সালাম কি?ও কেন?সালামের উপকারিতা ও ফজিলত by mufti shah mustak hossain 2018
মানবজীবনের এমন কোনদিক নেই যার পূর্নাঙ্গ বিবরণ দেয়নি ইসলাম। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিকজীবন, সামাজিকজীবন, আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডল সকল ক্ষেত্রেই চলার জন্য ইসলাম দিয়েছে বিস্তারিত ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান। পরস্পরে দেখা-সাক্ষাত মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। প্রত্যেক গোত্র, জাতি ও ধর্মালম্বীই মেনে চলে সেই দেখা-সাক্ষাতের শিষ্টাচার ও রীতি-নীতি। একে-অপরের সঙ্গে সাক্ষাত হলে ব্যবহার করে থাকে হ্যালো, গুডমর্নিং, গুডইভেনিং, নমস্কার, আদাব ইত্যাদি শব্দ এবং করে থাকে হ্যান্ডশেক। ইসলামেরও রয়েছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট শিষ্টাচার ও রীতিনীতি। ইসলামের রীতি অপরাপর জাতির মত এক-দুটো শব্দ ছুঁড়ে দেয়ার মত নয়। বরং এক্ষেত্রে ইসলামের শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি অন্যান্য জাতির সংস্কৃতি থেকে আরও অনেক উন্নত, প্রাণসম্পন্ন, অর্থবহ, সমৃদ্ধ, স্বতন্ত্র ও কল্যাণমুখী। এক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি হলো, “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলা এবং সুযোগ থাকলে মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করা। সালাম, মুসাফাহা ও মুআনাকায় রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের বিপুল উপকারিতা ও ফজিলত। নিম্নে সালাম ও মুসাফাহার ফজিলত সম্বলিত কিছু হাদিস উল্লেখ করছি। যেন এর উপর আমলের আগ্রহ ও আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
সালামের উপকারিতা ও ফজিলত
আল্লাহ তাআলা আদম আ. কে সৃষ্টি করার পর বললেন, “যাও অমুক স্থানে ফেরেস্তাদের একটি দল বসে আছে। তাদেরকে সালাম দাও আর তাঁরা তোমাদেরকে কি অভিবাদন করে তা শোন। তারা তোমাকে যে অভিবাদন করবে তাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের অভিবাদন। আদম আ. গিয়ে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলে ফেরেস্তাদের সালাম দিলেন। ফেরেস্তাগণ ‘ওয়া আলাইকুমস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে উত্তর দিলেন। তাঁরা উত্তরে “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বাড়িয়ে বললেন। [বুখারি : ২/৯১৯] এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো, সালাম আল্লাহপ্রদত্ত এক মহা নিয়ামত। এত বড় নিয়ামত, যা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। অন্য এক হাদীসে সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, “তোমরা জান্নাতে যেতে পারবেনা যাবত মুমিন না হবে। আর মুমিন হতে পারবেনা যাবত একে অপরকে মুহাব্বাত না করবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দিবনা যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? (সেটি হলো) তোমরা তোমাদের পরপস্পরের মাঝে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করবে।” [মুসলিম : ১/৫৪ তিরমিযি : ২/৭] অপর বর্ণনায় এসেছে, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে সা. বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন কর, (ক্ষুর্ধাতদের) আহার করাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখ এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়, তাহলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে নিরাপদে। [তিরামিযীঃ ২/৭৫; মুসনাদে আহমাদ : ৫/৪৫১]অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, জনৈক ব্যক্তি নবী কারিম সা. -এর নিকট এসে বলল, ‘আস্-সালামু আলাইকুম” তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে ব্যক্তি বসলে নবী কারিম সা. বললেন, “দশ” অর্থাৎ তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমুতুল্লাহ”। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে ব্যক্তি বসলে তিনি বললেন, বিশ অর্থাৎ তার আমল নামায় বিশটি নেকি লেখা হয়েছে। তারপর অপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমুতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে বসলে তিনি বললেন, “ত্রিশ” অর্থাৎ তার আমল নামায় ত্রিশটি নেকি লেখা হয়েছে। [আবু দাউদ : ২/৭০৬]
সালামের মধ্যে রয়েছে ৩টি দোয়া-১. শান্তির দোয়া ২. রহমতের দোয়া ৩. বরকতের দোয়া। একবার যদি সালামের এই দোয়াগুলো কবুল হয়, তাহলে আমাদের অন্তর হবে নিষ্কলুষ এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ সফলতা করবে পদচুম্বন। এই অমূল্য নিয়ামত অন্যান্য জাতির অভিবাদন পদ্ধতিতে কখনও পাওয়া যাবে না। অথচ এই মহা নিয়ামতকে ছেড়ে আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দিচ্ছি “গুডমর্নিং” আর “গুডইভেনিং”। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে? এগুলোতে না আছে দুনিয়ার ফায়দা, না আছে আখেরাতের ফায়দা। এর বিপরীতে সালামের প্রতিটি শব্দ দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ কল্যাণ ও সফলতায় ভরপুর।
Информация по комментариям в разработке