Скачать или смотреть গরুর খুরা রোগ চিকিৎসা ও প্রতিকার

‪@EKrishiKotha‬ #fmd
গরুর খুরা রোগ বা ক্ষুরা রোগ কে অনেকে গরুর জরা রোগ বা গরু জরা বলে। গরু জরলে বা গরুর ক্ষুরা রোগ হলে সাধারণত গরুর ক্ষুর বা পায়ে ও গালে ক্ষত সৃষ্টি হয় এজন্য গরুর ক্ষুরা রোগ কে পায়ের পাতা বা ক্ষুর ও মুখের ক্ষত রোগ বা ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ বা এফ. এম.ডি (Foot & Mouth Disease বা FMD) বলে। এটা একটি ভাইরাসজনিত রোগ।


গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষন

ক্ষুরা রোগের জন্য দায়ি ভাইরাস গরুর দেহে প্রবেশের পর গরুর দেহে যে সকল লক্ষণ দেখা দেয় তা নিম্নরূপ-

১. পায়ের ক্ষুরের চারিদিকে ও ক্ষুরের মাঝে ক্ষত বা ঘা দেখা দেয়।
২. দাতের মাড়ি, জিহ্বা ও সম্পূর্ণ মুখে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টির ফলে গাল বা মুখ দিয়ে লালা পড়ে বা লালা ঝরে এবং গরুর মুখ বা গাল খাবার গ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ে।
৩. পায়ে ক্ষতের ফলে গরু হাটাচলা করতে কষ্ট বোধ করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে থাকে।
৪. ক্ষুরা রোগ হলে গরুর শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মক আকারে বেড়ে যায়।
৫. গাভীর ওলানে ক্ষত বা ফোসকা দেখা দিতে পারে।
৬. ক্ষুরা রোগের ফলে গর্ভবর্তী গাভীর গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।
৭. ক্ষুরা রোগের ফলে দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মক আকারে কমে যায় বা হ্রাস পায়।
৮. ক্ষুরা রোগের আক্রমণে বয়স্ক গরু ও বাস্তুর দ্রুত দূর্বল হয়ে পড়ে এবং মৃত্যু ঝুকি বেড়ে যায়।


গরুর ক্ষুরা রোগ হলে বা গরু জরলে করনীয়ঃ

১. দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

২. ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরু কে অন্যান্য সুস্থ গরু থেকে দ্রুত আলাদা করতে হবে।

৩. ক্ষুরা রোগ হলে গরুর গালে ঘা থাকায় শক্ত খাবার ক্ষেতে পারে না তাই নরম, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ সুষম খাবার প্রদান করতে হবে।

৪. গরুকে পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে এবং শুষ্ক ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে, ভিজা ও কাদা মাটিতে রাখলে বা রাখলে গরুর পায়ের ক্ষত বেড়ে যেতে পারে।
৫. গরুকে শুষ্ক ও আরাম দায়ক পরিবেশে রাখতে হবে, নিয়মিত রোগাক্রান্ত গরুর ওষুধ প্রয়োগ ও দেখা শোনা করতে হবে।


গরুর ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন ও টিকা

গরুকে ক্ষুরা রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন সাধারন্ত ৬ মাস অস্তর বছরে ২ বার নিতে হয়।

১ম ডোজ দেওয়ার পর প্রতি ৬ মাস অন্তর গরুকে ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হয়। অর্থাৎ বছরে দুই বার FMD টিকা দিতে হয়।


গরুর ক্ষুরা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসাঃ

ক্ষুরা রোগ হলে নিম্নোক্ত ঘরোয়া চিকিৎসা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে প্রয়োগ করতে হবে-
১. গরুর পা ও ক্ষুর, বাট এবং গাল হালকা গরম জল বা পানিতে সামান্য পটাশ (পটাশিয়াম পার ম্যাগনেট) মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার ধুইয়ে দিতে হবে।
২. দিনে ২ বার ১০ গ্রাম বা দুই চা চামচ ফিটকিরি এক লিটার পানিতে মিশিয়ে সেই পানি বা জল দিয়ে মুখ বা গাল বা জিহ্বা ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
৩. সোহাগা কড়াইতে দিয়ে জ্বাল দিলে তা বই এর মত ফুটে উঠলে তা কড়াই থেকে নামিয়ে বেটে মিহি গুড়া করে গরুর গাল, পা ও গুলান বা বাটের ক্ষত স্থানে লাগাতে হবে।



গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসাঃ

• ১. ওষুধ প্রয়োগের সময় খাবার সোডা এক লিটার জলে ৪০ গ্রাম মিশিয়ে গরুর পায়ের ক্ষত স্থানে লাগিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

২. পা পরিষ্কার করার পর দ্রুত ঘা বা ক্ষত শুকাতে Sulfanilamide বা Tetracycline powder পাউডার গরুর পা বা ক্ষুরের মাঝের ক্ষত স্থানে ভালো করে লাগিয়ে দিতে হবে।
এই পাউডার দেয়ার সময় সাথে কর্পূর মিশাতে হবে যাহাতে মশা মাছি না পড়ে।

৩. গরু বা বাছুরের জ্বর কমাতে Paracitamol গ্রুপের ট্যাবলেট বা লিকুইড বা সিরূপ শরীরের তাপ কমানো পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।


৪. গরুর মুখে, গালে, জিহ্বায় ও মাড়িতে সোহাগা ভেজে খই বানিয়ে তা গুড়া করে এর সাথে মধু মিশিয়ে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে এতে বাধা, ফোলা ও দ্রুত কমতে সহায়তা করবে।

গরুর ক্ষুরা রোগ পরবর্তী সমস্যাঃ

ক্ষুরা রোগ থেকে মুক্ত হলেও গরুর উৎপাদন কমে যায়, দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দক্ষ খামার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

ক্ষুরা রোগে হার্টের ব্যপক ক্ষতি করায় গরুর এমন অপমৃত্যু হয়ে থাকে। গরু,গাভী বা বাছুর কে ক্ষুরারোগ পরবর্তী হার্ট এটাক থেকে রক্ষা
করতে নিম্নের চিকিৎসা গ্রহণ করলে ক্ষুরারোগ পরবর্তী মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়

১. ক্ষুরারোগ চিকিৎসা করার শেষ দিকে পূর্ণ বয়স্ক গরু বা গাভীকে পরপর ৩ দিন ১৫-২০ মিলি হারে Ciprofloxacilin vet ইজেকশন প্রয়োগ করলে ক্ষুরারোগ সেরে যাওয়ার পর হার্ট এটাকে মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

২. খামারের অন্য কোন গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে অথবা পাশের বাড়ি বা গ্রামে কোন গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে ছোট গরু বা বাছুর কে সুস্থ অবস্থায় Suipher গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন Selidon vet ইঞ্জেকশন ২৫ সিসি পরিমাণ এক ভোজ করে রাখলে বায়ুর পরে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলেও মৃত্যু ঝুকি কমে যায়।