Скачать или смотреть foot rot and remedy

গরুর "ফুট রোট" রোগ :
--------------------------------------------------------------
ফুট-রট রোগকে “ইন্টারডিজিটাল নেক্রোব্যাসিলোসিস” বা “ফাউল আন দি ফুট”ও বলা হয়ে থাকে। ফুট-রট পশুর পায়ের ক্ষুরের চারদিকে ও দুই ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানে টিস্যুর প্রদাহজনিত একটি সংক্রামক রোগ। খোঁড়ানো এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কারণতত্ত্ব
এক জাতীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় গরু, ভেড়া ও ছাগলের এ রোগ হয়ে থাকে। সব বয়সের গরু এবং দুই মাস বয়সের অধিক ছাগল ও ভেড়াতে এ রোগ দেখা দিতে পারে। বর্ষা ও স্যাঁতস্যেতে ঋতুতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে। ডেয়রী খামারের গবাদিপশুতে এ রোগের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং দেশী জাতের গরু অপেক্ষা বিদেশী বা শংকর জাতের গরু অধিক সংবেদনশীল হয়ে থাকে। আক্রান্ত প্রাণীর পায়ের ক্ষতের নির্গত পদার্থ এ রোগের জীবাণুর উৎস। সংবেদনশীল পশুর পায়ের করোনেট বা দুই ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যুতে ধারালো কোনো কিছুর আঘাতে ক্ষত সৃষ্টি হলে এবং সেই ক্ষত সবসময় কাদামাটি বা মলমূত্র দ্বারা ভেজা থাকার ফলে উক্ত ক্ষতের মাধ্যমে রোগজীবাণু সহজেই দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সূত্রপাত ঘটায়।
রোগ লক্ষণ
আক্রান্ত পশুর পায়ের করোনেট ফুলে যায় ও পশু খোঁড়াতে থাকে।
দেহের তাপমাত্রা ১০৩০-১০৪০ফা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত পশুর খাদ্য গ্রহণে অরুচি দেখা দেয়।
জীবাণুর জটিলতার কারণে অস্থিসন্ধি প্রদাহ, সাইনোভিয়াল প্রদাহ ও টেন্ডনের প্রদাহ দেখা দেয় এবং এ অবস্থায় পশু শুয়ে পড়ে।
অনেক সময় পায়ের ক্ষতে পুঁজ হয় ও টিস্যুতে পচন ধরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা না হলে ক্ষুর খসে যেতে পারে এবং পশু স্থায়ীভাবে খোঁড়া হয়ে যায়।
রোগ নির্ণয়
ক) রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নিদানিক লক্ষণসমূহ বিশেষ করে পায়ের করোনেটের ক্ষত পরীক্ষা করে এ রোগ সনাক্ত করা যায়।
খ) সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাণিসম্পদের অধীনে পরিচালিত পশুরোগ অনুসন্ধান ল্যাবরেটরি বা বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত পশুরোগ অনুসন্ধান ল্যাবরেটরিতে পায়ের ক্ষত স্থানের সোয়াব পরীক্ষা ও কালচার করে এ রোগের জীবাণু সনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা
১। আক্রান্ত প্রাণীকে পরিষ্কার শুষ্ক পরিবেশে রাখতে হবে এবং নিম্নে উল্লিখিত যে কোনো একটি এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।
২। প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২২,০০০ ইউনিট হিসাবে প্রোকেইন পেনিসিলিন জি দিলে দুই বার মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।
৩। প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ মিলিগ্রাম হিসাবে ইরিথ্রোমাইসিন বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন শিরা বা মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।
৪। ছাগলও ভেড়ার ক্ষেত্রে প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৭৫ মিলিগ্রাম স্ট্রেপটোমাইসিন এবং ৭০০০ ইউনিট প্রোকেইন পেনিসিলিন মাংসপেশীতে ইনজেকশন করতে হবে।
৫। প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৫০-২০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম সালফা-ডিমিডিন শিরা বা পেরিটোনিয়ামের মধ্যে ইনজেকশন করতে হবে।
৬। আক্রান্ত পায়ের বিনষ্ট টিস্যু পরিষ্কার করে এন্টিসেপ্টিক ও এসট্রিনজেন্ট ওষুধ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়া যায়। এছাড়া ৫% কপার সালফেট বা ৫% ফরমালিন দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করে ১০% জিংক সালফেট ব্রাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করলেও উপকর হয়।
রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
গবাদিপশুর পায়ে যেন কোনো প্রকারের ক্ষত সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। এজন্য ধান বা অন্যান্য শস্য কেটে নেবার পর সেই ক্ষেতে গবাদিপশু চরানো উচিত নয় কারণ কেটে নেয়া শস্যের গোড়ার চোখ অংশ থেকে ক্ষুরের মাঝে ক্ষত হতে পারে।
ফুট-রট আক্রান্ত খামার বা পাল থেকে কোনো সময় পশু ক্রম করা যাবে না।
খামারে পালনের উদ্দেশ্যে পশুর হাট থেকে পশু ক্রয় করা উচিত নয় কারণ সেখানে অসুস্থ ও সুস্থ দু’ধরনের পশুই এক সাথে থাকে।
যেখানে পশু শেষ দুই সপ্তাহ থাকে সেখানকার সকল সুবিধাদি যেমন যে স্থান দিয়ে পশু নেয়া হয়, পশুর খোঁয়াড়, ডিপিং এলাকা (পা ডোবানোর স্থান) প্রভৃতি ব্যবহার করার এলাকা পরিষ্কার করতে হবে।
পশুকে যে পরিবহনে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া হয়েছে সে পরিবহন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত না করে পুনরায় পশু পরিবহন করা যাবে না।
নতুন ক্রয়কৃত পশুর ক্ষুর ট্রিমিং ও চিকিৎসা শেষে ৩০ দিন পৃথকভাবে রেখে পরীক্ষা ও চিকিৎসা করা উচিত।
জিংক সালফেট ১০% বা কপার সালফেট ৫% ফুট বাথ (পা ধোয়ানোর জন) হিসাবে প্রতিদিন দুই বার ব্যবহার করা হলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করা যায়। এজন্য খামারের প্রবেশ পথে কপার সালফেট ৫% সলিউশন ফুট বাথ হিসাবে রেখে প্রত্যেক পশুকে তার মাঝ দিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলে স্বভাবতই পায়ে ওষুধ প্রয়োগ হয়। এজন্য প্রতিদিন পুরাতন সলিউশন ফেলে দিয়ে নতুন সলিউশন প্রস্তুত করতে হবে।
প্রতিটি গরুকে প্রত্যহ ৫০০ মিলিগ্রাম হিসাবে ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন ২৮ দিন এবং পরে প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রাম হিসাবে খাওয়ানো হলে এ রোগ প্রতিরোধ হয়।
এছাড়াও গরু দৈনন্দিন খাদ্যে ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম অর্গানিক আয়োডাইড খাওয়ালেও এ রোগ প্রতিরোধ হয়।