সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬ নম্বর হাদিস | অধ্যায়: ওহীর সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
৬। আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু নাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ সুফিয়ান ইবনু হরব তাকে বলেছেন, বাদশাহ হিরাকল একবার তাঁর কাছে লোক পাঠালেন। তিনি কুরাইশদের কাফেলায় তখন ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান ও কুরাইশদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্ধিবদ্ধ ছিলেন। আবূ সুফিয়ান তার সঙ্গীদের সহ হিরাকলের কাছে এলেন এবং তখন হিরাকল জেরুযালেমে অবস্থান করছিলেন। হিরাকল তাদেরকে তাঁর নিকটে ডাকলেন। তার পাশে তখন রোমের নেত্রীস্থানীয় ব্যাক্তিগন উপস্থিত ছিল। এরপর তাদের কাছে ডেকে নিলেন এবং দোভাষীকে ডাকলেন।
তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, এই যে ব্যাক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করে — তোমাদের মধ্যে বংশের দিক দিয়ে তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় কে? আবূ সুফিয়ান বললেন, আমি বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়। তিনি বললেন, তাঁকে আমার খুব কাছে নিয়ে এস এবং তাঁর সঙ্গীদেরও কাছে এনে পেছনে বসিয়ে দাও। এরপর তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাদের বলে দাও, আমি এর কাছে সে ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো, সে যদি আমার কাছে মিথ্যা বলে, তবে সাথে সাথে তোমরা তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রকাশ করবে। আবূ সুফিয়ান বলেন, আল্লাহ্র কসম! তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে-এ লজ্জা যদি আমার না থাকত, তবে অবশ্যই আমি তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম।
এরপর তিনি তাঁর সম্পর্কে আমাকে প্রথম প্রশ্ন যে করেন তা হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশমর্যাদা কেমন?’ আমি বললাম, তিনি আমাদের মধ্যে অতি সম্ভ্রান্ত বংশের। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এর আগে আর কখনো কি কেউ একথা বলেছে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাঁর বাপ-দাদাদের মধ্যে কি কেউ বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তারা কি সংখ্যায় বাড়ছে, না কমছে? আমি বললাম, তারা বেড়েই চলেছে। তিনি বললেন, তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর কেউ কি নারায হয়ে তা পরিত্যাগ করে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, নবূয়তের দাবীর আগে তোমরা কি কখনো তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি কি চুক্তি ভঙ্গ করেন?’ আমি বললাম, না। তবে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তিতে আবদ্ধ আছি। জানিনা, এর মধ্যে তিনি কি করবেন।
আবূ সুফিয়ান বলেন, এ কথাটুকু ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে আর কোন কথা সংযোজনের সুযোগই আমি পাইনি। তিনি বললেন, তোমরা কি তাঁর সাথে কখনো যুদ্ধ করেছ?’ আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধ কেমন হয়েছে?’ আমি বললাম, তাঁর ও আমাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল কুয়ার বালতির ন্যায়। কখনো তাঁর পক্ষে যায়, আবার কখনো আমাদের পক্ষে আসে। ’ তিনি বললেন, তিনি তোমাদের কিসের আদেশ দেন?’ আমি বললাম, তিনি বলেনঃ তোমরা এক আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুর শরীক করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার ভ্রান্ত মতবাদ ত্যাগ কর। আর তিনি আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার, সত্য কথা বলার, নিষ্কলুষ থাকার এবং আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দেন।
তারপর তিনি দোভাষীকে বললেন, তুমি তাকে বল, আমি তোমার কাছে তাঁর বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তুমি তার জওয়াবে উল্লেখ করেছ যে, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের। প্রকৃতপক্ষে রাসূল গণকে তাঁদের কওমের উচ্চ বংশেই প্রেরণ করা হয়ে থাকে। তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, এ কথা তোমাদের মধ্যে ইতিপূর্বে আর কেউ বলেছে কিনা? তুমি বলেছ, না। তাই আমি বলছি যে, আগে যদি কেউ এ কথা বলে থাকত, তবে অবশ্যই আমি বলতে পারতাম, এ এমন ব্যাক্তি, যে তাঁর পূর্বসূরীর কথারই অনুসরণ করছে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে কোন বাদশাহ ছিলেন কি না? তুমি তার জবাবে বলেছ, না। তাই আমি বলছি যে, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে যদি কোন বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি বলতাম, ইনি এমন এক ব্যাক্তি যিনি তাঁর বাপ-দাদার বাদশাহী ফিরে পেতে চান।
আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি- এর আগে কখনো তোমরা তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ কি না? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বুঝলাম, এমনটি হতে পারে না যে, কেউ মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা ত্যাগ করবে অথচ আল্লাহ্র ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলবে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, শরীফ লোক তাঁর অনুসরন করে, না সাধারণ লোক? তুমি বলেছ, সাধারণ লোকই তাঁর অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এরাই হন রাসূল গণের অনুসারী। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তারা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি বলেছ বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানে পূর্ণতা লাভ করা পর্যন্ত এ রকমই হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁরা দ্বীনে দাখিল হওয়ার পর নারায হয়ে কেউ কি তা ত্যাগ করে? তুমি বলেছ, না। ঈমানের স্নিগ্ধতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে ঈমান এরূপই হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেন কি না? তুমি বলেছ, না। প্রকৃতপক্ষে রাসূলগণ এরূপই, চুক্তি ভঙ্গ করেন না।
আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি তোমাদের কিসের নির্দেশ দেন। তুমি বলেছ, তিনি তোমাদের এক আল্লাহ্র ইবাদত করা ও তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক না করার নির্দেশ দেন। তিনি তোমাদের নিষেধ করেন মূর্তিপূজা করতে আর তোমাদের আদেশ করেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে, সত্য কথা বলতে ও কলুষমুক্ত থাকতে। তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তবে শীঘ্রই তিনি আমার এ দু’পায়ের নীচের জায়গার মালিক হবেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, তাঁর আবির্ভাব হবে; কিন্তু তিনি যে তোমাদের মধ্যে থেকে হবেন, এ কথা ভাবিনি। যদি জানতাম, আমি তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারব, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আমি যে কোন কষ্ট স্বীকার করতাম। আর আমি যদি তাঁর কাছে থাকতাম তবে অবশ্যই তাঁর দু’খানা পা ধুয়ে দিতাম। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই পত্রখানি আনতে বললেন, যা তিনি দিহয়াতুল কালবীর মাধ্যমে বসরার শাসকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তা পাঠ করলেন। ...
হাদিসের মানঃ সহিহ।
#সহীহ_বুখারী #হাদিস #ওহীর_সূচনা #হিরাকল #রাসুলুল্লাহ #ইসলামিক_ভিডিও #ইসলামের_ইতিহাস #HadithBangla #SahihBukhari #IslamicHistory
Информация по комментариям в разработке