Скачать или смотреть Breast Cancer-স্তন ক্যান্সার।স্তনের রোগ সমূহ ও প্রতিকার,ডা. শাশ্বত চন্দন।

বন্ধুরা আমি, ডা. শাশ্বত চন্দন, বর্তমানে বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন পদে কর্মরত। গত জুলাই সেশনে আমি সার্জারিতে এফসিপিএস পার্ট-১ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।
স্তন নারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। স্তনে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। তবে স্তনের রোগ মানেই যে স্তন ক্যান্সার তা নয় চাকা অনুভূত হওয়া বা পুঁজ বের হলে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, ভয় না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। স্তনের কিছু রোগ কখনোই ক্যান্সার সৃষ্টি করবে না এদের Benign Disorder of Breast বলে। আমি। এখন এদের সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেবার চেষ্টা করছি। বিনাইন ডিজঅর্ডারে প্রথমেই আছে -
১.ডিফিউস হাইপার ট্রফি অফ ব্রেস্টঃ
সাধারণত ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নামক হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধিকালে এবং প্রসূতি অবস্থায় স্তন অতিরিক্ত বড় হয়ে যেতে পারে।
২.হেমাটোমাঃ
কখনো কখনো আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে স্তনে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে এটা চাকার মতো অনুভূত হয় কখনো ব্যথার ব্যথা হতে পারে।
৩. ফ্যাট নেক্রসিসঃ
আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে স্তনের চর্বি জমাট হয়ে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এটি চাকার মতো অনুভূত হয়। কখনো কখনো এর উপরে চামড়া কুঁচকে যেতে পারে এবং স্তনের বোঁটা ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। তবে এটা কখনোই ক্যান্সার নয়।
৪.মাস্টাইটিস এবং ব্রেস্ট অ্যাবসেসঃ
সাধারণত দুগ্ধবতী নারীদের স্তনে জীবাণুর আক্রমণ ইনফেকশন হতে পারে। প্রথমে ইনফ্লামেশন হয় তখন এটাকে মাস্টাইটিস বলে। পরবর্তীতে পূজ জমে abscess এ পরিণত হয়। এখানে প্রচন্ড ব্যথা থাকে,ফুলে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্রেস্ট অ্যাবসেসে ভিতরে চাকা অনুভূত হয়। যক্ষার কারণে দীর্ঘমেয়াদী ব্রেস্ট অ্যাবসেস হতে পারে।
৫.সুপার নিউমেরারি ব্রেস্ট অর নিপলঃ
কখনো কখনো শরীরে দুই এর অধিক স্তন থাকতে পারে। কখনো অতিরিক্ত স্তনে বোঁটা থাকে আবার কখনো থাকে না সাধারণত বগলের কাছে অতিরিক্ত স্তনের কিছু টিস্যু থাকে যেটা মাংসল অবস্থায় থাকে। এই মাংসল স্থানটি প্রসূতি অবস্থায় সাধারণ স্তনের মতোই বড় হতে পারে।
৬.অ্যাবারেশন অফ নরমাল ডেভলপমেন্ট এন্ড ইনভলুসনঃ
স্বাভাবিক উৎপত্তি ও বিকাশের ব্যত্যয় ঘটলে স্তনে কিছু সমস্যা দেখা দেয় যেগুলো কখনোই ক্যান্সার সৃষ্টি করে না। এদেরকে এ ANDI এর অভ্যন্তরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ANDI গুলো আমি এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরব -
ক. সাইক্লিক্যাল নডুলারিটি এন্ড মাসটালজিয়াঃ সাধারণত মাসিক শুরু হবার আগে আগে স্তনের উপরি- বহির্ভাগে চাকা অনুভূত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। এটা মাসিক শুরু হবার পর আবার কমে যায়। এটা মাসিকের সাথে সাথে আবর্তিত হয়।
খ. ব্রেস্ট সিস্টঃ
এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধকালীন সময়ের নারীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছরে নারীদের মধ্যে ব্রেস্ট সিস্ট হয়ে থাকে। তখন হরমোনের বড় ধরনের পরিবর্তন সংঘটিত হয় এবং যে কারণে ব্রেস্ট সিস্ট তখন সংঘটিত হতে পারে।
গ. ফাইব্রোএডিনোমাঃ
এটি পরিপূর্ণ স্তনের সৃষ্টি হয়। সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীদের এই ফাইব্রোএডিনামা সৃষ্টি হয়। এটি দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। আবার কখনো কখনো বয়সন্ধিকালে বড় ধরনের তৈরি হতে পারে।

সাধারণত ট্রিপল এসেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় আমরা এই বিনাইন ব্রেস্ট ডিজিজ গুলো পরীক্ষা করে থাকি।
১. পরীক্ষা'
এটা সাধারণত রোগীর বর্ণনা শুনে এবং স্তনের অবস্থা দেখে এবং সার্জর হাত দিয়ে পরীক্ষা করে থাকে
২. রেডিওলজিঃ
৩৫ বছরের কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাফি করা হয় এবং এর উপরের মহিলাদের ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করা হয়। এই মেমোগ্রাফি এক ধরনের এক্সরে। আবার ক্যান্সার অনেক বড় হলে এবং এটি যদি পারিবারিক ইতিহাস থাকে তাহলে আমরা এমআরআই করতে পারি।
৩. টিস্যু স্যাম্পেলিংঃ
এটা হল বিশেষ ধরণের সিরিঞ্জ দিয়ে মাংস বা রস নিয়ে পরীক্ষা করা। কখনো স্তনের কিছু অংশ কেটে পরীক্ষা করা হয় -
ক.ট্রু কাট বায়োপসি
খ.এফএনএসি
গ. কোর কাট বায়োপসি।

চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্টঃ
চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল আশ্বস্ত করণ অর্থাৎ রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে,আমি যেসব রোগ গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম এই বিনাইন রোগগুলো কখনোই ক্যান্সার সৃষ্টি করবে না। সব সময় এর অপারেশন লাগবে না। সিস্ট বা অ্যাপসেস গুলো ড্রেনেজ করে নিয়মিত ড্রেসিং করতে হবে। টিউমার যদি বড় হয় তখন এটি অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে। এক্ষেত্রে পুরো স্তন কাটা লাগে না সাধারণত।

স্তন ক্যান্সার বা ম্যালিগনেন্ট ডিজিজ অফ ব্রেস্টঃ
শুরুতেই আলোচনা করছি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির কিছু কারণ নিয়ে।
১.স্থানগত কারনঃ
পশ্চিমা বিশ্বের আধুনিক সমাজে এই স্তন ক্যান্সারের প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। ২০ বছরের পূর্বের নারীদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার বিরল। একটু বয়স্ক নারীদের এই স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. জেনেটিকাল কারনঃ
পরিবারের নারী সদস্যদের স্তন ক্যান্সার থাকলে তার কণ্যার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
৩. হরমোন জনিত কারণঃ
কখনো গর্ভবতী হয়নি এমন নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার অতিরিক্ত মোটা নারীদেরও ঝুঁকি বেশি থাকে।
৪.তেজস্ক্রিয়তাঃ
তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবযুক্ত এলাকায় নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
৫.হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিঃ
যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করেছে এদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।

স্তন ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ-
১.স্তনে চাকা অনুভূত হয়।
২.স্তনে ব্যথা করে।
৩.চামড়া ভিতরে ঢুকে যেতে পারে।
৪. বিশাল ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে
৫. স্তন থেকে রক্ত সহ বিভিন্ন তরল নিঃসৃত হতে পারে
৬. স্তনের বোঁটা ভিতরে ঢুকে যেতে পারে
৭.বগলের দিকে চাকা অনুভূত হয়, এটি মূলত লিম্ফ নোড ফুলে উঠতে পারে।
স্তন ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের আছে। এদের বিভিন্ন স্টেজ ও গ্রেডে বিভক্ত করা হয়। এটাও ইনভেস্টিগেশন করার জন্য ত্রিপল অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। TNA বা UICC ক্রাইটেরিয়া অনুসারে স্তন ক্যান্সারের স্টেজিং করা হয় এবং ওই অনুসারে ট্রিটমেন্ট প্লান ঠিক করা হয়।