ্রোহ ও সংহতির সমস্যা রয়েছে, ভেতর সন্ত্রাস, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড অনেক বেশি।
অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশে সীমান্ত দূষণ, মিয়ানমার থেকে শরণার্থী সমস্যা, গোপন সংঘটিত অপরাধ ইত্যাদি রয়েছে।
মিয়ানমারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক অভ্যুত্থান, ethinic armed groups-এর বিদ্রোহ যা বহু অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ সৃষ্টি করছে।
শক্তি ও সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশ:
শক্তি: নৌবাহিনী ও সামুদ্রিক নিরাপত্তায় সদ্য সাবমেরিন অর্জন, পর্তুগীজ ও চীনা সহায়তায় নৌযান নির্মাণ বৃদ্ধি, শান্তি রক্ষা মিশনগুলোতে অভিজ্ঞতা; প্যারামিলিটারী বাহিনীর বড় জনবল পাওয়া।
সীমাবদ্ধতা: অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও সামরিক প্রযুক্তিতে কিছুটা পিছিয়ে; অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো ও শিল্পায়ন সীমাবদ্ধ, দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি কম হতে পারে; বাজেট বৃহত্তর হলেও ব্যায়বহুল আধুনিক প্রযুক্তি অর্জন ও রক্ষণাবেক্ষণ একটি চ্যালেঞ্জ।
মিয়ানমার:
শক্তি: বড় সেনাবাহিনী, অভ্যন্তরীণ সংকটে অভিজ্ঞতা; কঠিন ভূগোল, সীমান্ত সংঘাত মোকাবেলায় প্রস্তুতিপর্ব; বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির সক্ষমতা; রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনী দৃঢ়ভাবে নিয়োজিত।
সীমাবদ্ধতা: অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও বিদ্রোহ গোষ্ঠীর কারণে সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ; আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি; প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বড় খরচ; প্রযুক্তিতে পুরনো বা মিক্সড স্ট্যান্ডার্ড থাকতে পারে।
কে কতটা এগিয়ে?
সব মিলিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার সামরিক শক্তি ও অস্ত্র প্রাপ্যতার দিক থেকে বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে আছে, বিশেষত সংখ্যাগত সৈন্যবাহিনী, অস্ত্রের বৈচিত্র্য, অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ পরিস্থিতি ও অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে। তবে, বাংলাদেশ উন্নয়নের ধাপ ধরে ধীরে ধীরে আধুনিকায়ন করছে, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী অংশে কিছু অর্জন হয়েছে, শান্তি রক্ষার মিশন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এক ধরণের “ন্যায্য কণ্ঠস্বর” পেয়েছে, যা কেবল সংখ্যায় নয়, নীতিগত ও কূটনৈতিকভাবে শক্তি হিসেবে কাজ করে।
Информация по комментариям в разработке