মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ স্বাদে আর পুষ্টিগুণে ভরপুর সব্জি মিষ্টি কুমড়া। আমরা এটিকে সব্জি হিসেবে চিনে থাকি তবে এটি একপ্রকার ফল। পাশাপাশি এটি সুস্বাদুও। মিষ্টি স্বাদের এই সব্জি কাঁচা থাকলে সবুজ থাকে এবং পাকলে হালকা সবুজের সাথে হলুদ রঙের মিশ্রণ দেখা যায়। মিষ্টি কুমড়ার বীজও খুব উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেক্স, সি এবং ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার, ক্যারটিনয়েড এবং অন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ। কুমড়াতে প্রধানত বিটা ক্যারোটিন থাকে যা ভিটামিন এ প্রদান করে।
হলুদ ও কমলা কুমড়ায় ক্যারোটিন তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। বিটা ক্যারোটিন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি রক্ত ও পাকস্থলীকে পরিশুদ্ধ করে, পিত্ত ও বায়ুর ব্যাধি দূর করে এবং মস্তিষ্কের জন্যও খুবই উপকারী।
পরীক্ষায় দেখা গেছে যে কুমড়ার খোসায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানও রয়েছে যা সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। এই সবজিটির ‘পেট’ থেকে ‘হার্ট’ পর্যন্ত অনেক রোগের চিকিৎসা করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি হৃদরোগীদের জন্য খুবই উপকারী হলেও এটি কোলেস্টেরল কমাতেও সহায়ক।
দীর্ঘস্থায়ী জ্বরেও কুমড়ো কার্যকর। এতে শরীরের ক্ষতি বা ছাপ দূর হয়। কুমড়োর রসও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
এটি মূত্রবর্ধক এবং পেট সংক্রান্ত রোগেও উপকারী। এটি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং অগ্ন্যাশয়কে সক্রিয় করে। এই কারণে, ডাক্তাররা ডায়াবেটিস রোগীদের কুমড়া খাওয়ার পরামর্শ দেন।
মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ
পুষ্টি উপাদান প্রতি ১০০ গ্রামঃ খাদ্যশক্তি ৩০ কিলোক্যালরি, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিঃগ্রাম, আমিষ ১.৪ গ্রাম, চর্বি ০.৫ গ্রাম, শর্করা ৭.৫ গ্রাম, লৌহ ০.৭ মিঃগ্রাম, ভিটামিন-এ ৭২০০ মাঃ গ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৭ মিঃগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৬ মিঃগ্রাম, ভিটামিন-সি ২৬ মিঃ গ্রাম।
মিষ্টি কুমড়া শাকের উপকারিতা
মিষ্টি কুমড়া শাক বেশ উপকারী। পুষ্টিবীদরা মনে করেন সপ্তাহে ২/৩ দিন খাওয়া উচিত। মিষ্টি কুমড়ার শাক মায়েদের জন্য বেশ কার্যকরী খাবার। যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন তারা খাদ্যতালিকায় মিষ্টি কুমড়ার শাক রাখতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে আয়রন যা শরীরে রক্তের ঘাটতি পূরণ করে। ভিটামিন সি ক্ষত সারাতে কাজ করে। কুমড়া পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। শারীরিক কোনো আঘাত বা অভ্যন্তরীণ সমস্যা রোধে এই শাক অনেক উপকারী। মিষ্টি কুমড়া শাক দাঁত ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে৷ এছাড়াও প্রোটিন-সমৃদ্ধ এই কুমড়া শাক রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মিষ্টি কুমড়া বীজের উপকারিতা
কুমড়ার বীজ কাঁচা খাওয়া যেতে পারে, যদিও তাদের শাঁস চিবানো এবং হজম করা কঠিন হতে পারে, এই ক্ষেত্রে সেগুলি ভাজা এবং খাওয়া হয়।
মিষ্টি এবং সুস্বাদু উভয়ই কুমড়ার বীজের অনেক রেসিপি রয়েছে। পাম্পকিন স্পাইসড ল্যাটে নামে পরিচিত পানীয়টিতে সুপরিচিত, গ্লোবাল কফি চেইন দ্বারা পরিবেশিত কফির সাথে বীজগুলিও একটি জনপ্রিয় সংযোজন।
কুমড়ার পানীয় এবং কুমড়ার বীজের ব্যবহার সাধারণত শরৎ ঋতুতে একটি তীক্ষ্ণ স্পাইক দেখায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে কুমড়া সরাসরি হ্যালোইনের সাথে যুক্ত।
কুমড়ার বীজ কুমড়ার তেল বের করতেও ব্যবহার করা হয়, যা রান্নায় ব্যবহৃত একটি খুব স্বাস্থ্যকর তেল। মিষ্টি কুমড়ার বীজ আমরা অনেকেই সব্জির আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেই৷ কিন্তু এতে প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম কুমড়ার বীজে রয়েছে ৫৬০ কিলোক্যালরি।
কুমড়ার বীজে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা খারাপ রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
অনেকের ভালো ঘুম হয় না বা ঘুমে অসুবিধা হয় তারা নিয়মিত কুমড়ার বীজ খেতে পারেন।কুমড়ার ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে কারণ এতে রয়েছে ট্রাইপটোফ্যান। ট্রাইপটোফ্যান নামের অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে গিয়ে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয় ফলে এটি খেলে ভালো ঘুম হয়।
কুমড়ার বীজে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কুমড়ার বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। এটি রোগীর শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করে। এছাড়াও এটি হজমে সহায়তা করে।
আমরা সবাই জানি মিষ্টি কুমড়ার সব্জি হিসেবে খেতে সুস্বাদু , তবে এর জ্যাম প্রচুর পরিমাণে সুস্বাদু এবং মিষ্টি।
মিষ্টি কুমড়ার অপকারিতা
মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা শুধুমাত্র তখনই কাজে লাগবে যখন এটি পরিমাণ মতো খাওয়া হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি কুমড়া খেলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে। শরীরের জন্য অতিরিক্ত কোনো কিছুই স্বাস্থ্য উপকারী নয়।
মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকে, অতিরিক্ত ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া মিষ্টি কুমড়া খেলে অনেকের অ্যালার্জিও হতে পারে।
উপসংহার
এতক্ষণ আপনারা মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞ্যান অর্জন করলেন। তাহলে আমি নিশ্চিত যে আপনি আপনার ডায়েটে মিষ্টি কুমড়া যুক্ত করছেন। তবে সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে মিষ্টি কুমড়া খান।
Информация по комментариям в разработке