বিহার জয়ের পরে বাংলা জয়, নাকি বাংলাতে হেরে আবার আবার দিল্লিতে ফিরে যাওয়া? এ বঙ্গে এখন সেটাই আলোচনা, আর সমাজ মাধ্যম দেখলে এক্কেবারে পরিস্কার হয়ে যাবে যে বিজেপি আইটি সেল তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফেসবুক জুড়ে আমি অজানা, নতুন বাংলা, এবার পরিবর্তন নামে বেশ কিছু পেজ বা গ্রুপ, সেখানে এক আপাত নিরপেক্ষ মানুষজনের লেখা কিছু কথা যার নির্যাস হলো বাংলাতে কিছুই হচ্ছে না, বাংলা গেছে উচ্ছন্নে, আমার আপনার সন্তানেরা তো বেঙ্গালুরুতে বা পুনেতে, সারা দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা কেন পিছিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর ইউটিউবে সব নিরপেক্ষতা ঝেড়ে ফেলে এক্কেবারে নেমে পড়েছেন সেই তাঁরা যাঁদের প্রতিটা পোস্ট এ বিষ ঝরছে, বুড়ো শেয়াল থেকে ঝকঝকে কিশোরী, কী অনায়াসে বিষ ছড়িয়েই যাচ্ছেন সারা দিন। এমনিতে ধরুন ১৫পনেরো বছর তো কম সময় নয়, আর দলের নাম তৃণমূল, তো সেই নেতারা যারা সেখানে আগে ছিলেন বা পালাবদলের পরে আলতো করে ঢুকে পড়েছেন, ভয়ঙ্কর বিপ্লবী কথাবার্তা বলার পরে আপাতত এম এল এ বা এম পি হওয়ার আকাংখ্যায়, বা যাঁদের স্বপ্নপূরণ হয়েছেও, তাঁরা তো জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব করতে আসেন নি, তাঁদের কেউ কেউ এই ক বছরে সাত পুরুষের রোজগার সেরে ফেলেছেন, কেউ কেউ এত যশ উপার্জন করেছেন যে ঘুমের ঘোরেও নিজের নামের আগের বিশেষণ নিয়ে ভুল বকেন। কাজেই সেই দূর্নীতির ছাপ সর্বত্র আছে, ১৫ বছরের অ্যান্টি ইনকম্ব্যান্সিও আছে। কাজেই বিজেপি আইটি সেলের কনটেন্ট ক্রিয়েটারদের কনটেন্ট ও রেডি আছে, তাঁরা উগরে দিচ্ছেন, আগেও বলেছিলাম, আবারও বলছি কেবল মাত্র ৫/৬ জন ইউটিউবারের জন্য ৬/৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাঁরা আসল সানাইটা বাজাবেন, নতুনেরা পোঁ ধরবেন। হ্যাঁ এসব দেখেই বুঝতে পারবেন দিল্লি থেকে রসদ আসছে। এবং তারসঙ্গে ভোকাল টনিক। ঐ যে অবকিবার ৪০০ পার ২০২৪ এ, বা ধরুন ২০২১ এ অবকি বার দোশ পার, আমরা তো শুনেছিলাম। হ্যাঁ সেই গলাবাজিও শুরু হয়ে গেছে। স্বপ্নের পোলাও এ কাউকে আমি অন্তত ঘি কম দিয়েছে বলে শুনিনি। এক চটকায় ঘুম ভাঙার পরেও নাকে সেই সুঘ্রাণ লেগে থাকে, গোবিন্দভোগের পোলাওয়ে গাওয়া ঘি এর গন্ধ। হ্যাঁ সেই গন্ধ লেগে রয়েছে আমাদের শান্তি কুঞ্জের খোকাবাবু শুভেন্দু অধিকারির নাকে, আহা সেই সব দিনের স্বপ্ন, ওনাকে মুর্শিদাবাদ জয় করতে পাঠানো হল, তিনি জয় করে ফিরলেন, দিদি খুশি। কিন্তু তিনি কি বুঝেছিলেন যে সে জয়ের সিংহভাগ কৃতিত্ব তাঁর নয়, দিদিমণির? মমতা না থাকলে উনি সারা রাজ্যে ঘুরে বেরানোর জায়গাটুকুও পেতেন না, ইন ফ্যাক্ট মমতার পক্ষপাতিত্বে কেবল উনি নয়, শান্তিকুঞ্জে যে রাজনৈতিক ক্ষমতা জমাট বেঁধেছিল, সেটাও ঐ দিদিমণিরই জন্য। না সম্ভবত সেটা বোঝার বোধবুদ্ধি ওনার নেই। তাই মাত্র গতকাল তিনি কীর্নাহারে এলেন, জনসভায় জানালেন তিনি নন্দীগ্রাম না শুরু করলে দিদি নাকি দিদিমা হয়ে যেতেন, বাংলার ক্ষমতায় আসতে পারতেন না। কী অবোধ উচ্চারণ, শোনার পরে ৩৬ মিনিট হেঁসেছি, অনেকদিন পরে বিশুদ্ধ হাস্যরস। সেদিন মঞ্চের তলায় দাঁড়িয়ে থাকা শুভেন্দু অধিকারি নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার মসনদে বসিয়েছিলেন। সে থাক কেবল জানতে মন চায়, ও শুভেন্দু বাবু, সে কোন মন্ত্র ছিল যা উচ্চারণ করে আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার গদিতে বসিয়েছিলেন? ২০২১ এর নির্বাচনে অব কি বার দো শ পার বলার পরে কি সেই মন্ত্রটা পড়তে ভুলে গিয়েছিলেন? যে মন্ত্রে একজন কে সিংহাসনে বসালেন, সেই মন্ত্র নিজেই ভুলে মেরে দিলেন? এবং এখানেই থামেন নি, জানিয়েছেন উনি কেষ্ট মোড়ল বা কাজল শেখের ছেয়েও বড় গুন্ডা লক্ষণ শেঠ বা সুশান্ত ঘোষকে ঠান্ডা করে দিয়েছিলেন। তো একতা সিম্পল প্রশ্ন আছে খুঁজে পেতে দেখলাম, আপনার পিতাশ্রী, যাঁকে আপনি শিশির বাবু বলেই সম্বোধন করেন, সেই তিনি কিন্তু কংগ্রেস থেকে ২০০১ এ তৃণমূলে, মানে মমতার তৃণমূলে আসার পরেই প্রথম বিধায়ক হিসেবে বিধানসভাতে গেছেন, তার আগে ওই কাঁথি মিউনিসিপালিটিতেই আটকে ছিলেন। কেন বলুন তো? আপনার বাবাকেও সেই মন্ত্র দেন নি? আপনি নিজে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তো কংগ্রেসেই ছিলেন, কোন দুববো ঘাস উৎপাটিত করেছেন? কেন ঐ তৃণমূল থেকেই ২০০৯ এ সাংসদ হলেন তমলুক থেকে? তৃণমূলের স্ট্যাম্প ছাড়া যে পরিবার কাঁথির বাইরে বের হতে পারেনি, সেই পরিবারের বড়খোকা আজ নিজের উচ্চাকাংখ্যা চরিতার্থ করার জন্য বিজেপি তে গেছেন, বাংলার মসনদে বসার জন্যই গেছেন, বেশ করেছেন, কিন্তু তার জন্য আবোল তাবোল বকতে হবে? বীরভূমে ১৫ দিন পর পর আসবেন? নাকি ৭/৮ টা সন চাই, আছে মোট ৮ টা তারমধ্যে ৭/৮ টা চাই? আগের ফলাফলগুলো দেখে নিন। ২০১৬ তে বীরভূমে তৃণমূলের ভোট ছিল ৪৮.৩%, বামেদের ২৩%, কংগ্রেসের ১২% আর বিজেপির ১১%। হ্যাঁ এটাই বিজেপির কোর ভোট। ১১ তার মধ্যে একতা কংগ্রেস, একতা সিপিএম আর বাকি ৯ টা তৃণমূলের। ২০২১ এ তৃণমূলের ৫২%, বাম কংগ্রেসের মিলে ৫.৮% আর বিজেপির ৩৯.৭%। একটা আসন বিজেপির, দুবরাজপুরে আর বাকি ১০ টা তৃণমূলের। ২০২৪, লোকসভা, কেষ্ট মোড়ল জেলে, দুটো আসন, বোলপুর আর বীরভূম, তৃণমূলের ভোট ৫২.১%, বিজেপির ৩৪.৩% আর কং বাম ১০.৬%। মানে বোঝা গেছে শুভেন্দু বাবু? গ্যাপটা হল ১৮% এর? মনে হয় এই গ্যাপ কে খুব জোড় দুই কি তিন শতাংশ কমাতেও পারবেন? আর বামেরা খানিক বেড়ে গেলে? দুবরাজপুরও হাত থেকে যাবে, হাতে থাকবে আপনা প্রিয় খঞ্জনি।
Информация по комментариям в разработке