সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন। এটি বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি , যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময় গুলির মধ্যে অন্যতম । বনটি, বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে থাকেন।
১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে
এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র তিনটি নদীর অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও রগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত । সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে নদীনালা, এবং খাল বিল। সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান। গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার
মধ্যবর্তী স্থান হলো এ এলাকাটি।
বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। প্রাচীন আদিবাসীদের কাছে এই বন চন্দ্র বান্দে বা সমুন্দ্র বন নামে পরিচিত ছিল।
অনেকের ধারনা এর থেকে এই বনের নাম সুন্দরবন হয়েছে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।
মুঘল আমলে স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করে। ১৮৬০ সালে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে বনটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশের মধ্যে পড়ে। যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.২% । অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং বন্য প্রাণীর এক বিশাল আবসস্থল। সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, অজগর, কুমির, গুইসাপ, গিরগিটি , চিত্রা হরিন , বানর এবং নানা প্রজাতির কচ্ছপ। এছাড়াও ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী,
৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল হচ্ছে এই বন। সরকারী হিসাব মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে।
২১ শতকের শুরু থেকে জাভাদেশীয় গন্ডার ও মিঠাপানির কুমিরের মত কিছু কিছু প্রাজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে।
ইতোমধ্যেই বহুপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে যার মধ্যে আছে বুনো মহিষ, পারা হরিণ, বুনো ষাঁড়, ছোট ও বড় একশৃঙ্গি গণ্ডার, বার শিংগা, চিতা বাঘ। আরো বিলুপ্ত হয়েছে সাদা মানিক , জোড়া কান ঠুনি, বোঁচা হাঁস, গগন বেড়, জলার তিতিরসহ বিভিন্ন পাখি।
২০০৪ সালের হিসাব মতে সুন্দরবন ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের এক বৃহত্তম অংশ। এই বাঘ গুলো গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন মানুষ মেরে ফেলে। স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
বাঘ সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে তাই জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ করে।
সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের উপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ১২০ প্রজাতির, কাঁকড়া-চিংড়ি ১২ প্রজাতির ও ৯ প্রজাতির শামুক রয়েছে। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিনের ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ।
কিন্তু আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। সুন্দরবনের সবচেয়ে পরিচিত মাছ পারশে মাছ। ১৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এ মাছটি জঙ্গলের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া তো।
এই বিলগুলোর পানি মিঠা, এখানে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ জিওল মাছ। এছাড়াও কই, শিং, মাগুর, দুই প্রজাতির টাকি, শোল, ছোট টেংরা, পুঁটি, খলসে, চ্যালা, দাঁড়কিনা, কুঁচো চিংড়িসহ নানা মাছ পাওয়া যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এসব বিলে নোনা পানি ঢুকছে। এই বিলগুলোর তাই মাছ শুন্য হওয়ার দিন গুনছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল জোগান দেয়।
Fan Pages:
Facebook - / alapcaritayt
Instagram- / uttorayonyt
Disclaimer:
This channel may use some copyrighted materials without specific authorization of the owner but contents used here falls under the “Fair Use”
Copyright Disclaimer under Section 107 of the Copyright Act 1976, allowance is made for "fair use" for purposes such as criticism, comment, news reporting, teaching, scholarship, and research. Fair use is a use permitted by copyright statute that might otherwise be infringing. Non-profit, educational or personal use tips the balance in favor of fair use.
#Sundarbans #UTRN #UttoRayoN
Информация по комментариям в разработке