Скачать или смотреть শীতকালে খেজুরের রসের স্বাস্থ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা ll SM TV KUSHTIA

শীতকালে খেজুরের রসের স্বাস্থ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: মোঃ মুনজুরুল ইসলাম
কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া নগর মোহাম্মদপুর গ্রামের সুজন মন্ডল বেশ কয়েক বছর ধরেই খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকেন তারই ধারাবাহিকতায় এই বছরেও আগাম খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সরজমিন গিয়ে দেখা যায় সুজন মন্ডল ও তার সঙ্গী সাথীরা সার্বক্ষণিক ব্যস্ত আছেন খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহ করার কাজে। রাস্তার দুই ধারে সারি সারি খেজুর গাছ এই গাছ হতে রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান। খেজুর রস শরীর আর মনও চনমনে রাখে। খেজুরের রসে থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ফলে রক্তাল্পতা দূর করতেও ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। তবে অ্যানিমিয়ার সমস্যা থাকলে প্রতিদিন এক টুকরো পাটালি গুড় বা ঝোলা গুড় খেলে খুব ভাল কাজ হয়। খেজুরের রস শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
শীতকালের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস খেতে পছন্দ করেন অনেকে। কেউ আবার এ রসকে প্রক্রিয়াজাত করে পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় তৈরি করে খেয়ে থাকেন। সারা বছর খেজুরের রস সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালের খেজুরের রসই বেশি সুস্বাদু। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে রসের পরিমাণ ও মানও কমতে থাকে।খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে যে খেজুর হয় তাতে যথেষ্ট শাঁস থাকে না বলে অনেকেই এটা খেতে খুব একটা পছন্দ করেন না। তাই খেজুরের রসই আসল আকর্ষণ। খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় অনিদ্রা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খেজুরের গুড়ে আয়রন বা লৌহ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনতে খেজুরের রস দারুণ উপকারী। এতে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে, যা থেকে গুড় ও সিরাপ উৎপাদন করা হয়। খেজুরের গুড় আখের গুড় থেকেও বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। ঘ্রাণ ও স্বাদের জন্য এ গুড়ের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। খেজুরের গুড়ে আখের গুড়ের চেয়ে বেশি প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল রয়েছে। সকালের নাশতায় খেজুর রসের পায়েস খেলে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। রক্ত স্বল্পতা দূর করে খেজুর রসরসে লৌহ বা আয়রন সুপ্ত অবস্থায় থাকে যদি রস জ্বাল করে গুড় বা লালি তৈরি করা হয় তবে এতে প্রচুর আয়রন থাকে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রতিদিন এক টুকরা গুড় বা এক চামুচ লালি খাওয়া উচিত। বাংলাদেশে খেজুর গুড়ের পিঠা খাওয়া বেশ প্রচলিত তাই বিপুল জনগোষ্ঠীর মোটামুটি ১/৫ অংশ এই শীতকালে রক্ত স্বল্পতার হাত থেকে রক্ষা পায়।পেশীকে মজবুত করেপেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতা সচল রাখতে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম থাকে তাই রস বা গুড় পেশীকে শক্তিশালী করে। পেশীর অসারতা দূর করতেও এটি কাজ করে। স্নায়ুকোষ পরস্পর যুক্ত থাকে নিউরন নামের সংযোগ স্থলে। এই স্থান দিয়ে অনুভূতির সংকেত চলাচল করে। পটাশিয়াম ও সোডিয়াম স্নায়ু সংকেত চলাচলে প্রধান ভূমিকা রাখে।ক্লান্তিভাব দূর করে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতির কারণে আমাদের অবসন্ন বা ক্লান্তি ভাব আসে। রসে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম। এটি পান করলে ক্লান্তিভাব দূর হয় এবং দেহের সজীবতা ফিরে আসে। হাড় মজবুত করতে খেজুর রসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম। এটি হাড় ও পেশী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম এর অভাব দূর করে খেজুর রস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় রসে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। দেহের ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়। ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি ধীরে ধীরে রক্তে মিশে যায় ফলে দেহে চর্বি কম জমে। কিন্তু সাধারণ চিনি দ্রুত রক্তে মেশে তাই চিনির খুব ভালো বিকল্প হতে পারে খেজুরের রস। রসে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকায় এটি বিপাক ক্ষমতা বাড়ায় ফলে অতিরিক্ত চর্বি দেহে কম জমে এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে রসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এটি মলের পরিমাণ বাড়ায় এবং মল নরম করে ফলে রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। খেজুর গুড় একই কাজ করে। এটি অনিদ্রা দূর করতেও সাহায্য করে। হজম ক্ষমতা বাড়ায় রসে। আমাদের হজমে অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোর ক্ষরণ ও কাজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। খাওয়ার পর সামান্য পরিমাণ রস বা গুড় খেলে হজম তাড়াতাড়ি হবে। খেজুর রসের অপকারিতা:খেজুর রসের অনেক উপকারিতার কথা জানলেন তাহলে এবার অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের খেজুর রস না খাওয়াই ভালো কারণ এর ভেতর থাকা চিনি ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। কিডনি রোগী খেজুর রস পান করলে সমস্যা হতে পারে। রসের পটাশিয়াম কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে। রক্তের সমস্যা আছে এমন রোগীর রস না খাওয়া উচিত। হাপানী বা অ্যাজমা আছে এমন রোগীর ঠাণ্ডা রস পান করা উচিত নয় এতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। বাদুড় রস পান করে রসের হাঁড়ি থেকে আর বাদুড়ের মুখ থেকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে রস পান করার মাধ্যমে। খেজুরের রস ভোরবেলায় খাওয়া ভালো। সারা রাত ধরে রস জমে থাকার পর সকাল সকাল এ রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে সময় যত গড়াতে থাকে, তত এতে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া হতে থাকে। এতে রসের স্বাদ নষ্ট হয় এবং অম্লতা বাড়ে। অন্ধকারে এই প্রক্রিয়া কম হয়, কিন্তু দিনের আলোতে গাঁজন বেশি হয়। তাই দিনের বেলা রস খাওয়া ঠিক নয়। এতে বমিসহ পেটের নানা সমস্যা হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, খেজুরের রসে যেন কোনো পোকামাকড় মুখ না দেয়। বাদুড় বা পাখির মুখ দেয়া রস খেলে রোগ হতে পারে। একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে খেলেও সমস্যা নেই। যেহেতু এটি এনার্জি ড্রিংক, তাই শরীরে শক্তি জোগাতে পরিমাণমতো রস খাওয়া ভালো।