005) সূরা আল মায়েদাহ (সম্পূর্ণ) With Subtitle - سورة المائدة - Al Ma'idah ❤সৈয়দ ইসমত তোহা▶ Shoriful art of Nature
সূরা আল-মায়েদাহ (সুরা ৫)
সারসংক্ষেপ
নাম: আল-মায়েদাহ (المائدة) – যার অর্থ “খাদ্য টেবিল”
প্রকার: মাদানী
আয়াত সংখ্যা: ১২০
রুকু সংখ্যা: ১৬
তিলাওয়াতের ক্রম: ৫
উপস্থাপনার ক্রম: মদিনায় হিজরতের পর শেষের দিকের সূরাগুলোর একটি
সূচিপত্র
সূরার নামকরণ ও বৈশিষ্ট্য
অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট
সূরার মূল বিষয়বস্তু
গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও শিক্ষণীয় বিষয়
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
১. সূরার নামকরণ ও বৈশিষ্ট্য
এই সূরার নাম "আল-মায়েদাহ" এসেছে ১১১-১১৫ নং আয়াতে বর্ণিত এক অলৌকিক ঘটনার কারণে, যেখানে হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারীরা আল্লাহর নিকট থেকে একটি খাওয়ার টেবিল প্রার্থনা করেছিল। আল্লাহ এই দোয়া কবুল করেন এবং একটি খাবারের খঞ্জনী প্রেরণ করেন, যা তাদের ঈমানের পরীক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই সূরাটি ইসলামের শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক নীতিমালা সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে। এটি ইসলামের অন্যতম শেষদিকের অবতীর্ণ সূরাগুলোর একটি, যার মধ্যে ইসলামের অনেক চূড়ান্ত বিধান প্রকাশ করা হয়েছে, যেমন হালাল-হারাম, অপরাধ ও শাস্তি, ন্যায়বিচার, মদ ও জুয়ার নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি।
২. অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট
এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে, যখন মুসলমানরা ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেছিল। এখানে সমাজের আইন, ন্যায়বিচার, চুক্তি পালন, মুসলিম ও আহলে কিতাবদের (ইহুদি-খ্রিস্টান) সাথে সম্পর্ক এবং ইসলামি জীবনব্যবস্থার চূড়ান্ত বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
৩. সূরার মূল বিষয়বস্তু
১) চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা (আয়াত ১-১১)
মুসলমানদেরকে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য ও পশু কোরবানি সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।
মুসলমানদেরকে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
২) আহলে কিতাবের (ইহুদি-খ্রিস্টান) সঙ্গে সম্পর্ক (আয়াত ১২-৩২)
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার নির্দেশ।
ইহুদিরা পূর্বে নবীদের হত্যা করেছিল এবং আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করেছিল – এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
কাবিল ও হাবিলের কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে (আদম (আ.)-এর দুই পুত্র), যেখানে প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
৩) বিচার ও আইন সংক্রান্ত বিধান (আয়াত ৩৩-৫০)
চুরি, ডাকাতি ও অরাজকতার শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে।
মদ, জুয়া, মূর্তি পূজা ও ভাগ্য নির্ধারণের তীর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মুসলমানদের সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪) মুসলমানদের বিশেষ দিকনির্দেশনা (আয়াত ৫১-৮৬)
মুসলমানদের সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা কাফেরদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে।
খ্রিস্টানদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তাদের মধ্যে কিছু ন্যায়পরায়ণ লোকও রয়েছে।
সত্যিকারের মুমিনদের চিহ্ন ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।
৫) হযরত ঈসা (আ.) ও খাবারের টেবিলের অলৌকিক ঘটনা (আয়াত ৮৭-১২০)
আল্লাহর প্রতি আস্থা ও নির্ভরতার গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ঈসা (আ.)-এর অনুসারীদের জন্য খাদ্যের টেবিল পাঠানোর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
কেয়ামতের দিনে ঈসা (আ.) আল্লাহর সামনে কীভাবে সাক্ষ্য দেবেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও শিক্ষণীয় বিষয়
১) ইসলাম পরিপূর্ণ হয়েছে – (আয়াত ৩)
"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।"
➡️ এই আয়াতকে ইসলামের "চূড়ান্ত বিধান" হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি ইসলামের পূর্ণতা ঘোষণা করে।
২) সুবিচার ও ন্যায়বিচার – (আয়াত ৮)
"হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাক্ষী হও এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে সুবিচার থেকে বিরত না রাখে।"
➡️ ইসলাম শত্রুর সাথেও ন্যায়বিচার করতে নির্দেশ দেয়।
৩) মদ, জুয়া ও ভাগ্য নির্ধারণের তীর নিষিদ্ধ – (আয়াত ৯০-৯১)
"হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারণের তীর—এসব শয়তানের কাজ; সুতরাং তোমরা তা থেকে বিরত থাকো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।"
➡️ এই আয়াতে মদ ও জুয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
৪) চুরি ও ডাকাতির শাস্তি – (আয়াত ৩৮)
"চোর, নারী বা পুরুষ, উভয়ের হাত কেটে দাও, এটা তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি।"
➡️ ইসলামে সমাজে অপরাধ দমন ও ন্যায়বিচারের কঠোর ব্যবস্থা রয়েছে।
৫) ঈসা (আ.) ও খাবারের টেবিল – (আয়াত ১১২-১১৫)
ঈসা (আ.)-এর অনুসারীরা আল্লাহর নিকট একটি অলৌকিক খাবারের জন্য দোয়া করেছিল। আল্লাহ তা কবুল করলেও তাদের সতর্ক করে দেন যে, যদি তারা অবিশ্বাস করে, তাহলে কঠোর শাস্তি আসবে।
৫. সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
আল-মায়েদাহ সূরা আমাদের শেখায় যে, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা এবং এর বিধান মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।
এই সূরায় সামাজিক ন্যায়বিচার, ইসলামী আইন, খাদ্যবিধান, অপরাধের শাস্তি এবং ঈসা (আ.)-এর অলৌকিক ঘটনার আলোচনা রয়েছে।
ইসলামের কিছু চূড়ান্ত বিধান এই সূরায় বর্ণিত হয়েছে, যা মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
Информация по комментариям в разработке