Скачать или смотреть Introduction, Objects, Significance and Kinds of Teaching

Introduction, Objects, Significance and Kinds of Teaching
সূচনা
শিক্ষণ (Teaching) একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে জ্ঞান, দক্ষতা এবং মূল্যবোধের আদান-প্রদানকে বোঝায়। এটি কেবল তথ্য সরবরাহ নয়, বরং শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশে সহায়তা করার একটি পদ্ধতি। শিক্ষণের মূল লক্ষ্য হলো একজন ব্যক্তিকে স্বনির্ভর, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনায় সক্ষম এবং সমাজের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত হয় এবং এর উদ্দেশ্য, পদ্ধতি এবং ফলাফলও বিভিন্ন রকম হতে পারে।
শিক্ষণের উদ্দেশ্য (Objects of Teaching)
শিক্ষণের উদ্দেশ্য হলো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা ফলাফল অর্জন করা। শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কী অর্জিত হবে, তা এই উদ্দেশ্যগুলো নির্ধারণ করে। শিক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:
১. জ্ঞানীয় উদ্দেশ্য (Cognitive Objectives): এই উদ্দেশ্যগুলো শিক্ষার্থীর জ্ঞান এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে রয়েছে:
তথ্য অর্জন: নতুন তথ্য, তত্ত্ব এবং ধারণা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
বোঝার ক্ষমতা: শেখা তথ্যকে ব্যাখ্যা করা এবং এর অর্থ উপলব্ধি করা।
প্রয়োগ: অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা।
বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ: কোনো বিষয়কে ভেঙে তার উপাদানগুলো বোঝা এবং বিভিন্ন ধারণাকে একত্রিত করে নতুন কিছু তৈরি করা।
মূল্যায়ন: কোনো ধারণা, তথ্য বা কাজের গুণগত মান বিচার করা।
২. আবেগিক উদ্দেশ্য (Affective Objectives): এই উদ্দেশ্যগুলো শিক্ষার্থীর মনোভাব, আবেগ, মূল্যবোধ এবং আগ্রহের বিকাশের সাথে সম্পর্কিত।
গ্রহণশীলতা: কোনো ধারণা বা তথ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং তা গ্রহণ করা।
প্রতিক্রিয়া: শেখা বিষয়ের প্রতি সক্রিয়ভাবে সাড়া দেওয়া, যেমন - প্রশ্ন করা বা আলোচনায় অংশ নেওয়া।
মূল্য নির্ধারণ: কোনো বিষয় বা ধারণাকে মূল্য দেওয়া এবং তার গুরুত্ব উপলব্ধি করা।
সাংগঠনিক কাঠামো: বিভিন্ন মূল্যবোধকে একত্রিত করে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ মূল্যবোধ ব্যবস্থা তৈরি করা।
চরিত্র গঠন: একটি নির্দিষ্ট মূল্যবোধের ভিত্তিতে আচরণ করা, যা তার চরিত্রের অংশ হয়ে যায়।
৩. মনোপেশীয় উদ্দেশ্য (Psychomotor Objectives): এই উদ্দেশ্যগুলো শারীরিক দক্ষতা এবং মোটর কার্যক্রমের বিকাশের সাথে সম্পর্কিত।
নকল করা: কোনো দক্ষতা দেখে তা অনুকরণ করা।
হাতে-কলমে অনুশীলন: কোনো দক্ষতা বার বার অনুশীলন করে তাতে পারদর্শী হওয়া।
স্বয়ংক্রিয়তা: দক্ষতার অনুশীলন করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছানো, যেখানে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়।
শিক্ষণের তাৎপর্য (Significance of Teaching)
শিক্ষণ প্রক্রিয়া মানব সমাজ এবং ব্যক্তি জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কিছু প্রধান তাৎপর্য নিচে দেওয়া হলো:
১. জ্ঞান ও দক্ষতার বিস্তার: শিক্ষণ জ্ঞান ও দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সঞ্চারিত করে। এটি মানব সভ্যতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২. ব্যক্তিগত বিকাশ: এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, স্বনির্ভরতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। শিক্ষণ মানুষকে নিজেদের সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে এবং তা বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করে।
৩. সামাজিক পরিবর্তন: শিক্ষণ সমাজকে কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা থেকে মুক্ত করে। এটি সামাজিক ন্যায়, সাম্য এবং সহনশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
৪. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: শিক্ষণ উন্নত কর্মশক্তি তৈরি করে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। দক্ষ শ্রমিক, বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নতুন উদ্ভাবনে অবদান রাখে।
৫. নৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিকাশ: শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ এবং সামাজিক প্রথার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে। এটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
শিক্ষণের প্রকারভেদ (Kinds of Teaching)
শিক্ষণের পদ্ধতি, লক্ষ্য এবং প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে একে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রধান কিছু প্রকারভেদ নিচে দেওয়া হলো:
১. উদ্দেশ্য-ভিত্তিক শিক্ষণ (Based on Objectives):
জ্ঞান-ভিত্তিক শিক্ষণ: এর মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর মধ্যে নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান সঞ্চার করা। যেমন - ইতিহাসে কোনো তারিখ বা ঘটনা মনে রাখা।
বোঝা-ভিত্তিক শিক্ষণ: এর লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয়ের গভীর অর্থ বা ধারণা বুঝতে সাহায্য করা। যেমন - কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র বা সাহিত্যকর্মের অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝা।
প্রতিফলন-ভিত্তিক শিক্ষণ: এই শিক্ষণে শিক্ষার্থীরা সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদের চিন্তাভাবনা এবং যুক্তিতর্ক ব্যবহার করে। এটি সৃজনশীলতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশে সহায়তা করে।
২. স্তর-ভিত্তিক শিক্ষণ (Based on Levels):
স্মৃতি স্তর (Memory Level): এই স্তরে শিক্ষণের মূল লক্ষ্য হলো তথ্য মুখস্থ করা এবং তা মনে রাখা। এটি সাধারণত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা প্রধান।
বোঝা স্তর (Understanding Level): এই স্তরে শিক্ষার্থীরা তথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ এবং কারণ সম্পর্কে জানতে পারে। শিক্ষক উদাহরণ এবং ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।
প্রতিফলন স্তর (Reflective Level): এটি শিক্ষণের সর্বোচ্চ স্তর। এই স্তরে শিক্ষার্থীরা সমস্যা সমাধান করতে, বিশ্লেষণ করতে এবং নতুন ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা একজন পথপ্রদর্শকের মতো এবং শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সক্রিয় থাকে।
৩. পদ্ধতি-ভিত্তিক শিক্ষণ (Based on Methods):
শিক্ষক-কেন্দ্রিক শিক্ষণ (Teacher-centered): এই পদ্ধতিতে শিক্ষকই জ্ঞানের প্রধান উৎস। তিনি বক্তৃতা, পাঠ্যপুস্তক এবং অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করেন। শিক্ষার্থীরা এখানে নিষ্ক্রিয় থাকে।