ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)–এর আমল
ফরজ নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং মুমিনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মহানবী (সা.) ফরজ নামাজের পর নির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন, যা তাঁর সুন্নাহর অংশ। এই আমলগুলো নামাজের সওয়াবকে পূর্ণতা দেয়, আধ্যাত্মিক সংযোগ বাড়ায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)-এর আমল ও তার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)–এর আমল
ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)–এর আমল
ফরজ নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং মুমিনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মহানবী (সা.) ফরজ নামাজের পর নির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন, যা তাঁর সুন্নাহর অংশ। এই আমলগুলো নামাজের সওয়াবকে পূর্ণতা দেয়, আধ্যাত্মিক সংযোগ বাড়ায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)-এর আমল ও তার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ফরজ নামাজের পর মহানবী (সা.)-এর আমল
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর নিয়মিত কিছু জিকির, দোয়া এবং অন্যান্য আমল করতেন, যা হাদিসে বিস্তারিত বর্ণিত আছে। যেমন:
১. নির্দিষ্ট তসবিহ পাঠ
তিনি ফরজ নামাজের পর নির্দিষ্ট তসবিহ পাঠ করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে, তারপর একবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির’ বলে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশি হলেও মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৯৭)
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করার আর কিছুই বাধা হবে না।
নাসাঈ, আল–কুবরা, হাদিস: ৯৯২৮
২. আয়াতুল কুরসি পাঠ
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫) পাঠ করা নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করার আর কিছুই বাধা হবে না।” (নাসাঈ, আল–কুবরা, হাদিস: ৯৯২৮)
৩. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ
নবীজি (সা.) ফজর ও মাগরিব নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস তিনবার করে পড়তেন। আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার পড়ো, এটি তোমাদের জন্য সব ধরনের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেবে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৯০৩)
৪. দোয়া ও মুনাজাত
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর দোয়া করতেন। উকবা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে, নবীজি (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর দোয়া করা কবুল হয়।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৯৯)
সাধারণত তিনি এই সময়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং উম্মাহর জন্য দোয়া করতেন। একটি সাধারণ দোয়া হলো:
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি শান্তির উৎস এবং তোমার কাছ থেকে শান্তি আসে, তুমি মহিমান্বিত, হে মহত্ত্ব ও সম্মানের অধিকারী। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৯১)
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর তাঁর স্থানে বসে জিকির করতেন এবং সালাম ফিরিয়ে ডান দিকে মুখ করতেন।
৫. নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে জিকির
নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে জিকির করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, “নবীজি (সা.) ফরজ নামাজের পর তাঁর স্থানে বসে জিকির করতেন এবং সালাম ফিরিয়ে ডান দিকে মুখ করতেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৪৫)
৬. সুন্নত নামাজ
তিন ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.) সুন্নাত নামাজ পড়তেন। জোহরের পর: ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, মাগরিবের পর: ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং ইশার পর: ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ১১৮৩)
ফজিলত ও তাৎপর্য
ফরজ নামাজের পর নবীজি (সা.)-এর এই আমলগুলোর ফজিলত অপরিসীম। এগুলো মুমিনের জন্য:
গুনাহ মাফ: উপরে উল্লিখিত জিকিরগুলো গুনাহ মাফের কারণ হয়।
সুরক্ষা: সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ শয়তান ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
জান্নাতের পথ: আয়াতুল কুরসি পাঠ জান্নাতের পথ সহজ করে।
আল্লাহর নৈকট্য: দোয়া ও জিকির আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করে। (তাফসির ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ১/৪৫৬, দারুস সালাম প্রকাশনী, ২০০০)
মনে রাখতে হবে
ফরজ নামাজের পর জিকির নিয়মিত করা উচিত, ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি সুন্নাহ এবং ফজিলত-পূর্ণ। জিকির ও দোয়া মনোযোগ সহকারে করা, যাতে এর আধ্যাত্মিক প্রভাব পাওয়া যায়। জিকিরের সঠিক উচ্চারণ শেখা উচিত, প্রয়োজনে কোনো আলিমের কাছ থেকে শিখে নিন।
Информация по комментариям в разработке