Скачать или смотреть ইতিহাস ও ঐতিহ্যে হালুয়াঘাটের শাকুয়াই বাজার (চ্যানেল ইছামতি)

#চ্যানেল_ইছামতি #channel_ichamoti #ইতিহাস
শাকুয়াই বাজার!

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল শাকুয়াই।

সুপ্রিয় দর্শক,আজ কথা বলবো শাকুয়াই বাজারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী শাকুয়াই বাজার। শাকুয়াই বাজারের পূর্বনাম ছিল আনন্দগঞ্জ।

স্থানীয় মুরুব্বীদের কাছ থেকে নেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে বর্তমান শাকুয়াই বাজারে মূলতঃ কোন বাজার ছিল না।
শাকুয়াই ঈদগাহ মাঠের কাছে স্থানীয় বাজার ছিল। যেটি বন্দ কোনা বাজার নামে পরিচিত ছিল।আর কংশ নদের ওপাড়ে ছিল বড়ইকান্দী বাজার। সে আমলেই বাজার দুটি ভেঙে আনন্দগঞ্জ শাকুয়াই বাজার নামে এ বাজারটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
০২

সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই পাটের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল এ বাজার। সে সময় কংশ নদ দিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীরা পাট ও ধান ক্রয়ের জন্য শাকুয়াই বাজারে শত মনি নৌকা নিয়ে আসতে থাকেন। আস্তে আস্তে জমজমাট হতে শুরু করে এ বাজার। এখানে একটি পাঁকা ঘাট রয়েছে।যা কংশ নদের গুরুত্ব বহন করে। বর্তমানে সেটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে।

বিভিন্ন অঞ্চলের জমিদার,জোতদার, জায়গিরদার,তালুকদার ও মহাজন ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে এ বাজারে।
০৩


তবে সে সময়ের স্মৃতি বলতে রয়েছে এই দু'তল বিশিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পুরোনো ভবন। ভূমি অফিসের পুরোনো নাম ছিল তহসিল অফিস। যা সে সময় তহসিলদার, নায়েব, তালুকদারগণ পরিচালনা করে জমির খাজনা আদায় করতেন।

বর্তমানে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা নায়েবগণ খাজনা আদায় করেন।

তবে এটি কিন্তু ভূমি অফিস ছিল না। এই ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন জিয়নমল বাচাউদের পুত্র চাম্পালাল ভেরুধন বাচাউদ। তিনি ছিলেন পশ্চিমা "কায়া" কায়স্থ সম্প্রদায়ের একজন ব্যবসায়ী।
এই অঞ্চলটি মূলত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ছিল।
০৪

বন্ধকোনা এবং বড়ইকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত বাজার থাকার পরও এখানে কংস নদের পাড়ে ছিল নটি বাড়ি ঘাট।এখানে চাম্পালাল ভেরুধন বাচাউদ এর ছিল বাগান বাড়ি। সামনে ব্যবস্যা বাণিজ্য পরিচালিত হতো। আর পেছনে ছিল বাগানবাড়ি। এখানে বাঈজি বাড়িও ছিলো।বিভিন্ন এলাকার রাজা জমিদারগণ আমোদ ফুর্তি আর জুয়া খেলতে নদীপথে এখানে আসতেন। আর প্রসিদ্ধ নটি বাড়ি ঘাটে নৌকা ভিড়াতেন। মজার ব্যাপার,সেই ব্রিটিশ আমলেও এই বাজারে লাইসেন্সকৃত মদের দোকান ছিল।বার চালাতো মহাজনরা।
০৫

জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর সবকিছু শেষ হয়ে যায়। আর চাম্পালাল ভেরুধন বাচাউদ ঘর টি রেখে ভারতে চলে যান। সে সময় থেকে এটি খাজনা তুলার কাজে ব্যবহার করতে থাকেন সে সময়ের তফসিলদারগণ। তবে ঘরের নির্মাণশৈলী এখনো দৃষ্টি নন্দন। এই ঘরের দরজার নকশাগুলো দেখলে সে সময়ের নির্মাণশৈলীর কথা মনে হয়।
০৬

ঘরের ভেতর কাঠের খামগুলো অনেক বড় ও মজবুত। তবে কি কাঠের তৈরি তা বলা মুশকিল। কেউ বলেন সেগুন, কেউ বলেন শিরিশ কাঠ। তবে এগুলো নির্মান করতে সে সময়ে হাতি ব্যবহার করা হতো বলে শতবর্ষী মুরুব্বিরা জানান। টিনগুলো বর্তমান ঢেউটিন কে পেছনে ফেলবে। ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এই ঘরে এখন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা থাকেন। পুরোনো নিদর্শন হিসেবে ঘরটি সংরক্ষণ করা গেলে ভবিষ্যত প্রজন্ম অতীত নিদর্শন জানতে পারবে বলে এলাকাবাসীরা অভিমত ব্যক্ত করেন।

০৭

যাক অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসি।
শাকুয়াই বাজারটির উত্তরে বিলডোরা পশ্চিমে স্বদেশী, দক্ষিণে ও পূর্বে ফুলপুর উপজেলার অবস্থিত।

শাকুয়াই ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল হালুয়াঘাটের শাকুয়াই গোদারাঘাট ও ফুলপুরের বড়ইকান্দি এই দুইয়ের মাঝখানে কংশ নদের উপর একটি সেতু হবে। ইতিমধ্যেই সব প্রক্রিয়া শেষ।ইতিমধ্যেই সেতুর কাজ শুরু হয়েছে।সেতুটি নির্মান হলে  ফুলপুরের সাথে এই এলাকার যাতায়াত আরো সহজ হবে,জন ভোগান্তি কমবে বলে সবাই আশাবাদী।
০৮

এই বাজারে রয়েছে পরিত্যক্ত গোদামঘর। যা ১৯৮১ সালে উদ্বোধনের কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেই এখনো এটি পরিত্যক্ত অবস্থায়ই রয়েছে। অথচ এটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষ এখানে ন্যায্যমূল্যে ধান চাউল বিক্রি করতে পারতো।

শাকুয়াই বাজারের চেয়ে এখন শাকুয়াই বাজারের চৌরাস্তা বেশ জমজমাট।এ চৌরাস্তাটি দত্তের মোড় নামে পরিচিত।এই বাজারের আশেপাশে আদিকাল থেকেই প্রচুর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। শিক্ষার আলো এই এলাকায় ছড়িয়েছে অনেক আগে থেকেই। সুপ্রিয় দর্শক আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে কথা বলবো শাকুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শাকুয়াই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ নিয়ে। সে পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
#শাকুয়াই


#