Скачать или смотреть বাংলা সাহিত্যে চণ্ডীদাস সমস্যা কী? CHANDIDASH PROBLEM IN BANGLA LITERATURE

বাংলা সাহিত্যে চণ্ডীদাস সমস্যা
বাংলা ভাষায় রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত প্রায় ১২শ ৫০টির বেশি কাব্যের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে রচয়িতা হিসেবে বড়ু চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস ও দ্বিজ চণ্ডীদাস- এই তিনটি ভিন্ন নামের উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে নানা পণ্ডিতের মতের যোগ বিয়োগ করে একটি বিষয়ে একমত হওয়া যায় যে, চৈতন্যপূর্ব কবি ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস। এছাড়া চৈতন্য পরবর্তী দুজন পদাবলির হলেন কবি দ্বিজ চণ্ডিদাস এবং দীন চণ্ডীদাস।

চণ্ডীদাস কথা
বৈষ্ণব পদাবলীতে যে চণ্ডীদাস বিভিন্ন পদ রচনা করেছেন, তিনি হলেন পদাবলীর চণ্ডীদাস। নানা কিংবদন্তী ও গালগল্পে পরিপূর্ণ তার জীবন কথা। ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘বাংলাসাহিত্যের ইতিবৃত্ত’ নামের গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে নানা কাহিনীর উল্লেখও করেছেন। যার একটি হলো-
নান্নুর গ্রামে চণ্ডীদাসের জন্ম। তার ছোটভাইয়ের নাম নকুল। নকুল সমাজে বেশ গন্যমান্য ছিলেন। চণ্ডীদাস শাক্ত দেবী বাশুলীর সেবক হলেও বৈষ্ণব সহজিয়া মতের উপাসক ছিলেন। রজকিনী রামী নামের এক নারীর প্রেমে পড়েন। ধারণা করা হয়, বড়ু চণ্ডীদাসের আসল নাম ছিল অনন্ত, কৌলিক উপাধী বড়ু ও গুরুর দেওয়া নাম চণ্ডীদাস।
১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে) বসন্তরঞ্জন রায় বাকুড়া জেলা থেকে চণ্ডীদাসের ভণিতায় একটি পুঁথি আবিষ্কার করেন। বাংলা সাহিত্যে যে গ্রন্থটি শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে খ্যাত। গ্রন্থটি বন-বিষ্ণুপুরের কাছে কাঁকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে ছিল। গ্রন্থটি পরে ১৩২৩ বঙ্গাব্দে কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়। পুঁথিটির মাঝখানের এবং শেষের কয়েকটি পাতা না থাকায় এর নাম জানা যায়নি। পুঁথিটির বিষয়বস্তু কৃষ্ণলীলা বিষয়ক হওয়ায় এর নাম দেওয়া হয় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। পুঁথিটি মুদ্রিত হওয়ার পর গবেষক মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। পুঁথিটি থেকে বাংলা লিপির বিবর্তন সম্পর্কেও অনেক ধারণা পাওয়া যায়।
ড. দীনেশচন্দ্র সেনের মতে, পদাবলীর চণ্ডীদাস ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের চণ্ডীদাস একই ব্যক্তি। তবে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ যুক্তি দিয়ে এই মতকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেছেন। তিনি তিনজন চণ্ডীদাসকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন।

বড়ু চণ্ডীদাস
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষার ব্যাকরণে যেসব প্রাচীনত্বের লক্ষণ আছে, মধ্যযুগের অন্যান্য কাব্যে তা নেই। বড়ু চণ্ডীদাস যে চৈতন্যযুগের আগের কবি ছিলেন, তা বৈষ্ণব-সাহিত্য থেকে প্রমাণিত।
দ্বিজ চণ্ডীদাস
সুকুমার সেনের মতে, দ্বিজ চণ্ডীদাসের জীবনকাল ১৫২৫ খৃস্টাব্দের এদিকে হবে না। বড়ু চণ্ডীদাসের মতো ইনিও বাসুলীর সেবক ছিলেন। সপ্তদশ শতকের পুস্তক সিদ্ধান্ত চন্দ্রোদয় থেকে জানা যায় যে দ্বিজ চণ্ডীদাসেরও তারা নামে এক রজকী সঙ্গিনী ছিলেন। এছাড়া তার পদে বহু আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার দেখা যায়।
দীন চণ্ডীদাস
ইনি চৈতন্য পরবর্তী কবি। তার কাব্যে ব্রজবুলির ব্যবহার দেখা যায়। তিনি কাব্যের কোথাও বাসুলীর উল্লেখ করেননি। দীন এবং দ্বিজ চণ্ডীদাসের পদের মধ্যে বহুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে-যার সম্পূর্ণ সমাধান আজও হয়নি। দীন চণ্ডীদাস একটি ধারাবাহিক কৃষ্ণযাত্রা রচনা করেন। এদিক দিয়ে বড়ু চণ্ডীদাসের সঙ্গে তার মিল আছে।

চণ্ডীদাসের কয়েকটি বিখ্যাত উক্তি
• সই কেমনে ধরিব হিয়া। আমার বঁধুয়া আন বাড়ী যায়। আমার আঙিনা দিয়া।
• শুনহ মানুষ ভাই। সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।
• সই কেবা শুনাইল শ্যাম নাম।
• প্রণয় করিয়া ভাঙে যে। সাধন-অঙ্গ পায় না সে।