MediTalk Digital এশিশুর এলার্জি নিয়ে বলেছেন অধ্যাপক ডাঃ সাঈদা আনােয়ার / Powered By: Chopstick
শিশুর অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
শিশুর অ্যালার্জিক রাইনাইটিস একটা দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জিজনিত রোগ। নাসিকার অভ্যন্তরে ঝিল্লি বা মিউকাস পর্দায় প্রদাহের কারণে এটা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় বা জন্মের প্রথম বছরে মা যদি ধূমপান করেন, তাহলে সন্তানের এই রোগ বেশি হয়। সিজারিয়ান ডেলিভারি, অ্যালার্জিক পরিবেশ, খাবার ও জীবাণু এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পরিবারে মা, বাবা বা অন্য কারও এ ধরনের অ্যালার্জির ইতিহাস থাকলে, শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক চুলকানো, সঙ্গে চোখ লাল এবং হঠাৎ হঠাৎ হাঁচির প্রকোপ—এসবই হলো অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের প্রধান উপসর্গ। একটু বেশি বয়সী শিশু নাকের এই অ্যালার্জিতে নাক ঘষে (অ্যালার্জিক স্যালিউট)। কোনো কোনো শিশুর নাকের ওপর আড়াআড়ি দাগ, কারও আবার চোখের নিচে কালো কালো বৃত্তের মতো ছোপ পড়ে। চার–পাঁচ বছর বয়সী অনেক শিশু নাক ডাকে, মুখ হা করে শ্বাস নেয়। এতে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এসব শিশুর অনেকে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে না।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভোগা শিশুদের অনেকে আবার অ্যালার্জিজনিত অন্যান্য রোগ যেমন সাইনোসাইটিস, কানপাকা, টনসিলের সংক্রমণ ও একজিমা রোগে ভোগে। এসব শিশুর অনেকে হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভোগা শিশুদের সপ্তাহে চার দিনের বেশি কিংবা পরপর চার সপ্তাহ রোগের উপসর্গ থাকতে পারে। তবে মৃদু অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত শিশুর স্বাভাবিক ঘুমে, লেখাপড়ায় তেমন একটা সমস্যা হয় না।
যা করবেন
রোগ শনাক্ত করতে সুনির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ছয় বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার ইমিউনোগ্লোবিউলিন ই, ইঁদুর, তেলাপোকা ও অন্যান্য সন্দেহজনক অ্যালার্জেন পরীক্ষা অন্যতম।
শিশুর এই রোগ যে যে মৌসুমে বাড়ে, তা নির্দিষ্ট করতে হবে। যে যে পরিবেশ বা খাবার দায়ী, তা–ও চিহ্নিত করা জরুরি। কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ, বিছানা, বালিশ, কার্পেটে থাকা জীবাণু, ফুলের রেণু, ঘাস, ধুলাবালুর সংস্পর্শে এলে সমস্যা বাড়ে কি না, তা অনুসন্ধান করতে হবে।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত শিশুকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নাক-কান-গলা ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিশুর খাবারে অ্যালার্জি
শিশু বয়সের খাবারে অ্যালার্জি নির্ণয়ে রোগের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও সুনির্দিষ্ট খাবার চিহ্নিত করা জরুরি। এ জন্য রক্তে কিছু পরীক্ষা ও বিশেষ পদ্ধতিতে অ্যালার্জি পরীক্ষা করা হয়।
শিশু বয়সে কোনো নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের পর অ্যালার্জিজনিত নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এটা মূলত দুই ধরনের। এক, খাবার বা খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত কোনো উপকরণ বা রাসায়নিক পদার্থ থেকে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া। যেমন দুগ্ধজাত উপাদান সহ্য না হওয়া। দুই, অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া। এটা ইমিউনোলোজিক প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়। রক্তে উচ্চমাত্রার আইজি-ই পাওয়া যায়। যেমন গরুর দুধ, ডিম, বাদাম বা মটরদানার মতো খাবার থেকে অ্যালার্জি। শিশুদের খাবারজাত এ ধরনের অ্যালার্জির সঙ্গে জিনগত সম্পৃক্ততাও রয়েছে।
খাবারে অ্যালার্জির উপসর্গ
● ত্বকে লাল লাল ছোপ, চুলকানো, চামড়ার নিচের আস্তরণসহ ফুলে যাওয়া।
● চোখ খচখচ করা, চোখ লাল, পানি ঝরা।
● নাক বন্ধ, হাঁচি, গলা চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলায় কর্কশ আওয়াজ, শুষ্ক কাশি প্রভৃতি।
● শ্বাসকষ্ট, শ্বাসে শাঁইশাঁই শব্দ ইত্যাদি।
● ঠোঁট, জিব ফুলে যাওয়া। ঠোঁটের চারপাশ লাল বর্ণ ও চুলকানো।
● বমি ভাব, বমি, পেট কাড়ানো-ব্যথা, ডায়রিয়া।
● হৃদ্যন্ত্র দ্রুত বা কম স্পন্দন, রক্তচাপ কমে যাওয়া, মূর্চ্ছা যাওয়া।
নানা রকম অ্যালার্জি
● কারও কারও মুরগির ডিমে অ্যালার্জি থাকে। এমনটা হয়ে থাকলে তার অন্যান্য ডিমে অ্যালার্জি থাকার সম্ভাবনা প্রবল। শিশুর ডিমে অ্যালার্জি সাধারণভাবে ০-১ বছর বয়সে শুরু হয় এবং ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে তা ৭ বছর বয়সে ঠিক হয়ে যায়।
● গরুর দুধে অ্যালার্জি সাধারণত ০-১ বছর বয়সে শুরু হয়। ৭৬ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অ্যালার্জি ৫ বছর বয়সে লোপ পায়।
● মটর বা বীজ–জাতীয় খাবারে অ্যালার্জি থাকে অনেকের। এ ধরনের অ্যালার্জি শিশুর ১-২ বছরে শুরু হয়। প্রায় ২০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। বাকিদের সারা জীবন সমস্যা হয়।
● কোনো কোনো খাবার, যেমন সামুদ্রিক মাছ, গম, সয়াবিন, আপেল, গাজর—এসবে অ্যালার্জি হতে পারে একেক বয়সে। আবার একটা নির্দিষ্ট বয়সে আপনা–আপনি সেরে যায়। এ ছাড়া গরুর দুধ ও ডিমে অ্যালার্জি প্রায় ৫০ শতাংশ স্কুল বয়সে সেরে যায়। তবে কখনো কখনো দেখা যায়, মটর বা বীজে অ্যালার্জি প্রায় সারা জীবনের জন্য থেকে যায়। এমনটা হয়ে থাকে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে।
যা করতে হবে
● শিশু বয়সের খাবারে অ্যালার্জি নির্ণয়ে রোগের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও সুনির্দিষ্ট খাবার চিহ্নিত করা জরুরি। এ জন্য রক্তে কিছু পরীক্ষা ও বিশেষ পদ্ধতিতে অ্যালার্জি পরীক্ষা করা হয়।
● কোন খাবারে শিশুর অ্যালার্জি, তা চিহ্নিত করতে হবে। শিশুর খাবারের তালিকা থেকে ওই সব খাবার সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। তবে শিশু বিশেষজ্ঞ ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে মেনে এসব খাবার অল্প অল্প করে নির্দিষ্ট বয়সে আবার শুরু করতে হবে।
Информация по комментариям в разработке