ফার্মের মুরগীকে চামড়া শিল্পের বর্জ্য খাওয়ানো হয়। এসব বর্জ্যে আছে বিষাক্ত ক্রমিয়াম। যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মুরগি রান্না করলেও এই ক্রমিয়াম নষ্ট হয় না। কারণ এর তাপ সহনীয় ক্ষমতা হলো ২৯০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট।অন্যদিকে আমরা রান্না করি মাত্র ১০০ -১৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটে।
যার দরুন, বিষাক্ত ক্রমিয়াম মুরগির মাংস থেকে আমাদের দেহে প্রবেশ করে কিডনি, লিভার অকেজো করে দিতে পারে। এছাড়া এই বিষাক্ত ক্রমিয়াম দেহের কোষ নষ্ট করে দেয় যা পরবর্তীতে ক্যানসার সৃষ্টি করে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবুল হোসেন তার গবেষণায় দেখতে পান প্রতি ১০০০ গ্রাম মুরগীর মাংসে ক্রমিয়াম আছে ৩৫০মাইক্রোগ্রাম।
হাড়ে ক্রমিয়াম আছে ২০০০ মাইক্রো গ্রাম। কলিজায় ক্রমিয়াম আছে ৬১২ মাইক্রো গ্রাম। মগজে আছে ৪,৫২০ মাইক্রো গ্রাম। রক্তে আছে ৭৯০ মাইক্রো গ্রাম ক্রমিয়াম।
তবে সরকারের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ব্রয়লার মুরগি খাদ্য হিসেবে ‘নিরাপদ’, এতে জনস্বাস্থ্যেরও ‘কোনো ঝুঁকি নেই’।
সরকারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্রয়লার মুরগিতে ১০ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও তিনটি ভারী ধাতুর উপস্থিতি মিললেও তা মানুষের জন্য ঝুঁকির মাত্রার অনেক নিচে রয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “পোল্ট্রি মুরগিতে ক্ষতিকর পদার্থ থাকার কথা প্রচার হওয়ায় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, ২০২০ সালে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে পুষ্টি সমৃদ্ধ ব্রয়লার মাংস খাওয়া অনেক কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে মুরগির মাংস নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়।”
ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে, কলিজা, কিডনি, গিজার্ড (গিলা) ও মুরগির খাদ্যে কী পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতু আছে তা নির্ণয় করতেই এ গবেষণা কার্যক্রম চালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।
কৃষি মন্ত্রী জানান, গবেষণায় মুরগির মাংসে এনরোফ্লাক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, নিওমাইসিন, টাইলোসিন, কলিস্টিন, এমোক্সাসিলিন এবং সালফাডায়াজিন অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার জন্য সেসব নমুনা ভারতের চেন্নাইয়ের এসজিএস ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।
আরও তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক ক্লোরামফেনিকল, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং ডক্সিসাইক্লিন ও তিনটি ভারী ধাতু আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড পরীক্ষা করা হয় সাভারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ব্রয়লার মুরগির মাংসে অক্সি টেট্রাসাইক্লিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৮ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন), যেখানে মানুষের সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রা হচ্ছে ১০০ পিপিবি।
World Health Organization (WHO)-এর মতে, একজন মানুষের ৩৫ মাইক্রোগ্রাম ক্রমিয়াম গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি হলে তা দেহের জন্যে ক্ষতিকর। আমরা যদি ২৫০গ্রাম ওজনের এক টুকরা মাংস খাই তবে আমদের দেহে প্রবেশ করছে ৮৭.৫ মাইক্রোগ্রাম ক্রমিয়াম যা অনেক বেশি ।
আবার আমরা যদি ৬০ গ্রাম ওজনের একটা মাংসের টুকরো খাই তবে তা থেকে আমরা পাচ্ছি ২১.৮৮ মাইক্রো গ্রাম ক্রমিয়াম।
যা সহনীয় পর্যায়ে কিন্তু এই ক্ষতিকর এই ক্রমিয়াম ছাড়াও মুরগিকে দেয়া হয় নানা ধরনের এন্টিবায়োটিক।
কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মতে, মুরগির মাংসে এবং ডিমে এসব এন্টিবায়োটিক বর্তমান থাকে। আর এসমস্ত এন্টিবায়োটিক মুরগির মাংস ও ডিমের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রবেশ করে এবং আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
ফার্মের মুরগীর মাংস নিয়ে এর কিছু সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি উল্লেখ করা হলো:
1. **এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স**: মুরগীর মাংসে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার মানব শরীরে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে রোগের চিকিৎসায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
2. **হরমোন ও স্টেরয়েডস**: কিছু ফার্মে মুরগীর দ্রুত বৃদ্ধির জন্য হরমোন ব্যবহার করা হয়। যদিও এর ব্যবহার অনেক দেশে নিষিদ্ধ, তবুও এর অবশিষ্টাংশ মানব শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
3. **বিধ্বংসী পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য সমস্যা**: ফার্মের মুরগী সাধারণত কম জায়গায় রাখা হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এর ফলে মুরগীর মাংসে রোগজীবাণুর উপস্থিতি বাড়তে পারে।
4. **পুষ্টিমান**: ফার্মের মুরগীর মাংসে পুষ্টিমান তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে, যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের মাত্রা কম এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি।
5.**স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি**: ফার্মের মুরগীর মাংসে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকতে পারে, যা হৃদরোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিকার ও সতর্কতা
এ ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য, কিছু পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে:
অর্গানিক বা ফ্রি-রেঞ্জ মুরগীর মাংস: এগুলি সাধারণত এন্টিবায়োটিক এবং হরমোন মুক্ত এবং পুষ্টিমানের দিক থেকে উন্নত।
বিশ্বস্ত সরবরাহকারী: বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী থেকে মুরগীর মাংস কিনুন।
সঠিক রান্না: মুরগীর মাংস ভালোভাবে রান্না করা উচিত, যাতে সকল প্রকার রোগজীবাণু ধ্বংস হয়।
এই তথ্যগুলো আপনাকে ফার্মের মুরগীর মাংসের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
তবে, কিছু ফার্ম বেশি স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ প্র্যাকটিস অনুসরণ করে। অর্গানিক বা ফ্রি-রেঞ্জ মুরগীর মাংস এসব ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই, ভালো মানের এবং সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত মুরগীর মাংস নির্বাচন করা উচিত।
আমরা অনেকেই আমাদের কোমলমতি বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খেতে যাই আর বাচ্চাদের পছন্দই থাকে চিকেন ফ্রাই , গ্রিল,তান্দুরি ইত্যাদি চিকেন আইটেম যা বেশিরভাগ সময় ফর্মের মুরগির হয়ে থাকে।
আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে, বিষাক্ত এইসব ফর্মের মুরগি থেকে নয়তো আমরা এবং আমাদের অতি আদরের সন্তানরা পড়বে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।
Информация по комментариям в разработке